জিজ্ঞাসা–১৪৫০: আসসালামু আলাইকুম। হুজুর, আমি অনেক বড় একটা গুনাহতে লিপ্ত হয়েছি। আমি সমকামীতায় লিপ্ত হয়েছি ২/৩ বার এবং এ থেকে তওবা করে ফিরে আসতে চাই। কিন্তু তওবা করার পর আবারও বারবার ওইসব চিন্তা মনে আসে এবং নেটে বিভিন্ন সাইটে এসব সমকামীতার ভিডিও দেখি, এই নেশা ছাড়তেই পারছি না। আমার এই গুনাহ কি ক্ষমা হবে না? হুজুর, আপনার মতামত চাই। আমি খুব বিষন্নতায় ভুগছি। এই রমজানের পবিত্র মাসেও আমার মনে ওইসব চিন্তা আসে।–নাম প্রকাশ করা সমীচীন মনে হয় নি।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মূলত সমকাম এমন অপরাধ, যার ভয়াবহতা কুফরির পরেই। হত্যার চাইতেও গুরুতর এটি। লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ই সর্বপ্রথম এ কাজে লিপ্ত হয়। এর কারণে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এমন শাস্তি দিয়েছিলেন, যে শাস্তি ইতিপূর্বে আর কাউকে দেয়া হয় নি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের ওপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦٓ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدٖ مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ . إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةٗ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٞ مُّسۡرِفُونَ
আর আমরা লূত আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিঃপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করে নি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা আল-আ‘রাফ ৮০-৮১)
হাদিস শরিফে এসেছে,
১. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন,
لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ
আল্লাহ তাআলা সমকামীকে লা‘নত করেন। আল্লাহ তাআলা সমকামীকে লানত করেন। আল্লাহ তা‘আলা সমকামীকে লানত করেন। (মুসনাদে আহমদ ২৯১৫
২. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন,
مَنْ وَجَدْتُمُوْهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ فَاقْتُلُوْا الْفَاعِلَ وَالْـمَفْعُوْلَ بِهِ
কাউকে সমকাম করতে দেখলে তোমরা উভয় সমকামীকেই হত্যা করবে। (আবু দাউদ ৪৪৬২ তিরমিযী ১৪৫৬)
দুই. তবে সুসংবাদের বিষয় এই যে, আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত যে, তিনি তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيماً حَكِيماً
নিশ্চয় তাওবা কবূল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবা করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা ১৭)
হাদিস শরিফে এসেছে, মা’ইয ইবনু মালিক রাযি. রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন,
وَيْحَكَ، ارْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ وَتُبْ إلَيْهِ
দুর্ভাগা! ফিরে চলে যাও এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবা কর। (সহিহ মুসলিম ১৬৯৫)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,
وَفِي هَذَا الْحَدِيث دَلِيل عَلَى سُقُوط إِثْم الْمَعَاصِي الْكَبَائِر بِالتَّوْبَةِ , وَهُوَ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ
তাওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহয় লিপ্ত ব্যক্তির গুনাহ অকৃতকার্য হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত রয়েছে। (শরহু মুসলিম ১১/১৯৯)
সুতরাং আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হোন এবং তাওবা করেছেন; এটা বুঝানোর জন্য অধিকহারে ইস্তেফার করুন। ভবিষ্যতে আর এপাপকর্মে লিপ্ত হবেন না বলে দৃঢ় সংকল্প করুন। এই কাজে পুনরায় জড়িয়ে পড়া থেকে পরিপূর্ণ সতর্ক থাকুন। নেক কাজের প্রতি মনোযোগী হোন এবং তাওবা করার সময় আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা রাখুন। মনে রাখবেন, আমাদের গুনাহর চাইতে তাঁর রহমতের সংখ্যা আরো বেশি। আমরা যে পরিমাণে গুনাহ করতে পারি, তিনি এর চাইতে বেশি মাফ করতে পারেন।
তিন. আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)
চার. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’
এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।
পাঁচ. অবশেষে বলতে চাই, নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে-বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (বুখারী ৫০৬৬)
আল্লাহ তাআলা তাওফিকদাতা।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী