জিজ্ঞাসা–১২৯৪: আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। আমি একটা মেয়ের সাথে রিলিশন করতাম। তখন বুঝি নাই যে, এগুলো করা পাপের কাজ। এখন বুঝি। তাই আমি এই পাপ থেকে চিরদিনের জন্য ফিরে আসতে চাই। কিন্তু মেয়েটা শুধু আমাকে ফোন দিয়ে কান্না করে। আমি অনেক বুঝাই কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই বুঝতে চায় না। এখন আমি কী করবো? আর একটা কাজ করতে চাই সেটা হলো, আমি ওকে ব্লক করে দিতে চাই। ওর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে চাই না। এটা করলে ও অনেক কষ্ট পাবে। এই কষ্ট দেওয়ার জন্য কি আল্লাহ আমাকে ধরবে? দয়া করে হুজুর আমাকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। আমি এই বিষয়ে খুব চিন্তিত। একটু বিস্তারিত আলোচনা করলে খুব অপ্রকৃত হতাম।–Imran
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, নিঃসন্দেহে বিবাহ বহির্ভূত সব রিলেশন হারাম ও একপ্রকার ব্যভিচার বিধায় এ ধরণের রিলেশনের প্রতিটি ধাপেই রয়েছে পাপ ও ভয়ানক শাস্তি। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, জিহবার ব্যভিচার হল, [পরনারীর সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহীহ মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)
সুতরাং আপনার প্রধান কাজ তো হল আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা করা।
আর যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন। এক কথায়, মেয়েটির সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিন। যোগাযোগ বন্ধ করার কারণে মেয়েটি যদি মনোকষ্ট নেয় তাহলে আপনার কোনো গুনাহ তো হবেই না; বরং নিজে গুনাহ থেকে বাঁচার এবং মেয়েটিকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর সাওয়াব পাবেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা এ জাতীয় সীমালংঘনকারীর তাওবার আলামত হিসাবে বলেছেন,
وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا
আর যে (ব্যভিচার থেকে) তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আল ফুরকান ৭১)
দুই. কখনো এ নিয়ে আপনার মাঝে কোনো পেরেশানি আসলে সঙ্গে সঙ্গে যে মহান সত্তা আপনাকে তাওবা করার তাওফিক দিয়েছেন, বেশি বেশি তাঁর শোকর আদায় করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিন। দেখবেন, এভাবে আপনার চিন্তার মোড় ঘুরে যাবে এবং পেরেশানি প্রশান্তিতে রূপ নিবে। কেননা, আল্লাহ বলেছেন,
لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ
‘যদি শোকর কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব।’ (সূরা ইব্রাহিম ০৭)
তিন. আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)
চার. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’
এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।
পাঁচ. অবশেষে বলতে চাই, নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে-বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (বুখারী ৫০৬৬)
আল্লাহ তাআলা তাওফিকদাতা।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী