জিজ্ঞাসা–৭৯: হুজুরের নিকট আমার জিজ্ঞাসার বিষয় হলো। আমার বাবা মারা গিয়েছেন দশ বছর আগে আর তিনি নামায পাঁচ ওয়াক্তই পড়তেন,তবে ঘরে। আর আব্বা- আম্মা দুইজনই আটরশির মুরিদ ছিলো। আব্বা মারা যাওয়ার পর আম্মাকে আমি সেখানে যেতে দেয় নি। তবে আমি মাদরাসায় থাকার কারণে আম্মা আমাকে না বলে সেখানে মাঝে মাঝে যায়। কিন্তুু আম্মাকে যেতে না বললে, বলে যে, পীর কি উল্টা পাল্টা করে নাকি? করে মুরিদরা। পীর কি খারাপ নাকি? এখন হযরতের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, আমি মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার আগেই আব্বা মারা গিয়েছেন। আর আব্বাকে হক্ব পথ দেখানোর মতো কেউ ছিলনা। এখন আব্বার জন্য আমার কি করণীয়? আর আম্মার এই প্রশ্নের জবাব কি? যেহেতু আমি আটরশি পীর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।__ইতি
আপনার হাতে ২০১৩ সালে মনিপুর সিদ্দিকীয়া মাদরাসায় পাগড়িপ্রাপ্ত।
আর আমি হেদায়েতের দোয়ার মুহতাজ। আল্লাহ যেনো ইলমি তারাক্কি দান করেন।। __আহমাদ ইবনে সুলতান।
জবাব: উল্লিখিত পীর যে ভণ্ড ছিল, এ ব্যাপারে সকল হক্কানী উলামা মাশায়িখ একমত। মূলতঃ লোকটি ছিলো শুধু মেট্রিক পাশ।(দেখুন ! আটরশির দরবার আটরশির কাফেলা, পৃষ্ঠা-১৩, প্রকাশকাল, জানুয়ারী ১৯৮৪। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত।) অথচ একজন হাক্কানী পীরের কমপক্ষে মিশকাত কিতাব অর্থসহ বুঝে পড়তে সক্ষম এতোটুকু ইলমী যোগ্যতা থাকা জরুরী। (বিস্তারিত দেখুন ! কাসদুস সাবীল, হযরত সদর সাহেব হুযূর রাহ. অনূদিত।)
আটরশির পীর যে ভণ্ড ছিল, তা তার দরবার থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের উদ্ধৃতি থেকে প্রমাণিত হয়। তম্মধ্য থেকে মাত্র কয়কটি উদ্ধৃতি পেশ করা হলো।
উদ্ধৃতি-১. আটরশির পীর বলেন, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খৃষ্টানগণ নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করতে পারে এবং তাহলেই কেবল বিশ্বে শান্তি আসবে। (আটরশির দরবার আটরশির কাফেলা : ৮৯ পৃষ্ঠা )
উদ্ধৃতি-২. উক্ত বইতে রয়েছে, উরস অনুষ্ঠানে সমগ্র বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ লোক যোগদান করেন। তাদের মধ্যে পীর সাহেবের মুরীদ ছাড়াও ভক্ত মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোক অন্তর্ভূক্ত ছিলো। (আটরশির দরবার আটরশির কাফেলা ৮৯ পৃষ্ঠা )
উদ্ধৃতি-৩. উক্ত বইতে রয়েছে, পীর সাহেবের প্রায় ৪০ হাজার অমুসলিম জাকেরানের জন্যে তৈরী হয়েছে আলাদা আরো একটি প্যান্ডেল।(আটরশির দরবার আটরশির কাফেলা : ৬২ )
উদ্ধৃতি -৪. উক্ত বইতে রয়েছে, আটরশির পীর বাবার কাছে ধনী, উচ্চ-নীচ, হিন্দু-মুসলমানের ভেদাভেদ নেই। আটরশি এখন সারা পৃথিবীর তীর্থক্ষেত্র। এখানে বিশ্ব ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আছে, তেমনই আছে হিন্দু শিষ্যদের জন্য আলাদ থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা। (আটরশির দরবার আটরশির কাফেলা : ৬০ )
উদ্ধৃতি- ৫. উক্ত বইতে আরো আছে, এক সাক্ষাৎকারে আটরশির পীর সাহেব উল্লেখ করেন, তিনি বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার পক্ষপাতি নন। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র করা হলে, বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবার আশংকা দেখা দেবে। (আটরশির পীর আটরশির কাফেলা : ৫৩)
উদ্ধৃতি- ৬. আমাদের ঈমানের একটি অংশ হল, ভাগ্যের ভালো-মন্দ আল্লাহর হাতে। অথচ এই ভণ্ড মুরিদকে বলে, বাবা, তোর ভালো-মন্দ উভয়টাই আমার হাতে রইল। তোর কোনো চিন্তা নেই। (তথ্যঃসাহসূফী ফরিদপুরী ছাহেবের নছিহত;৩য় মুদ্রণ,১লা মে,১৯৯৯;৩য় খন্ড,পৃষ্ঠা নং১১১)
উদ্ধৃতি- ৭. পীর সাহেব বলেছেন, মুর্শিদে কামেল তদীয় মুরীদ পৃথিবীর যে স্থানেই থাকুকনা কেন সেই স্থানেই কুওতে এলাহির দ্বারা হেফাযতে রাখিতে পারেন।শুধু মুরীদকেই নয় মুরীদের আত্মিয় স্বজন,মাল সামানা,বাড়ি ঘর যাহা কিছু খেয়াল করুক,তাহার সবকিছু আল্লাহ তালার কুওতে ককেল্লায় বন্দী করে দেন।(সাহসূফি ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত;খন্ড ৬,পৃঃ৩৬;২য় মূদ্রণ)
উল্লিখিত উদ্ধৃতি দ্বারা আটরশির পীরের ধর্মীয় অজ্ঞতা ও ভণ্ডামি সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ। (সূরা আল-ইমরান, ৮৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন, ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ দীন। (সূরা আল-ইমরান : ১৯) আরো ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাদের কারো থেকে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ মুক্তিপণ হিসেবে দিলেও তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব এবং তাদের থাকবে না কোনো সাহায্যকারী। (সূরা আল-ইমরান : ৯১)
উল্লেখিত আলোচনা থেকে নিশ্চয় প্রতীয়মান হয় যে, তথাকথিত উল্লেখিত পীর তার বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে শুধু নিজের ভণ্ডামিই প্রকাশ করেনি ; বরং তার ঈমানের ব্যাপারেও মানুষকে সন্দেহে ফেলে দিয়েছে।
প্রশ্নকারী ভাই, আশা করি তুমি বুঝেছ, এই ভণ্ডের কবলে পড়া মানে ধ্বংসের অতল খাদে নিপতিত হওয়া। তোমার বাবাকে আল্লাহ রহম করুন। তার ব্যাপারে তোমার প্রতি আমার একটাই উপদেশ–তুমি তার সন্তান হিসাবে আল্লাহর কাছে অব্যাহতভাবে ক্ষমা চাও। আর তোমার মাকে হিকমতের সাথে আস্তে আস্তে বুঝানোর চেষ্টা কর। হাক্কানী আলেম-ওলামা দ্বারা বুঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখো। অন্তর থেকে তার হিদায়াত কামনা করে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করতে থাকো। আশাহত হয়ে চেষ্টা বর্জন করবেনা। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবে। তথাপি যদি তিনি সেসব থেকে ফিরে না আসে, তাহলে তুমি দায়িত্বমূক্ত বলে বিবেচিত হবে এবং উক্ত চেষ্টার জন্য অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবে।(সূরা আল-ইমরান: ১৯, ৮৫, ৯১, সূরা আ‘রাফ : ৪০, ৪১, খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩৩৪)
পরিশেষে তোমার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তোমাকে বড় আলেম হিসাবে কবুল করুন। তোমার মাকে আল্লাহ হিদায়াত দান করুন। আমীন।
আরো পড়ুনঃ পীরের মুরিদ হওয়া ইসলামে আছে কি?
আরো পড়ুনঃ আত্মশুদ্ধির উপায় কী?