জিজ্ঞাসা–৯২৪: সামুদ্রিক প্রাণী যেমন, কাকড়া, স্কুইড, ইত্যাদি খাওয়া কি জায়েজ বা হালাল? আর মাকরূহ হলে তা কোন প্রকারের মাকরূহ?–মাহাবুবা বিনতে আজিজুল।
জবাব: মাছ ছাড়া অন্য কোন জলজ প্রাণী খাওয়া জায়েয নাই। অক্টোপাস, স্কুইড (Squid), কাকড়া, শামুক, ঝিনুক যেহেতু মাছ নয়, তাই এগুলো খাওয়াও জায়েয নাই। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৪ আল বাহরুর রায়েক ৮/৪৮৫ হাশিয়ায়ে তাহতাবী ৪/৩৬০ ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/১১৮)
কেননা–
প্রথমত, এগুলো কোরআনে বর্ণিত ‘খাবায়েস’ (নোংরাবস্তু) এর অন্তর্ভুক্ত’! وَيُحَرِّمُ عَلَيهِمُ الخَبائِثَ ‘খাবায়েস নিষিদ্ধ‘। (আলআরাফ ১৫৭)। ‘খাবায়েস’ বলা হয়, كل ما يستخبثه الطبع অর্থাৎ, যা মানুষ স্বভাবত ঘৃণা করে। (দ্রঃ তাফসীরে কাবীর, অাযওয়াউল বায়ান, আললুবাব, আলহাবী সংশ্লিষ্ট আয়াত)। আর মাছ ছাড়া অন্যান্য জলজ প্রাণীকে মানুষ স্বভাবতই ঘৃণা করে। সুতরাং সেগুলোও নিষিদ্ধ।
দ্বীতিয়ত, এ ধরণের জলজ প্রাণী রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম খেয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অধিকন্তু হাদীসে এসেছে, انَّ طَبِيبًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ضِفْدَعٍ يَجْعَلُهَا فِي دَوَاءٍ فَنَهَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَتْلِهَا অর্থাৎ, আব্দুর রহমান বিন উসমান রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ জনৈক চিকিৎসককে ব্যাঙ মেরে ওষুধ বানাতে নিষেধ করেছিলেন। (আবু দাউদ ৩৮৭১)। অথচ ব্যাঙ জলজ প্রাণী!
তৃতীয়ত, আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
أحلت لنا ميتتان ودمان فأما الميتتان فالحوت والجراد وأما الدمان فالكبد والطحال
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য দু’ প্রকারের মৃত জীব ও দু’ ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দু’টি হলো মাছ ও টিড্ডি এবং দু’ প্রকারের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা। (ইবনে মাজাহ ৩৩১৫, আহমাদ ৫৬৯০, দারাকুতনী ৪৬৮৭, শারহুস সুন্নাহ ২৮০৩। সনদ সহিহ।)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
তাহলে কি চিংড়ি ও খাওয়া যাবে না? চিংড়ি ও তো জলজ প্রাণী।
এক্ষেত্রে মূলনীতি হল, জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী খাওয়া জায়েয নেই। কেননা জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছই একমাত্র উৎকৃষ্ট হালাল বস্তু, আর বাকিগুলো নিকৃষ্ট ও হীন বস্তু। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৩/৫১১)
চিংড়ি পুকুরের হোক বা সমুদ্রের তা মাছ কিনা–এ নিয়ে ফকিহদের মাঝে ব্যাপক মতপার্থক্য আছে। তাই অনেকে এটিকে হালাল বলেন, আবার অনেকে এটিকে মাকরূহে তাহরীমি বলেন। আবার অনেকে এটাকে মাকরূহে তানযীহী তথা না খাওয়া উত্তম বলেছেন। (কিতাবুন নাওয়াযিল ১৪/৪১৩)
বস্তুত প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে চিংড়ি হলো আর্থোপোডা পর্বের অন্তর্ভূক্ত কিন্তু মাছ কর্ডাটা পর্বের অন্তর্ভূক্ত। চিংড়ির দেহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত ও সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিদ্যমান, যা কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায় না। এ কারণে তাদের মতে চিংড়িকে মাছ বলা হলেও মাছ নয়।
তবে চিংড়ি কোনো মাছ না হলেও যারা এটা খায় তারা একে কোনো পোকা হিসেবে খায় না; বরং মাছ হিসেবেই খায়, তাই ফকিহদের এক বিশাল অংশ একে মাছ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটা হারাম হতে পারে না; বরং এটি হালাল।
মুফতি আমিমুল ইহসান মুজাদ্দিদি রহ. লিখেছেন, মাছ হলো মানুষের মধ্যে যে জলজ প্রাণীকে মাছ বলে গণ্য করা হয়। এটি এমন এক জলজ প্রাণী, যার অসংখ্য প্রকারভেদ ও আকৃতি রয়েছে।’ (আত্তারিফাতুল ফিকহিয়্যা, পৃষ্ঠা ৩২৭)