জিজ্ঞাসা–১১০৭: আসসালামু-আলাইকুম। সুন্নতে মুআক্কাদা আমলের তালিকা দিলে উপকৃত হতাম।–MD.Toufikur Rahman
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
সুন্নাতে মুআক্কাদা ওই সুন্নত, যার ওপর রাসুলুল্লাহ ﷺ নিয়মিত এমনভাবে আমল করতেন যে তা ওজরবিহীন (বিশেষ অপারগতা) কখনো ছাড়তেন না। এ ধরণের ইবাদতের বিধান হলো—ওজরবিহীন নিয়মিত ছেড়ে দেওয়া গুনাহ, তবে প্রয়োজনে হঠাৎ ছাড়তে পারে। মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনে ওজরবিহীন ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা হবে, তবে ফাসিক বা কাফির বলা যাবে না।
বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন, জিজ্ঞাসা নং–৯৯৭।
সুন্নাতে মুআক্কাদা ইসলামি শরিয়তে সর্ব মোট কয়টি; বাস্তবতা হল, বহুবিধ কারণে তা তালিকা আকারে পেশ করা মুশকিল। তবুও যতদূর সম্ভব নিম্নে এর একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরা হল–
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আগে-পরে বার রাকাত সুন্নাত। হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ
যে ব্যক্তি দিবা-রাত্র বার রাকাত (সুন্নাতে মুআক্কাদা) আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে রাখেন। চার রাকাত জোহরের ফরয নামাযের পূর্বে এবং দু’রাকাত জোহরের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকাত মাগরিবের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকআত ইশার ফরয নামাজের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয নামাজের পূর্বে। (সুনানে নাসায়ী ১৭৯৫)
২. জুমআ’র আগের চার রাকআত সুন্নাত। হাদিস শরিফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.-এর বিশিষ্ট শাগরিদ আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রহ. বলেন,
كان عبد الله يأمر أن نُصَلِّي قَبْلَ الجُمْعة أربعا، وبعدها أربعا
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. আমাদেরকে জুমআ’র আগে চার রাকআত এবং জুমআ’র পরে চার রাকআত পড়ার আদেশ করতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/২৪৭)
নফল নামাযের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া যায়, আদেশ দেওয়া যায় না। আদেশ করার অর্থ, এই নামায অন্তত সুন্নাতে মুাক্কাদা। বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন, জিজ্ঞাসা নং–৭২।
৩. জুমআ’র আগে দুই খুতবা দেওয়া। ( আদ্দুররুল মুখতার : ২/১৪৮; হেদায়া : ১/১৪৮; ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া : ৩/৩৮৫) উমর রা.-সহ বিভিন্ন সাহাবা থেকে বর্ণিত আছে যে,
كانت الجمعة اربعا فجعلت ركعتين من أجل الخطبة
জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ ৫৩৩১)
৪. তারাবীর নামায। ইমাম নববী বলেন, صلاة التراويح سنة بإجماع العلماء আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর নামায পড়া সুন্নত। (আলমাজমূ ৪/৩১)
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, জিজ্ঞাসা নং–৩৩৬।
৫. পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ
রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো। (সুরা বাকারা ৪৩
৬. পুরুষের জমাতের সঙ্গে সূর্যগ্রহণের নামায। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, যুহাইলি, ২/১৪২২)
হাদিস শরিফে এসেছে, আবু বাকরাহ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে থাকাকালে সূর্য গ্রহণ শুরু হলো। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ উঠে দাঁড়ালেন এবং পরিহিত চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তাঁর সঙ্গে আমরাও প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের নিয়ে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করলেন এবং সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেলো। তিনি বললেন,
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لاَ يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَصَلُّوا، وَادْعُوا، حَتَّى يُكْشَفَ مَا بِكُمْ
কারো মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ দেখবে তখন এ অবস্থা কেটে যাওয়া পর্যন্ত নামায আদায় করবে এবং দোয়া করতে থাকবে। (বুখারী ৬৬৪)
৭. ছেলেদের খতনা করানো। হাদিস শরিফে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল ﷺ-এর কাছে এসে বলল, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। তখন রাসূল ﷺ বলেন,
أَلْقِ عَنْكَ شَعْرَ الْكُفْرِ وَاخْتَتِنْ.
তোমার থেকে কুফুরীর চুল কেটে ফেল এবং খতনা কর। (সুনানে আবু দাউদ ৩৬০)
৮. পুরুষদের জন্য রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ করা। আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ
নবী ﷺ ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকেই ইতিকাফ করতেন। (মুসলিম ২৬৭৪ বুখারী ২০৪১)
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, জিজ্ঞাসা নং–৩৪০।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী