জিজ্ঞাসা–১০৬: আমরা জানি, টুপি পরা সুন্নত। আমার পরিচিত এক ভাই খালি মাথায় নামাজ পড়ছিলেন। সামনেই মসজিদের এক জায়গায় কিছু টুপি রাখাছিল। ভাইটি দ্বিতীয়বার নামাজের নিয়ত করতে গেলে আমি একটা টুপি এগিয়ে দিলাম। এতে তিনি রাগ করলেন। বললেন, টুপি পরা সুন্নত নয়। কেউ নাকি প্রমাণ দিতে পারবে না। এজন্য হুজুর আপনি যদি একটা হাদীস বলে দিতেন তাহলে ভাইটিকে দেখাতে পারতাম।–হাফেজ নাজিম উদ্দীন।
জবাব: অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, ইদানিং একটি মহল তৈরী হয়েছে, যারা দ্বীনের অনেক স্বতসিদ্ধ বিষয়কে কথিত কিছু শায়খের কাছ থেকে পাওয়া ‘সহিহ’র অজুহাত দেখিয়ে অস্বীকার করার মত ধৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। ওই মহলেরই কতক লোক বলে থাকে, ‘টুপি পরা সুন্নত নয়’। আপনার পরিচিত ভাইটিও এই বিভ্রান্তির শিকার। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। মূলত তাদের এ কথাটা মূর্খতা বৈ কিছু নয়। প্রকৃত সত্য হল, টুপি পরা সুন্নত; বরং মুসলিম উম্মাহর ‘শিআর’ জাতীয় নিদর্শন। হাদীসে, আছারে ও ইতিহাসের কিতাবে এ বিষয়ে বহু প্রমাণ আছে। এমন প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়কেও যারা ভিত্তিহীন মনে করেন তাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপর সত্যিই করুণা হয়। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু প্রমাণ পেশ করছি।
১. হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত-
عن رجل من الصحابة : قال : أكلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ورأيت عليه قلنسوة بيضاء
একজন সাহাবী বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি’। (আল ইসাবাহ ৪/৩৩৯)
২. উমর ইবনে খাত্তাব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
الشهداء ثلاثة : رجل مؤمن … ورفع رسول الله صلى الله عليه وسلم رأسه حتى وقعت قلنسوته أو قلنسوة عمر.
শহীদ হল তিন শ্রেণীর লোক : এমন মুমিন … এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুললেন। তখন তাঁর টুপি পড়ে গেল। অথবা বলেছেন উমরের টুপি পড়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৬ জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৪৪)
৩. হাসান বসরী রাহ. বলেন-
وكان القوم يسجدون على العمامة والقلنسوة
তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম গরমের দিনে) পাগড়ি বা টুপির উপর সিজদা করতেন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুস সালাত)
উল্লেখ্য, হাসান বসরী রহ. অনেক বড় মনীষী তাবেয়ী, যিনি অনেক সাহাবীকে দেখেছেন এবং তাদের সাহচর্য গ্রহণ করেছেন।
৪. সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ বলেন-
أدركت المهاجرين الأولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر، يضع أحدهم العمامة على رأسه ويضع القلنسوة فوقها، ثم يدير العمائم هكذا على كوره لا يخرجها من ذقنه
আমি প্রথম সারির মুহাজিরগণকে দেখেছি তাঁরা সুতির পাগড়ি পরিধান করতেন। কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার উপর টুপি রাখতেন। অতপর তার উপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১২/৫৪৫)
সম্মানিত প্রশ্নকারী ভাই, মান্যকারীর জন্য আশা করি এ কয়েকটি প্রমাণই যথেষ্ঠ। এরপরেও যদি কারো বোধদয় না হয় তাহলে তার জন্য হিদায়াতের দোয়া ছাড়া আর কী করা যেতে পারে!
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
টুপি পরা সুন্নত।কিন্তু না পরে নামাজ পড়লে কি কোন গুনাহ হবে বা নামাজের কোনো ক্ষতি হবে? দয়া করে উত্তর দিবেন. (গিয়াসউদ্দিন)
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজের সময় তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করো’। (সূরা আরাফ : ৩১) এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে পোশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা ঢেকে নামাজ আদায় করতেন, আমাদেরও তাই করা উচিত। সাহাবায়েকেরামও এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। যেমন-হাসান ইবনে আলী রা. সম্পর্কে এসেছে, তিনি নামাজের সময় সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরতেন। একদিন কেউ তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। তাই আমি আমার প্রভুর জন্য সুন্দর পোশাক পরি। (রুহুল মাআনি ৪/৩৪৯) হাসান বসরি রহ. বলেন, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম গরমের কারণে) পাগড়ি বা টুপির ওপর সিজদা করতেন। (বোখারি ১/৮৬) যুহাইর (রহ.) বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু ইসহাক সাবিয়ীকে দেখেছি, তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েছেন। তিনি মাটি থেকে টুপি উঠিয়ে মাথায় পরেছেন (তাবাকাতে ইবনে সাদ ৬/৩১৪)। তাই ফুকাহায়ে কেরাম নামাজে টুপি পরা সুন্নত বলেছেন এবং অবহেলা করে টুপি না পরে নামাজ পড়াকে মাকরুহ বলেছেন, যদিও নামাজ আদায় হয়ে যাবে (ফাতাওয়া কাজিখান : ১/১৩৫)