নারীকণ্ঠে তেলাওয়াত শোনা যাবে কি?

জিজ্ঞাসা–৭৪৯: একবার শুনেছিলাম মহিলাদের কোরান তেলাওয়াত শুনা নাকি পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ (মাহরাম ব্যতিত)। তাহলে নাকি ৭ হাজার বছর জাহান্নামে থাকতে হবে। আসলে এই হাদিস কি সত্য?–সাকিন।

জবাব: নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে কোরআন তেলাওয়াত করা এবং পরপুরুষ তা শোনা জায়েয হবে না। কেননা, কোরআন তেলাওয়াত করতে হয় সুন্দর কণ্ঠে, তারতিলের সঙ্গে। যেমন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ ، فَإِنَّ الصَّوْتَ الْحَسَنَ يَزِيدُ الْقُرْآنَ حُسْنًا

তোমরা তোমাদের ধ্বনির সাহায্যে কুরআনকে সুষমামন্ডিত কর। কেননা, সুকণ্ঠ কোরআনের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয়। (আবু দাউদ ১৬৬৮)

অপরদিকে যদি নারী প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে পর্দার আড়াল থেকেও কথা বলতে হয় তাহলও কোমলতা, নম্রতা পরিহার করতে হয়। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا

তোমরা পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সূরা আহযাব ৩২)

তাছাড়া নারীর প্রতি শরীয়তের বিধান ও চাহিদা হল, তার কন্ঠস্বর যেন প্রয়োজন ছাড়া পরপুরুষ শুনতে না পায়। এ বিধান কেবল সাধারণ ক্ষেত্রেই নয়; বরং ইবাদত বন্দেগী ও আমলের ক্ষেত্রেও তা পূর্ণমাত্রায় লক্ষ রাখা হয়েছে। যেমন,

১. মুআযযিনের এত অধিক মর্যাদা থাকা সত্বেও নারী কন্ঠস্বর যেন বিনা প্রয়োজনে পরপুরুষ শুনতে না পায় এজন্য তাদের উপর আযানের বিধান দেয়া হয় নি।

২. উচ্চ আওয়াজবিশিষ্ট ফরয নামাযের কেরাত তাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়ার বিধান রয়েছে।

৩. নামাযে ইমামের কোনো ভুল ত্রুটি হলে তা অবগত করানোর জন্য পুরুষ মুক্তাদিদেরকে সুবহানাল্লাহ বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই বিষয়ে নারীদেরকে তাসফীক অর্থাৎ এক হাতের পিঠ অন্য হাতের তালুতে মেরে শব্দ করতে বলা হয়েছে। যেন পুরুষরা আওয়াজকারী সম্পর্কে বিন্দুমাত্র বুঝতে না পারে।

৪. হজ্বের তালবিয়া পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে পড়বে। কিন্তু মহিলারা পড়বে নিম্ন আওয়াজে। এধরনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পার্থক্য বিদ্যমান।

সুতরাং পরপুরুষের সামনে সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াত করলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে অবশ্যই কুকল্পনা করবে এবং এটা যে ফেতনার কারণ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে যদি কোনো ফেতনার আশঙ্কা না থাকে যেমন, নারীকণ্ঠের অডিও তেলাওয়াত কিংবা সম্পূর্ণ পর্দাবস্থায় নারীকণ্ঠের ভিডিও তেলাওয়াত; তাহলে নারীর জন্য তা করা উচিত নয়। কেননা, অনেকের মতে নারীকণ্ঠও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তা পরপুরুষের জন্য ফেতনার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকার শর্তে শোনা জায়েয।

বাকি রইল, প্রশ্নেল্লিখিত হাদিস। এ ধরণের কোনো হাদিস হাদিসের ভাণ্ডারে খুঁজে পাওয়া যায় না।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 1 =