জিজ্ঞাসা–১৩৮৬: স্ত্রী যদি সহবাস করতে চায়। স্বামী যদি সাড়া না দেয় বা স্বামী যদি বলে, কাল করবো স্ত্রী অপেক্ষা করলো। কিন্তু স্বামী সাড়া দিল না। এই অবস্থায় স্ত্রীর রাগ করল স্বামীর উপর এবং খারাপ ব্যবহার করল স্বামীর সাথে। তাহলে স্ত্রী কি গুনাহগার হবে?–নাম জানাতে অনিচ্ছুক।
জবাব:
এক- স্বামী স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করাও সদাচারণের অন্তর্ভুক্ত। এটা স্ত্রী হিসেবে তার অধিকার। এই অধিকার পূরণ করা সক্ষম স্বামীর ওপর ওয়াজিব। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচারণ কর। (সূরা নিসা ১৯)
আল মাউসুয়া’তুল ফিকহিয়্যা (৩০/১২৭)-তে এসেছে,
من حقّ الزّوجة على زوجها أن يقوم بإعفافها ، وذلك بأن يطأها ، وقد ذهب جمهور الفقهاء – الحنفيّة والمالكيّة والحنابلة – إلى أنّه يجب على الزّوج أن يطأ زوجته
স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল, স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের মাধ্যমে তার পবিত্র জীবন যাপনের প্রতি যত্নশীল হবে। হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহর মতে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব।
সঙ্গম কত দিন পর হতে হবে–এব্যাপারে ফকিহগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন,
يجب على الرجل أن يطأ زوجته بالمعروف ، وهو من أوكد حقها عليه ، أعظم من إطعامها ، والوطء الواجب قيل : إنه واجب في كل أربعة أشهر مرة ، وقيل : بقدر حاجتها وقدرته ، كما يطعمها بقدر حاجتها وقدرته ، وهذا أصح القولين
‘স্ত্রীর সঙ্গে ভালোভাবে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া ওয়াজিব। এটা স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ অধিকার এবং ভরণপোষণের অন্যতম অংশ। কেউ কেউ বলেছেন, চার মাসে একবার ওয়াজিব। কারো কারো মতে এক্ষেত্রে ভরণপোষণের অন্যান্য বিষয়ের মত স্ত্রীর প্রয়োজন ও স্বামীর সক্ষমতাই মূল বিবেচ্য বিষয়। আর এটাই বিশুদ্ধ মত।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া ৩২/২৭১)
দুই- প্রিয় বোন, যদি আপনার স্বামী তার শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যার কারণে আপনার এই অধিকার আদায়ে অক্ষম হয়; সেক্ষেত্রে আপনার প্রতি আমাদের সুধারণা হল এই যে, একজন নেককার স্ত্রী হিসেবে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ না করে; বরং এই পরিস্থিতিতে আপনি তার সঙ্গ দিবেন। তাকে যেকোনোভাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন করবেন। দোয়া ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন।
আর যদি তার এই অনীহার কারণ হয়, আপনার প্রতি আগ্রহ অনুভব না করা। তাহলে তার জন্য সাজসজ্জা করে, তার সঙ্গে ভালবাসাপূর্ণ নিত্যনতুন রোমান্টিক আচরণ করে তাকে আপনার প্রতি আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করতে পারেন। হতে পারে, আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে আপনাকে সফল করবেন। যদি আল্লাহর রহমত সঙ্গী হয় তাহলে হতে পারে আপনি তাকে মানসিক শান্তি দিলে তিনি আপনাকে মানসিক শান্তি দিবেন, শারীরিক সুখও দিবেন।
হাদিসে এসেছে, একবার এক নারী সাহাবী রাসূলের কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী ﷺ বললেন,
فانظُري أينَ أنتِ منهُ ؟ فإنَّما هوَ جنَّتُكِ ونارُكِ
হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম। (মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৪১ হাদীস ১৯০০৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৭৬৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৪৭০৬)
আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন আপনাদের জীবনকে সুন্দর করে দেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমতাবান।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী