জিজ্ঞাসা–১৫৫: আসসালামু আলাইকুম। প্রশ্ন করার পূর্বে একটু ঘটনার বর্ণনা দেই। আমার বাসার পাশের মসজিদের ইমাম সাহেব বিদআতের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অনেক বিদআতকে জোর গলায় প্রচার করেন, ভিন্নমত পোষণকারীদের শয়তান, কাফির, বেঈমান বলে গালাগালি করেন। যে কারণে একটু দূরের মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করি। ওনার পিছনে কোনভাবেই নামায পড়তে ইচ্ছে হয় না, অন্তরে শান্তি পাই না। নামায শুদ্ধ হচ্ছে কি না এই নিয়ে দ্বিধায় থাকি। শুধু তাই না, উক্ত মসজিদ থেকে আযানের সময় তার জওয়াবও দিতে তৃপ্তি আসে না। ওনার পিছনে নামায আদায় করার বিষয়ে শরিয়তের আদেশ জানতে চাই। জাযাকাল্লাহ…–কাজী করিমুল্লাহ।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. বিদআতপন্থী ইমামের বিদআত হয়তো কুফরি বিদআত হবে অথবা সাধারণ কোন বিদআত হবে। যদি কুফরি-বিদআত হয় তাহলে ওই ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়েয হবে না। আর যদি ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় এমন কোন বিদআত না হয়; বরং তার বিদআতি-কার্যক্রম কেবল কবিরা গোনাহ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে,যেমন প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম, জানাযার পরে মুনাজাত ইত্যকার বিষয় সে করে তাহলে তার পিছনে নামায পড়া মাকরুহে তাহরিমী।(বাদায়েউস সানায়ে’-১/৩৮৭;ফাতওয়ায়ে শামী-২/২৯৯; ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৮৪; আল বাহরুর রায়েক-১/৬১০)
সুতরাং আপনার যদি বিদআতী ইমামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন ইমামের পিছনে নামায পড়ার সুযোগ থাকে তাহলে সেটাই করতে হবে। বিশেষতঃ আলেম শ্রেণী ও তালিবুল ইলমকে সেটা করতে হবে। কেননা তা করা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ তুল্য হবে।
দুই. কিন্তু এ ইমামের পিছনে নামায বর্জন করতে গিয়ে জামাত বর্জন করা জায়েয হবে না। আলেমগণ লিখেছেন, এলাকাতে যদি শুধু একজন ইমাম থাকেন তাহলে তার পিছনেই জামাতে নামাযগুলো আদায় করতে হবে। কেননা জামাতে নামায আদায় করা, একাকী নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম; এমনকি ইমাম ফাসেক কিংবা বিদআতী হলেও। কারণ সাহাবায়ে কেরাম জুমআর নামায, জামাতে নামায ফাসেক ইমামের পিছনেও আদায় করেছেন; তবুও তাঁরা জামাত বর্জন করেন নি। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হাজ্জাজের পিছনে নামায পড়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. ও অন্যান্য সাহাবী ওয়ালিদ ইবনে উকবার পিছনে নামায পড়েছেন। ওয়ালিদ বিন উকবা মদ্যপ ছিল। তবুও তাঁরা জামাত ত্যাগ করেন নি।
সার কথা হচ্ছে- যদি আপনি এমন কোন মসজিদে যেতে পারেন যেখানে বিদআত নেই, যে মসজিদের ইমাম বিদআতের দিকে আহ্বান করে না সেটা ভাল। যদি না যেতে পারেন অথবা কাছাকাছি অন্য কোন মসজিদ না থাকে তাহলে উল্লেখিত কারণে জামাত ত্যাগ করা জায়েয হবে না। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা ২/৩০৭-৩০৮)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আসসালামু আলাইকুম। প্রশ্ন করার পূর্বে একটু ঘটনার বর্ণনা দেই। আমার বাসার পাশের দুইটি মসজিদের ইমাম সাহেব বিদআতের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বিদআতকে জোর গলায় প্রচার করেন, ভিন্নমত পোষণকারীদের শয়তান, কাফির, বেঈমান, লা’ মাযহাবী বলে গালাগালি করেন। আবার একটা মসজিদ আছে যেটা আমার বাসা থেকে অনেক দূরে কিন্তু ঈমাম সাহেব কে আমার পছন্দ। ওনার পিছনে কোনভাবেই নামায পড়তে ইচ্ছে হয় না, অন্তরে শান্তি পাই না। নামায শুদ্ধ হচ্ছে কি না এই নিয়ে দ্বিধায় থাকি। তাই বাড়িতে একাকী সলাত আদায় করি। আমার সলাত হবে কি না বা ওনার পিছনে নামায আদায় করার বিষয়ে শরিয়তের আদেশ জানতে চাই। জাযাকাল্লাহ খায়ের।
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
বিদআতি ইমামের পিছনে নামায বর্জন করতে গিয়ে জামাত বর্জন করা জায়েয হবে না। আলেমগণ লিখেছেন, এলাকাতে যদি শুধু একজন ইমাম থাকেন তাহলে তার পিছনেই জামাতে নামাযগুলো আদায় করতে হবে। কেননা জামাতে নামায আদায় করা, একাকী নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম; এমনকি ইমাম ফাসেক কিংবা বিদআতী হলেও। কারণ সাহাবায়ে কেরাম জুমআর নামায, জামাতে নামায ফাসেক ইমামের পিছনেও আদায় করেছেন; তবুও তাঁরা জামাত বর্জন করেন নি। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হাজ্জাজের পিছনে নামায পড়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. ও অন্যান্য সাহাবী ওয়ালিদ ইবনে উকবার পিছনে নামায পড়েছেন। ওয়ালিদ বিন উকবা মদ্যপ ছিল। তবুও তাঁরা জামাত ত্যাগ করেন নি।
সার কথা হচ্ছে- যদি আপনি এমন কোন মসজিদে যেতে পারেন যেখানে বিদআত নেই, যে মসজিদের ইমাম বিদআতের দিকে আহ্বান করে না সেটা ভাল। যদি না যেতে পারেন অথবা কাছাকাছি অন্য কোন মসজিদ না থাকে তাহলে উল্লেখিত কারণে জামাত ত্যাগ করা জায়েয হবে না। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা ২/৩০৭-৩০৮)