জিজ্ঞাসা–১৫৭৮: السلام عليكم ورحمة الله وبركاته মুহতারাম, কি কি কারণে স্ত্রী স্বামীর কাছে তালাক চাইতে পারবে? দলীল প্রমাণসহ জানানোর অনুরোধ রইল।–Abdullah
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
এক. ইসলাম স্বামীর কাছে স্ত্রীর তালাক চাওয়াকে গোনাহের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। হাদিসে এসেছে, সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقًا فِي غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّة
কোনরূপ কষ্টের সম্মুখীন না হয়ে যে মহিলা তার স্বামীর নিকট তালাক চায়। তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম। ( আহমাদ ২২৪৪০ আবু দাউদ ২২২৬ তিরমিযী ১১৮৭ ইবনু মাজাহ ২০৫৫)
তবে যদি কোনো বাস্তবসম্মত কারণে উভয়ের পক্ষে একসাথে বসবাস করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
অতঃপর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, উভয়পক্ষ আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে না, তাহলে উভয়ের প্রতি কোন গুনাহ নেই যদি কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী নিজেকে মুক্ত করতে চায়। এগুলো আল্লাহর আইন, কাজেই তোমরা এগুলোকে লঙ্ঘন করো না, আর যারা আল্লাহর আইনসমূহ লঙ্ঘন করবে, তারাই জালিম। (সূরা বাকারা ২২৯)
দুই. যে সকল কারণে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে তাহল,
১. العيوب অর্থাৎ যদি স্বামীর মাঝে দৈহিক এমন ত্রুটি থাকে যার কারণে দাম্পত্যজীবনের স্বাভাবিকতা খুবই দুরহ হয়ে যায়। যেমন, পাগল হওয়া, যৌন অক্ষম হওয়া, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়া। এর দলিল হল, আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ
ভালভাবে রেখে দিবে কিংবা সদ্ব্যবহার সহকারে বিদায় দিবে। (সূরা বাকারা ২২৯)
বলা বাহুল্য, স্বামীর মাঝে উক্ত ত্রুটিগুলো থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে ভালভাবে রাখা সম্ভব নয়।
২. عدم الإنفاق অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর আবশ্যকীয় জরুরত তথা ভরণ-পোষণ দিতে অক্ষম হলে। কেননা, এটা স্ত্রীর মৌলিক অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ ۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ
সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা অনুসারে ব্যয় করবে। আর যার রিযক সীমিত করা হয়েছে, সে ব্যয় করবে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাত্থেকে। (সূরা তালাক ০৭)
৩. طول مدّة الغيبة অর্থাৎ, স্বামীর দীর্ঘ সফরের কারণে স্ত্রী যদি নিজের চারিত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় কিংবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়। আর এর সর্বনিম্ন সময়সীমা হল, ছয় মাস। হাদিস শরিফে এসেছে, ওমর রাযি. নিজ কন্যা হাফসা রাযি.-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে সে সময়ে মুজাহিদদের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস বাইরে থাকার ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করেছিলেন। (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১২৫৯৪)।
৪. الضرر অর্থাৎ, ইসলামি শরিয়ত নির্দেশিত কারণ ছাড়া স্বামী স্ত্রীকে কষ্ট দেয়া বা জুলুম করা। এটা শারীরিকভাবেও হতে এবং মানসিকভাবে হতে পারে। যেমন, স্ত্রীকে মারধর করা, গালাগালি করা, স্ত্রীকে তার পিতামাতার সাথে দেখা সাক্ষাতে বাঁধা প্রদান করা, বেপর্দা কিংবা হারাম কাজে স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাধ্য করা। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। (মুসনাদে আহমাদ ২৮৬২ ইবন মাজাহ ২৩৪১ সুনানে দারাকুতনী ৩০৭৯)
৫. نقص الدين অর্থাৎ, স্বামীর মাঝে দীনদারির প্রতি অবহেলা চরম পর্যায়ের হলে। যেমন, নামাজ না পড়া, মদ পান করা, পরকীয়া কিংবা চারিত্রিক অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হওয়া। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
তোমরা যে ছেলের দীনদারি থাকা ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (জামে’ তিরমিযী ১০৮৪)
বোঝা গেল, স্বামীর মাঝে দীনদারি থাকা আবশ্যক, যেমন স্ত্রীর মাঝে দীনদারি থাকা অপরিহার্য।
৬. الشقاق والنزاع অর্থাৎ, রুচির ভিন্নতা কিংবা অন্য যে কোনো কারণে বনিবনা না হলে, সংসারে অশান্তি অমিল হলে এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হলে। এক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, স্বামী কিংবা স্ত্রী কিংবা উভয়ই দীনদার; তবু সংসারে অশান্তি অমিল লেগেই থাকে। এর দলিল হল, ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, সাবেত ইবনে কাইস রাযি.-এর স্ত্রী রাসূল ﷺ -এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সাবেত ইবনে কাইসের দ্বীনদারী এবং চরিত্রের উপর আমার কোন অভিযোগ নেই; কিন্তু আমি মুসলিম হয়ে কুফরী করা (স্বামীর সঙ্গে অমিল) মোটেও পছন্দ করি না। রাসূল ﷺ বললেন, তুমি কি তাকে মোহর হিসেবে তোমাকে যে বাগান দিয়েছিল তা ফিরিয়ে দেবে? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূল ﷺ সাবেত রাযি.-কে বললেন, اقْبَلْ الْحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً বাগানটি ফেরত নিয়ে তাকে এক তালাক দিয়ে দাও। (বুখারী ৫২৭৩)