বাবা-মায়ের পরকীয়ার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে কি?

জিজ্ঞাসা–১৭২৩: আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ি (আস্তাগফিরুল্লাহ)। অবশেষে আমরা ফিরে আসি। বুঝতে পারি, আমরা বড় গোনাহ করে ফেলেছি! এখন আমরা বাচ্চা নিতে চাই। শায়েখের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমাদের যিনা করার কোন প্রভাব কি বাচ্চার উপর পড়বে? আমি চাচ্ছি না যে, আমাদের এই ভুলের জন্য আমার বাচ্চার উপর কোন চারিত্রিক প্রভাব পড়ুক! আমাকে হাদিস অনুসারে বা কিছু পরামর্শ দিলে খুব উপকার হতো। অনেক জায়গায় পড়েছি, মা-বাবার ৫০% চরিত্র নিয়ে একটা বাচ্চা হয়। আমি ভয়ে থাকি আমাদের বাচ্চাও যদি এইরকম চরিত্রের হয়! আল্লাহ না করুন, আমার মত গোনাহ আমার বাচ্চা করুক; আমি চাই না! জাযাকাল্লাহ খাইরান।–ইচ্ছাকৃতভাবে নাম প্রকাশ করা হয় নি।

বাব:

এক. আলেমগণ বলেছেন, প্রত্যেক গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। যদি গুনাহটি বান্দার মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে হয়ে থাকে; কোন মানুষের হক্বের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে সে তাওবার জন্য শর্ত তিনটি: ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাহতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তাওবা শুদ্ধ হবে না।
আর যদি গুনাহটি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সে তাওবার জন্য শর্ত চারটি: উল্লেখিত তিনটি এবং হক্বদারের হক্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনী ভাই, আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত যে, তিনি তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। সুতরাং যদি আপনার ক্ষেত্রে এ শর্তগুলো পূর্ণ হয় তাহলে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় আপনার তাওবা কবুল হওয়ার উপযোগী। এরপরে তাওবা কবুল হয় নি কিংবা এর প্রভাব সন্তানের উপর পড়বে কিনা; এমন ওয়াসওয়াসা বা খুতখুত রাখা উচিত হবে না। কেননা এটি শয়তানের পক্ষ থেকে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল যেভাবে উল্লেখ করেছেন যে, একনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত তওবাকারীর তাওবা কবুল হয়— এ ধরণের খুতখুত এর বিপরীত। আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيماً حَكِيماً

নিশ্চয় তাওবা কবূল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবা করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা ১৭)
হাদিস শরিফে এসেছে, মা’ইয ইবনু মালিক রাযি. রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন,

وَيْحَكَ، ارْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ وَتُبْ إلَيْهِ

দুর্ভাগা! ফিরে চলে যাও এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবা কর। (সহিহ মুসলিম ১৬৯৫)

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,

وَفِي هَذَا الْحَدِيث دَلِيل عَلَى سُقُوط إِثْم الْمَعَاصِي الْكَبَائِر بِالتَّوْبَةِ , وَهُوَ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ

তাওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহয় লিপ্ত ব্যক্তির গুনাহ অকৃতকার্য হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত রয়েছে। (শরহু মুসলিম ১১/১৯৯)

দুই. আপনাদের উভয়ের প্রতি আমাদের পরামর্শ হল, সত্যিকারের তাওবা করার পর অতীত নিয়ে একে অপরকে তিরস্কার করবেন না। বরং বেশি বেশি নেক আমল করুন, নামাজ পড়ুন, ইস্তেগফার করুন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন। পরিবারকে অধিক সময় দিন। অনাগত সন্তান প্রতিপালনের উপর গুরুত্ব দিন। এসব কাজ করার ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের প্রত্যাশা করুন।
এরপরেও এ নিয়ে আপনার মাঝে কোনো পেরেশানি আসলে সঙ্গে সঙ্গে যে মহান সত্তা আপনাকে তাওবা করার তাওফিক দিয়েছেন, বেশি বেশি তাঁর শোকর আদায় করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিন। দেখবেন, এভাবে আপনার চিন্তার মোড় ঘুরে যাবে এবং পেরেশানি প্রশান্তিতে রূপ নিবে। কেননা, আল্লাহ বলেছেন,

لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ

যদি শোকর কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব। (সূরা ইব্রাহিম ০৭)

তিন. প্রিয় দীনী ভাই, যদি একটি শান্তিময় পরিবার ও আদর্শ সন্তান কামনা করেন তাহলে আমাদের উপরোক্ত পরামর্শগুলো উভয়েই অবশ্যই মেনে চলবেন। আর এ পরামর্শগুলো মেনে চলা আপনাদের জন্য একেবারে সহজ হয়ে যাবে যদি আজ থেকে দু’টি কাজ শুরু করতে পারেন।
১. বাসায় তালিমের ব্যবস্থা: আপনারা উভয়ে অথবা পরিবারের সকলে একসাথে বসে কেউ একজন কোন একটি বই থেকে সকলের উদ্দেশ্যে পড়বেন। বাকিরা মনোযোগসহ শুনবেন। প্রথম স্তরে নিমোক্ত কিতাবগুলো পড়তে পারেন–
~রিয়াযুয সালেহীন, ইমাম নববী রহ. ~হায়াতুসসাহাবাহ, ইউসুফ কান্ধলভী রহ.~ হায়াতুল মুসলিমীন, হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ.।
২. প্রিয় ভাই, এটি বিশেষ করে আপনার জন্য–আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে।
নিশ্চয় আল্লাহ তাওফীকদাতা।

والله اعلم بالصواب