জিজ্ঞাসা–১৪৬৭: আমার স্বামী রোজা রাখে কিন্তু ৫ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমত আদায় করে না। এটা নিয়ে তার সাথে আমার বার বার ঝামেলা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলছি। এটা কি আমি ঠিক করছি?–সুলতানা।
এক: আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে অভিমানের চাইতে ভালবাসাপূর্ণ আচরণই কার্যকর হবে বেশি। তাছাড়া অতিরিক্ত অভিমান অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়। তাই ভালবাসাপূর্ণ আচরণ, আদর-সোহাগ দিয়ে প্রথমে তার পরিপূর্ণ আস্থা অর্জন করুন। আচার-আচরণে মার্জিত থাকুন। তার সমালোচনা না করে তার চেহারা, বা বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির প্রশংসা করুন। তার অন্তরে এই আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন যে, স্বামী হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ। এটা আপনার প্রতি তার ভালবাসাকে আর তাঁতিয়ে তুলবে এবং আপনি হয়ে ওঠবেন তার কাছে ‘শ্রেষ্ঠ স্ত্রী’।
দুই: আপনার উক্ত রোমান্টিকতার ভেতর দিয়েই সমানতালে আপনি তাকে নামায আদায়ের দাওয়াত দিতে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে, আপনার দাওয়াত যেন এতটা দীর্ঘ না হয় যে, এতে আপনাদের রোমান্টিকতায় ছেদ পড়ে কিংবা আপনার স্বামীর কাছে তা আপনার ‘ঘ্যান ঘ্যান আচরণ’ মনে হয়। আর দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হবে সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
১। তাকে স্মরণ করিয়ে দিন যে, নামায একটি ফরয ইবাদত এবং ঈমানের পর নামায ইসলামের সবচেয়ে মহান রুকন।
২। তাকে নামাযের কিছু ফযিলত অবহিত করুন; যেমন- আল্লাহ্ বান্দার উপর যা কিছু ফরয করেছেন তার মধ্যে নামায সর্বোত্তম। বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। একটিমাত্র সেজদার মাধ্যমে বান্দার এক ধাপ মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং একটি পাপ মোচন হয়…ইত্যাদি নামাযের ফযিলতের ব্যাপারে আরও যা কিছু বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করি, তার অন্তর খুলে যাবে এবং নামায তার চক্ষুশীতলে পরিণত হবে।
৩। মাঝে মাঝে তাকে আল্লাহ্র সাক্ষাত, মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নামায বর্জনকারীর যে, খারাপ মৃত্যু হয় ও কবরে আযাব হয় তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দিন।
৪। তাকে মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন, নির্ধারিত সময় এর চেয়ে দেরীতে নামায আদায় করা কবিরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
সেসব নামাযীদের জন্য ধ্বংস যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর। (সূরা মাউন, আয়াত ৪,৫)
৫। তাকে নামায সংক্রান্ত, নামায বর্জনকারী ও অবহেলাকারীর শাস্তি সংক্রান্ত কিছু পুস্তিকা উপহার দিন।
৬। উপর্যুপরি সে নামায ত্যাগ করতে থাকলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মৃদু হুমকি দিতে পারেন। আর এই হুমকিটা দিবেন আপনাদের রোমান্টিকতার মুহূর্তগুলোতে। লক্ষ্য রাখতে হবে, এই অভিমান যেন খুব বেশি জোরালো না হয়।
তিন: প্রিয় বোন, আপনার উক্ত মেহনত ও দরদ আরও বেশি কার্যকরী ও সহজ হবে, যদি তাকে কোন হক্কানী আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে তাকে কোন হক্কানী আলেমের বয়ান শোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারেন। ওলামাদের মজলিসে আসা যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন। অথবা তাকে দাওয়াত-তাবলিগে কিছু সময় দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)
প্রিয় বোন, উক্ত মেহনত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি তার হেদায়তের জন্যও দোয়া করতে হবে নিয়মিত। কোন অবস্থায় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করবেন না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক : ৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)
আপনি যেহেতু তার সবচেয়ে কাছের কল্যাণকামী, সেহেতু তার মাঝে বিদ্যমান সমূহ ফেতনা থেকে উত্তরণের জন্য তার জন্য আল্লাহর কাছে অধিকহারে কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও করতে পারেন; ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনার স্বামীকে আপনার চোখের শীতলতা বানিয়ে দিবেন।
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন। (সূরা ফুরকান ৭৪)
তথাপি যদি তিনি থেকে ফিরে না আসেন, তাহলে আপনি দায়িত্বমুক্ত বলে বিবেচিত হবেন এবং উক্ত চেষ্টা ও দোয়ার জন্য অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবেন। আমরাও দোয়া করি, আল্লাহ আপনার স্বামীকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন। আমিন।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী