জিজ্ঞাসা–১৫৩: কিছু দিন আগে আমি ইবনুল কায়্যিমের ‘আর রুহ’ বইটির বাংলা অনুবাদ পড়ছিলাম। ওখানে ‘রুহ কি নশ্বর নাকি অবিনশ্বর’ এই পরিচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ” রুহ এর ধ্বংস হওয়া ধ্রুব সত্য”। জানিনা এই লাইন দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এই লাইন এর মানে কি দাঁড়ায় না যে, রুহ এক সময় বিলীন হয়ে যাবে? মানুষ কি কখনো জান্নাত অথবা জাহান্নাম থেকে বিলীন হয়ে যাবে?—Sharmin Hasan
জবাব: রুহ বা আত্মার মৃত্যু হয় কিনা–মূলতঃ এ বিষয়ে আলেমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। কতক আলেম বলেন, রুহও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করে। কেননা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الجَلَالِ وَالإِكْرَامِ “ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভবপালনকর্তার সত্তা ছাড়া।” (সূরা আর রাহমান ২৬,২৭)
অন্যত্র তিনি বলেছেন “كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُআল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে।” (সূরা আল কাসাস ৮৮)
আবার কতক আলেম বলেন, আল্লাহ তাআলা রুহকে সৃষ্টি করেছেন ধ্বংসের জন্য নয়; বরং সৃষ্টি করেছেন স্থায়িত্বের জন্য। যেমন জান্নাত জাহান্নাম আরশ কুরসি লৌহ কলম সৃষ্টি করেছেন স্থায়িত্বের জন্য। সুতরাং রুহের মৃত্যু হয় না। হাদিস শরীফে এসেছে, কা’ব ইবনু মালিক রাযি. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
إِنَّمَا نَسَمَةُ الْمُؤْمِنِ طَائِرٌ فِي شَجَرِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى جَسَدِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
মু’মিনদের রুহ জান্নাতের গাছের পাখির রূপ ধারণ করে থাকবে, কিয়ামতের দিন তাদের রুহ শরীরে পুনঃস্থাপন করা পর্যন্ত। (ইবন মাজাহ ৪২৭১)
উক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায়, রুহ মরে না; বরং শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পর রুহ নি‘আমত বা ‘আযাব ভোগের স্থানে অবশিষ্ট থাকে।
প্রকৃত বিষয় হল, রুহ বা আত্মার মৃত্যু হলো শরীর থেকে আলাদা হওয়া ও বের হয়ে যাওয়া। এ হিসেবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, রুহ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। আর যদি বলা হয় যে, রুহ মরে যায় বলতে তা বিলীন হয়ে যায়, একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়, নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে বলা হবে, এ দৃষ্টিকোণে রুহ মারা যায় না; বরং তা শরীর থেকে বের হওয়ার পরে নি‘আমত বা ‘আযাব ভোগের স্থানে অবশিষ্ট থাকে।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী