একবার সূরা ইয়াসিন পাঠে দশবার কোরআন পড়ার সাওয়াব- এ সম্পর্কিত হাদীস কি জাল?

জিজ্ঞাসা১৫০: সূরা ইয়াসিন ১বার পড়লে কুরআন শরীফ ১০ বার পড়ার নেকী পাওয়া যাবে। এটা কি নকল বা মওজু হাদীস?-Shoaib Khan

জবাব: এ সম্পর্কিত হাদীস একাধিক হাদীস রয়েছে। যেমন-

১. জামি’ তিরমিযীতে (হাদীস নং ৬৩৪৬) আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে,

২. বাইহাকী শুআবুল ঈমানে (হাদীস নং ২২৩৮) আবু হুরাইরা রাযি. থেকে,

৩.বাইহাকী শুআবুল ঈমানে (হাদীস নং ২২৩২) প্রসিদ্ধ তাবিঈ হাসসান ইবন আতিয়্যাহ রহ. থেকে,

৪.মুসতাগফিরির ফাযায়েলুল কোরআনে (হাদীস নং ৮৬৫) আনাস রাযি. থেকে,

৫. প্রাগুক্ত কিতাবে (হাদীস নং ৮৬৫) বারা ইবন আযিব রাযি. থেকে

এসব হাদীসের মূলপাঠে শব্দগত কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও বক্তব্য অভিন্ন। যেখানে বলা হয়েছে, একবার সূরা ইয়াসিন পাঠকারী দশবার কোরআন পড়ার সাওয়াব পায়। দীর্ঘায়িতা এড়ানোর লক্ষে আমি এখানে শুধু জামি’ তিরমিযীর মূলপাঠ পেশ করছি-

عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ قَلْبًا، وَقَلْبُ القُرْآنِ يس ، وَمَنْ قَرَأَ يس كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِقِرَاءَتِهَا قِرَاءَةَ القُرْآنِ عَشْرَ مَرَّاتٍ

অর্থাৎ, আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর হৃদয় থাকে, কোরআনের হৃদয় হল সূরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি একবার সূরা ইয়াসিন পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার সমগ্র কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন।

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, এ সম্পর্কিত হাদীসগুলো সনদের দিক থেকে কিছুটা দুর্বল হলেও মওজু বা জাল নয়। আর অভিন্ন বক্তব্যসম্বলিত হাদীস একাধিক থাকলে উসূলে হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী ওই হাদীসগুলো হাসান বা সহীহের পর্যায়ে চলে আসে।
দ্বীতিয়ত, হাদীসগুলো কিছুটা দুর্বল হলেও ফাজায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য। এটি উসূলে হাদীসের অন্যতম একটি নীতিমালা।

যেমন সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহ. বলেন-

قال العلماء من المحدثين والفقهاء وغيرهم يجوز ويستحب العمل فى الفضائل والترغيب والترهيب بالحديث الضعيف ما لم يكن موضوعا

মুহাদ্দিসীন ও ফুকাহায়েকেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়েকেরাম বলেন,দুর্বল হাদীসের উপর ফাযায়েল ও তারগীব তথা উৎসাহ প্রদান ও তারহীব তথা ভীতি প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে আমল করা জায়েয ও মুস্তাহাব। যখন উক্ত হাদীসটি জাল না হয়। (আল আজকার-৭-৮)

এ মূলনীতি নিম্ন বর্ণিত বিজ্ঞ ব্যক্তিগণও বলেছেন-

১- মোল্লা আলী কারী রহ. (মওজুয়াতে কাবীর-৫, শরহুন নুকায়া-১/৯)

২- ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী রহ. (মুস্তাদরাকে হাকেম-১/৪৯০)

৩- আল্লামা সাখাবী রহ. (আল কাওলুল বাদী’–১৯৬)

৪- হাফেজ ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী রহ. (মাজমুআ ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-১/৩৯)

অতএব, যারা বলে থাকেন যে, এ সম্পর্কিত হাদীস মওজু বা জাল; তাদের মূল উদ্দেশ্য, উম্মতকে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ -এর সুন্নত ও নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখা । তাদের এই হীন চক্রান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই।

والله اعلم بالصواب

��ন্তব্য

    • যারা বলে থাকেন যে, এ সম্পর্কিত হাদীস মওজু বা জাল; তাদের মূল উদ্দেশ্য, উম্মতকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত ও নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 4 =