জিজ্ঞাসা– ১৩৪ : আমি এমন একটি হাদিস পড়েছি যেখানে বলা আছে, নবী করিম (সা:) এর জীবনে এমন কখনো হয়নি যে, তার সামনে ইসলামী কোন বিধান পালনের দুইটি পদ্ধতি উপস্থাপন করা হয়েছে। আর তিনি তা থেকে সহজটি গ্রহন করেন নাই। নবীজী (সা:) এর এই নীতিটি কেউ যদি যাকাতের নেসাব নির্নয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে (অর্থাৎ, সোনাকে নেসাব হিসাবে ধরে) তাতে কি তার ভুল হবে? অথবা অন্যভাবে বলা যায়, যদি নবীজী (সা:) এর উপরোক্ত হাদিসটি সহিহ হয় তাহলে আপনারা আলেম সমাজ কেন উক্ত হাদিসটি যাকাতের নেসাব নির্নয়ে প্রয়োগ বা প্রচার করেন না। এতে কি আপনারা গুনাহগার হবেন না। –Md. Alamgir Kabir
জবাব: প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, যেহেতু যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন এবং যাকাত পরিশোধ না করার ভয়াবহ পরিণাম ইসলামে বিবৃত হয়েছে (সূরা তাওবা :৩৪-৩৫), পাশাপাশি ইসলামে একে গরীবের হক হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়েছে (সূরা তাওবা : ৬০) সেহেতু যাকাতযোগ্য মিশ্র-সম্পদের ক্ষেত্রে রূপার নিসাবের মূল্যকে মানদণ্ড হিসাবে নির্ধারণ করা হলে গোনাহতো হবেইনা; বরং এটাই উত্তম হয় অন্তত দু’টি কারণে–
প্রথমত: এতে রয়েছে সতর্কতা ও দায়-মুক্তি, কেননা হতে পারে আল্লাহর নিকট রূপার মূল্যের ভিত্তিতে যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। কারণ, বর্তমানে নিসাব পরিমাণ রূপার মূল্য নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ অপেক্ষা অনেক কম।
দ্বিতীয়ত: নিসাব পরিমাণ রূপার মূল্যকে মিশ্র-সম্পদের যাকাতের মানদণ্ড নির্ধারণ করা হলে গরীবদের উপকার হয়। কারণ স্বর্ণ অপেক্ষা রূপার মূল্য কম। তাই রূপার নিসাবে যে পরিমাণ লোকের ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়, স্বর্ণের নিসাবে সে পরিমাণ লোকের ওপর যাকাত ওয়াজিব হয় না। অতএব, রূপার নিসাবে যাকাত দানকারীর সংখ্যা বাড়বে, ফলে গরীবরা উপকৃত হবে।
সুতরাং যদি সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩)
কিছু দৃষ্টান্ত: ক) কারো কাছে নিসাবের কম সোনা এবং নিসাবের কম রূপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রূপার সাথে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়। তাহলে সোনা-রূপার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৭৯,১০৬৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩)
খ) কারো কাছে কিছু স্বর্ণালংকার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এর যাকাত দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩)
গ) কারো কাছে নিসাবের কম রূপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এরও যাকাত দিতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৩)
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, তবে যাঁরা এজাতীয় ক্ষেত্রে সোনাকে নিসাব হিসাবে ধরেন তাঁদের মতামতের মাঝে সতর্কতা, দায়-মুক্তির পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা ও গরীবদের উপকারের ব্যাপারগুলো কম থাকলেও আমরা তাঁদেরকেও তিরস্কার করি না। কেননা মাসআলাটি আলিমদের মাঝে মতবিরোধপূর্ণ।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন: যাকাত কিভাবে আদায় করবেন?