জিজ্ঞাসা–১২২৬: আসসালামু আলাইকুম। আমার ২০১৭ সালে বিয়ে হয়। স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় আমি কাজি অফিসে গিয়ে তালাক গ্রহণ করি তাকে না জানিয়ে। পরবর্তীতে সে তালাকের কাগজ পেলে রাগ হয়ে নিজে নিজে উচ্চারণ করে বলে যে, তুই আমাকে তালাক দিলি, ঠিক আছে আমিও তোকে তালাক দিলাম–তালাক তালাক তালাক। এখন আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। আবার এক সাথে থাকতে চাই। আমার প্রশ্ন হল, আমি যেহেতু তালাক গ্রহণ করেছিলাম তাই আমাদের এক তালাক হয়েছে। পরে আমার স্বামী যে বলল, তিন তালাক; তা কি গ্রহনযোগ্য হবে? কেননা সে বলেছিল যে, আমি তালাক দিয়েছি। কিন্তু মেয়েরা তালাক দিতে পারে না গ্রহণ করতে পারে। আমি খুব সমস্যায় আছি। প্লিজ, আমাদের কী করণীয়? জানাবেন।–Sadia Zaman
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. স্ত্রী শত বার তালাক দিলেও তা কার্যকর হয় না। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنِ اشْتَرَطَ شَرْطًا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَلَيْسَ لَهُ، وَإِنْ شَرَطَ مِائَةَ مَرَّةٍ، شَرْطُ اللَّهِ أَحَقُّ وَأَوْثَقُ
যে এমন কোন শর্ত আরোপ করবে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা তার জন্য প্রযোজ্য হবে না; যদিও সে শতবার শর্তারোপ করে। কেননা আল্লাহর দেওয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য। (বুখারী ২৩৯১)
তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়, তাহলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবে। এটাকে ‘তালাকে তাফবীয’ বলে। এটা স্ত্রীর নিজস্ব ক্ষমতা নয়; বরং এটা স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়া।
দুই. প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামী আপনার উদ্দেশ্যে ‘তালাক তালাক তালাক’ বলার মাধ্যমে আপনাকে তিন তালাক দিয়েছে। এক সাথে তিন তালাক দেয়া জঘন্য গুনাহ, তবে এর দ্বারা তিন তালাকই কার্যকর হয়। এর দলিল হল–
নাফে রহ. বলেন,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا سُئِلَ عَنِ الرَّجُلِ يُطَلِّقُ امْرَأَتَهُ وَهْىَ حَائِضٌ يَقُولُ أَمَّا أَنْتَ طَلَّقْتَهَا وَاحِدَةً أَوِ اثْنَتَيْنِ . إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أَمَرَهُ أَنْ يَرْجِعَهَا ثُمَّ يُمْهِلَهَا حَتَّى تَحِيضَ حَيْضَةً أُخْرَى ثُمَّ يُمْهِلَهَا حَتَّى تَطْهُرَ ثُمَّ يُطَلِّقَهَا قَبْلَ أَنْ يَمَسَّهَا وَأَمَّا أَنْتَ طَلَّقْتَهَا ثَلاَثًا فَقَدْ عَصَيْتَ رَبَّكَ فِيمَا أَمَرَكَ بِهِ مِنْ طَلاَقِ امْرَأَتِكَ . وَبَانَتْ مِنْكَ
যখন ইবনে ওমর রাযি. এর কাছে এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া (রুজু’ করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি বলেন, যদি তুমি তাকে এক কিংবা দুই তালাক দিয়ে থাক, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে হুকুম দিয়েছেন যে, সে তাকে রাজআত করে নিবে। তারপর আর একটি হায়েয (ঋতুমতী হওয়া) পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে, এরপর পবিত্রতা (তুহুর) পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে। অতঃপর স্পর্শ (সহবাস) করার আগেই তালাক দিবে (যদি ইচ্ছা কর)। আর যদি তুমি তাকে তিন তালাক দিয়ে থাক তবে তুমি তোমার প্রতিপালকের অবাধ্য হয়েছ- তোমার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে তিনি তোমাকে যে আদেশ প্রদান করেছেন সে ব্যাপারে (অর্থাৎ তোমার জঘন্য গুনাহ হয়েছে)। আর সে স্ত্রী (তিন তালাকই কার্যকর হওয়ার কারণে) তোমার সঙ্গ হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন (বাইন) হয়ে গিয়েছে। (সহিহ মুসলিম ৩৫২০)
দুই. তিন তালাক দেয়া যেহেতু একটি জঘন্য কাজ, তাই আল্লাহ তাআলা এর শাস্তি হিসেবে এই বিধান দিয়েছেন যে, তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পুনরায় একসাথে বসবাস করতে চাইলে স্ত্রীর ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্র তার বিয়ে হওয়া এবং সে স্বামীর সাথে তার মিলন হওয়া অপরিহার্য। এরপর কোনো কারণে সে তালাকপ্রাপ্তা হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে ইদ্দত পালনের পর এরা দু’জন পরস্পর সম্মত হলে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)
এ মর্মে হাদীস শরিফে এসেছে,
আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বরণিত, রাফায়ার স্ত্রী বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার স্বামী রাফায়া আমাকে এক সাথে তিন তালাক দিয়েছে? এরপর আমি আব্দুর রাহমানের সাথে বিবাহ করেছি। এখন রাফায়ার কাছে যেতে পারবো কিনা? নবীজী বললেন, আবদুর রহমান তোমার সাথে সহবাস করলে এরপর রাফায়ার নিকট যেতে পারবে। (সহীহ বুখারী ৫২৬১)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী