শুধু ঈমানের উপর কি জান্নাতের সুসংবাদ; যদিও ব্যক্তি কবিরা গুনাহ করে?

জিজ্ঞাসা–৫৫৩: বুখারী হাদীস ৬২৬৭,২৮৫৬ এবং মুসলিম হাদীস ৩০। মুয়ায বিন জাবাল থেকে বর্ণিত : কেউ যদি আল্লাহর হক যেমন সকল প্রকার শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারে তাহলে আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না । এর মানে কি শিরক থেকে বাঁচার চেষ্টা করার কারণে আল্লাহ সকল কবীরা গুনাহ মাফ করে দিয়ে এবং আমল যদি না থাকে তবুও মাফ করে দিবেন মানে সরাসরি জান্নাত দিবেন?–Abdul Ali Roni

জবাব:

এক. জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেননা, জান্নাতের সুসংবাদ ঈমান ও নেক আমল উভয়ের সমষ্টির ওপর; শুধু ঈমানের ওপর নয়। এ মর্মে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَبَشِّرِ الَّذِين آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ

আর হে নবী, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, আপনি তাদেরকে এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। (সূরা বাকারা ২৫)

অন্যত্র তিনি বলেন,

وَنُودُواْ أَن تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

আওয়াজ আসবে, এটি জান্নাত। তোমরা এর উত্তরাধিকারী হলে তোমাদের আমলের প্রতিদানে। (সূরা আ’রাফ ৪৩)

তিনি আরো বলেন,

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي ظِلَالٍ وَعُيُونٍ * وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُونَ * كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে ছায়ায় এবং প্রস্রবণসমূহে এবং তাদের বাঞ্ছিত ফল-মূলের মধ্যে এবং বলা হবে, তোমরা যা করতে তার বিনিময়ে তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। (সূরা মুরসালাত ৪১,৪৩)

দুই. তবে ব্যক্তি যদি ঈমান আনার পর আমল না করে; বরং গুনাহর ভেতরে ডুবে থাকে তাহলে সে তাওবা করলে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন আর তিনি ইচ্ছা করলে তাকে অপরাধ অনুপাতে শাস্তিও দিতে পারেন। হ্যাঁ, যদি সে শাস্তির উপযুক্ত হয় এবং জাহান্নামে যায় তাহলে সে অমুসলিমদের মত চিরকালের জন্য জাহান্নামে পড়ে থাকবে না। যেমন এ মর্মে হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

يَخْرُجُ مِنْ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِنْ الْخَيْرِ مَا يَزِنُ شَعِيرَةً ، ثُمَّ يَخْرُجُ مِنْ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِنْ الْخَيْرِ مَا يَزِنُ بُرَّةً ، ثُمَّ يَخْرُجُ مِنْ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مَا يَزِنُ مِنْ الْخَيْرِ ذَرَّةً

ঐ ব্যাক্তিকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনা হবে, যে বলেছে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে একটি যবের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে সামান্য একটি গমের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই আর তার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। (বুখারী ৬৮৬১ মুসলিম ২৮৫)

এজন্য মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন,

ولا نقول: إن المؤمن لا تضره الذنوب، ولا نقول: إنه لا يدخل النار، ولا نقول: إنه يخلد فيها وإن كان فاسقا بعد أن يخرج من الدنيا مؤمنا

আমরা (আহলুসসুনাহ ওয়াল জামাআ’তের আলেমগণ) একথা বলি না যে, গুনাহ মুমিনের কোন ক্ষতি করবে না এবং এ কারণে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আমরা একথাও বলি না যে, গুনাহর কারণে মুমিন চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। (শরহুল ফিকহিল আকবার ৭২)

তিন. আর যেসব হাদিসে -যেমন প্রশ্নোক্ত হাদিসে- বলা হয়েছে, মুমিন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে না, সে জাহান্নামে যাবে না; এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মুমিনকে কাফেরের মত শাস্তি দেয়া হবে না এবং মুমিন ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে যাবে না।

لَا يَدْخُلُ النَّارَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ إِنَّمَا مَعْنَاهُ لَا يُخَلَّدُ فِي النَّارِ ، وَهَكَذَا رُوِيَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنْ النَّبِيِّ قَالَ يَخْرُجُ مِنْ النَّارِ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ ، وَقَدْ فَسَّرَ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ التَّابِعِينَ هَذِهِ الْآيَةَ (رَبَّنَا إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلْ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ ) فَقَالَ : مَنْ تُخَلِّدُ فِي النَّارِ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ

যার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে সে জাহান্নামে যাবে না; এর অর্থ হল, চিরকালের জন্য জাহান্নামে যাবে না। অনুরূপ বর্ণিত আছে, আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ থেকে যে, যার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে সেও জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। আর একাধিক তাবিঈ এই আয়াত (অর্থ) ‘হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আপনি যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছেন তাকে অপমানিত করেছেন’-এর তাফসির করেছেন যে, আপনি যাকে চিরকালের জন্য জাহান্নামে দিয়েছেন তাকে অপমানিত করেছেন। (তিরমিযী, কিতাবুল বির)

الله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen + 17 =