জিজ্ঞাসা–১৭২৪: ফরজ নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু, দুরুদ শরিফ, দোয়া মাসূরা্ পড়ার পর কতিপয় কিছু দোয়া আছে, যেমন দাজ্জাল এর ফিতনা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি আরও এ ধরনের দোয়া করা যাবে কি? সুন্নত ও নফল নামাজের ক্ষেত্রেও নিয়মটা বললে সুবিধা হতো, যে সিজদা এবং শেষ বৈঠকে কি কি দোয়া করা যাবে?–জুনাইদ ইফাত।
এক. নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফের পর দোয়া মাসুরা পড়তে হয়। এক্ষেত্রে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যেকোনো একটি মাসনূন দোয়া পড়লেই হয়। এমনকি একাধিক দোয়াও পড়া যায়। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে,
ثُمَّ يَتَخَيَّرُ مِنَ الْمَسْأَلَةِ مَا شَاءَ
অতঃপর (দরূদ পাঠের পর) যে দোয়া ইচ্ছা পড়বে। (সহীহ মুসলিম ৪০২)
তবে এক্ষেত্রে সেই দোয়াগুলো পড়া উত্তম হবে, যেগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ সরাসরি বলেছেন। আর সেগুলো নিম্নে পেশ করা হল–
১. আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নামাজে তাশাহহুদ পড়বে, তখন চারটি বিষয় থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। বলবে–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে। (সহীহ মুসলিম ৫৮৮)
২. অপর বর্ণনায় এসেছে, উরওয়া ইবনু যুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত যে, নবী ﷺ -এর সহধর্মিনী আয়িশা রাযি. তাঁকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বলে দোয়া করতেন–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে, দাজ্জালের ফিৎনা থেকে। আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি গুনাহ ও ঋণ থেকে। (সহীহ বুখারী ৮৩৩ সহীহ মুসলিম ৫৮৯)
৩. আর আমাদের মাঝে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ যে দোয়া তা আবু বকর রা.-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে শিখিয়েছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু বকর রাযি. রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে আবেদন করলেন, আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাযে পড়ব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ দোয়াটি বলবে–
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক যুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সহীহ বুখারী ৮৩৪ সহীহ মুসলিম ২৭০৫)
দুই. ফরজ নামাযে সিজদায় অন্য দোয়া না করা উত্তম ৷ নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহ পড়া যাবে। তবে নফল হোক কিংবা অন্য কোনো নামাযে অনারবী ভাষায় দুআ করা নিষিদ্ধ। (সুনানে আবু দাউদ ১/১২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২১; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর পৃ. ১/২২৯; মাহমুদিয়া ১২/৮৬)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী