ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ কী করবেন?

জিজ্ঞাসা–২২৭: আসসালামু আলাইকুম। আমার জানার বিষয় হলো, ব্যাংকে টাকা রাখলে যে মুনাফা দেয় সেই টাকা কি করণীয়? আর আমি যদি মুনাফার টাকাটা ব্যাংকওয়ালাদের কাছে রেখে না দিয়ে কোন দরিদ্র অথবা গরীব তালেবে ইলমকে দিয়ে দেই তাহলে কি আমি গুনাহগার হবো? আর তাদেরকে দেওয়া কি শরীয়তসম্মতভাবে বৈধ? হযরত, একটু দ্রুত উত্তর প্রদান করে উপকৃত করবেন। আল্লাহ আপনাকে শায়ানেশান জাযা দান করুন। আমীন। –ইবনে সাবীল

জবাব:وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. সুদী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা মানে সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়া। আর ‘সুদ গ্রহণ’ যেমনিভাবে হারাম, তেমনিভাবে সুদী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খোলাও সম্পূর্ণ হারাম। হাদিসে এসেছে-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه، وقال : هم سواء.

আল্লাহর রাসূল ﷺ সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক এবং তার উপর সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ করেছেন, আর বলেছেন, ওরা সকলেই সমান।
(মুসনাদে আহমাদ ৩৮০৯)

সুতরাং কর্তব্য হল, অনতিবিলম্বে ঐ সুদী হিসাব বন্ধ করে মূল টাকা উঠিয়ে নেয়া।

দুই. তবে যদি এজাতীয় হিসাব খোলার বিষয়টি কোনা কারণে বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে তাহলে সেক্ষেত্রে সুদের টাকাটা কী করা হবে–এব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের দু’টি মতামত পাওয়া যায়–

ক. ব্যাংক থেকে কেবল মূল টাকা উত্তোলন করবে। সুদ তুলবে না। ব্যাংকওয়ালাদের কাছেই রেখে দিবে। এ মতের যুক্তি হল, সুদ তুলে নিলে তো সুদ হস্তগত করা হবে। সুদ হস্তগত করা গুনাহ। সুতরাং গুনাহ করে সুদ দান করার তুলনায় গুনাহয় না জড়ানোই ভাল।

খ. সুদের অংশটা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিবদের মধ্যে অথবা জনকল্যাণমূলক কাজে দান করে দিবে। ব্যাংকে রেখে দিবে না। এ মতের যুক্তি হল, একাউণ্টে সুদ জমা হওয়ার অর্থই হল সুদ হস্তগত হওয়া। কারণ ঐ টাকা ব্যাংকের মালিকানা থেকে বের হয়ে গেছে। একাউণ্ট হোল্ডার যা খুশি তা করতে পারে। বাস্তবে হাতে হস্তগত করা আর একাউণ্টে জমা হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয় ক্ষেত্রেই মালিকানা স্থানান্তর হয়ে যায়। হস্তগত যেহেতু প্রমাণিত হল, এখন মাসআলা হল, মূল মালিককে তা ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু এখানে মূল মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ, মালিক তো অগণিত লোনগ্রহীতা।

অতএব এটি হারানো বস্তু (মালে লুকতা) এর পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উক্ত টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবকে দান করে দিতে হবে।। কারণ রেখে দিলে এক সময় তা সেন্ট্রাল ব্যাংকে জমা হবে। এরপর এ টাকা কোথায় ব্যয় হবে তা অনিশ্চিত। হতে পারে খোদ ব্যাংকই তা খেয়ে ফেলবে।
অগ্রগণ্য মতামত: শেষোক্ত মতটিই অগ্রগণ্য। এটিই অধিকাংশ ফকীহের মতামত।  (সূরা বাকারা ২৭৫ তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫, ২৩৭ বযলুল মাজহূদ ১/৩৭ মাআরিফুস সুনান ১/৩৪ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/২৬৯, কিফায়াতুল মুফতী-৭/১০৫)

বাকি রইল, মাদরাসার তালিবুল ইলমকে দান করা যাবে কিনা? এর জবাব হল, যদি তিনি গরিব ও হাজতমন্দ হন তাহলে তাকে দেওয়া যাবে। তবে তালিবুল ইলম আল্লাহর দরবারে অনেক সম্মানিত, তাই সুদের মত ঘৃণিত মালের মাধ্যমে তার সহযোগিতার চিন্তা না করে হালাল মালের মাধ্যমে তার সহযোগিতা করা উচিত।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − two =