যে মেয়ে প্রেমিকের সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে; তার প্রতি উপদেশ

জিজ্ঞাসা–১৫৯০: আমি একটা ছেলের সাথে রিলেশনে ছিলাম। তখন সে আমার শরীরে স্পর্শ করে আমি তাকে বাধা দেই নি। এখন সম্পর্ক নেই। আর আমি আমার ভুল এবং পাপ বুঝতে পেরেছি এবং সর্বদা আল্লাহর কাছে মাফ চাই , তওবা করি। আমি কীভাবে বুঝবো আল্লাহ আমায় মাফ করেছেন কিনা? আর তাছাড়া আমি ছেলেটাকে ভুলতেও পারছি না মানসিক অশান্তিতে থাকি। এতে আমার করণীয় কী?–ইচ্ছাকৃতভাবে নাম প্রকাশ করা হয় নি।

জবাব:

এক. প্রিয় দীনি বোন, যেহেতু তাওবা করার পর আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, সুতরাং আপনার জন্য কর্তব্য হল, আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ না হওয়া। দেখুন, আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন,

قُلْ يَاعِبَادِي الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ।(সূরা যুমার ৫৩)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ব্যভিচারীর পরকালীন শাস্তির ওয়াদার কথা উল্লেখের পর বলেন,

إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًارَّحِيمًا
তবে যে তাওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আল ফুরকান ৭০)

দুই. আলেমগণ বলেছেন, এজাতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত রয়েছে ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাহতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তাওবা শুদ্ধ হবে না।

সুতরাং তাওবা করেছেন; এটা বুঝানোর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হোন, অধিকহারে ইস্তেফার করুন এবং ভবিষ্যতে আর এজাতীয় পাপকর্মে লিপ্ত হবেন না বলে দৃঢ় সংকল্প করুন। এই কাজে পুনরায় জড়িয়ে পড়া থেকে পরিপূর্ণ সতর্ক থাকুন। নেক কাজের প্রতি মনোযোগী হোন এবং তাওবা করার সময় আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা রাখুন।

তিন. প্রিয় বোন, যখনই আপনার মন-মানসে ছেলেটির চিন্তা আসবে, তখনই যে মহান সত্তা আপনাকে তাওবা করার তাওফিক দিয়েছেন, বেশি বেশি তাঁর শোকর আদায় করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিন। দেখবেন, এভাবে আপনার চিন্তার মোড় ঘুরে যাবে এবং পেরেশানি প্রশান্তিতে রূপ নিবে। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ ‘যদি শোকর কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব।’ (সূরা ইব্রাহিম ০৭)

চার. অবসর সময় কাটাবেন না। যখনই নির্জনে থাকবেন, অবসর থাকবেন তখনই নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত করে নিবেন। কাজটি দুনিয়ার বৈধ কাজ হলেও অসুবিধা নেই। আর যদি কাজটি হয় ভাল বই পড়া, জিকির-মোরাকাবা করা, তেলাওয়াত করা তাহলে তো সবচে’ ভাল।  ডা. আব্দুল  হাই আরেফী রহ. বলতেন, ‘কাজের ভেতরে কাজ ঢুকিয়ে দাও। অবসর আছো তো কোনো কাজের প্রোগ্রাম করে নাও। হাতে একটি কাজ আছে তো আরেকটি কাজের প্রোগ্রাম বানিয়ে নাও।’

দেখুন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ

‘দুটো নিয়ামত এমন যে দুটোর বিষয়ে বহু লোক ধোঁকায় নিপতিত- স্বাস্থ্য এবং অবসর।’ (তিরমিযী ২৩০৭)

পাঁচ. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × five =