যদি বাবা নিজের মেয়ের সঙ্গে বিকৃত আচরণ দেখায়…

জিজ্ঞাসা–১০৩০: আমি একটা ভার্সিটিতে পড়ি। আমার বাবা প্রতিরাতে বোনদের রোমে গিয়ে ওদের শরীর স্পর্শ করত। মা বাড়িতে না থাকলে বা ছোট ভাইকে নিয়ে স্কুলে গেলে, বাবা বোনদের ডেকে এনে সব কাপড় খুলে ফেলত আর পুরো শরীরে স্পর্শ করত। এসব আমাকে বোনরা এসে বললে, আমি ৪ বছর সবর করি এবং মন থেকে ঘৃণা করতাম। মাত্রা বেড়ে গেলে, আমি রাগের মেজাজে থাকতে না পেরে, বাবার সাথে খারাপ আচরণ করি এবং সম্পর্ক চিহ্ন করে ফেলি কিন্তু একই বাড়িতে থাকি। এখন আমার করণীয় কি? আমি আল্লাহকে ভয় করি। আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবে? আর আমি মা বাবার সাথে বেয়াদবি সম্পর্কে আল্লাহর কোরআন এবং রাসুলের হাদিস জানি। শায়েখ, আমার বাবা হয়তো কষ্ট পেয়ে আমাকে বদদোয়া দিতে পারেন। আমার সাথে আর কোনোদিনের জন্য কথাও না বলতে পারেন। আমি রাগের মাথায় তুই তুকারি করে ফেলছি এবং আমার মা আমাকে সমর্থন করছেন এবং ওনার সাথে এক বিছানায় থাকেন না। আমি কি গুনাহগার হব? আর এখন আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কি করব? আমি মর্মাহত এবং ব্যবহারের জন্য লজ্জিত।–ইচ্ছাকৃতভাবে নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয় নি।

জবাব:

এক. প্রিয় ভাই, নিঃসন্দেহে কোনো সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন বাবা এমনটি মোটেও করতে পারে না। আমাদের ধারণা, হয়ত তিনি নিজের মেয়েদের সঙ্গে পিতৃসু্লভ মমতার কোনো আচরণ দেখিয়েছেন, যা তাদের কাছে অসংলগ্ন ও দৃষ্টিকটু লেগেছে এবং এটাকেই তারা নিজেদের বাবার বিকৃত যৌনাচার হিসেবে ভেবে নিয়েছে। অথচ যদি বাবা নিজের মেয়েকে আদর করে জড়িয়ে ধরেন কিংবা তাকে চুমো দেন তাহলে এটা তো তাঁর নিজের মেয়ের প্রতি পিতৃস্নেহের বহিঃপ্রকাশ। সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে, বারা রাযি. আবু বকর রাযি.-এর সঙ্গে হিজরতের পর তাঁর ঘরে গিয়েছিলেন। ওই সময় আবু বকর রাযি.-এর মেয়ে আয়েশা রাযি.-এর জ্বর ছিল বিধায় তিনি শোয়া অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি নিজের মেয়ে আয়েশা রাযি.-এর গালে চুমো দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মেয়ে! কেমন আছ? (বুখারি ৩৭০৪)

ইমাম আহমাদ রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পুরুষ তার মাহরাম-নারীকে চুমো দিতে পারবে কি? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, إذا قدم من سفر ولم يخَف على نفسه সফর থেকে আসলে এবং মনে কুচিন্তা না থাকলে পারবে। ইবনু মুফলিহ রহ. বলেন, তবে ঠোঁটে চুমো দিবে না; মাথায় কিংবা কপালে চুমো দিবে। (আলআদাবুশ শারইয়্যাহ ২/২৫৬)

দুই. কিন্তু কোনো বিকারগ্রস্থ বাবা যদি নিজের মেয়ের প্রতি কুদৃষ্টি দেয় এবং তাকে যৌনমানসে স্পর্শ করে তাহলে যেখানে পরনারীকে স্পর্শ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لَأَنْ يُطْعَنَ فِي رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ

নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়। (তাবারানী, ছহীহুল জামে’ ৪৯২১)

সেখানে উক্ত বিকৃত মস্তিস্কসম্পন্ন বাবা যে কতটা হীন ও বীভৎস চরিত্রের অধিকারী তা প্রকাশের ভাষা আমাদের কাছে নেই। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই, এধরণের জঘন্য চরিত্রের কোনো বাবা যদি নিজের মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচারের মত কাণ্ড ঘটায় তাহলে কোনো কোনো আলেম বলেছেন, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। কেননা, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ وَقَعَ عَلَى ذَاتِ مَحْرَمٍ فَاقْتُلُوهُ যে ব্যক্তি মাহরাম-নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করে তোমরা তাকে হত্যা কর। (ইবনু মাজাহ ২৫৬৪)

তিন. এহেন কাণ্ড সত্ত্বেও বাবা যেমনই হোক, তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। কেননা যেমনিভাবে বাবা-মায়ের অনৈতিক ও অবৈধ কাজ সমর্থন করা নিষেধ করা হয়েছে, অনুরূপভাবে তাঁদের সঙ্গে সর্বাবস্থায়-এমনকি তাঁরা মুশরিক হলেও-সদাচারণের নির্দেশও রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

যদি তাঁরা (পিতামাতা) তোমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য যা (শিরক) তোমার বোধগম্য নয়, তাহলে তুমি তাঁদের কথা অমান্য করো, (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না) আর পার্থিব জীবনে উৎকৃষ্ট পন্থায় তাঁদের সাথে সৎ সম্পর্ক বজায় রেখো। আর তুমি তাঁদের পথ অনুসরণ করো যারা (আমি এক) আমার প্রতি অবিচলভাবে আকৃষ্ট রয়েছে। (সূরা লুকমান ১৫)

সুতরাং প্রিয় ভাই, নিজের বাবার সঙ্গে আপনার তুই-তোকারি আচরণ যে অন্যায় হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আপনার দায়িত্ব ছিল গোস্বাকে কাবু রাখা এবং হেকমত ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বাবাকে সৎ ও সুস্থ পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। যাই হোক, এখন আপনার করণীয় হল, বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়া। না চাইলে আপনি গুনাহগার হবেন। আর এটা বান্দার হকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়। বান্দার হকের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, শুধু তাওবা দ্বারা বান্দার কোন হক মাফ হবে না, যতক্ষণ না তা আদায় করা হবে কিংবা হকদার নিজে তা মাফ করে দিবে।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 5 =