জিজ্ঞাসা–১১৫৭: আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, আমার এক বন্ধু বিদেশে থাকে। সে তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে খুব রাগের মাথায় মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীকে বলে ১ তালাক ২ তালাক ৩ তালাক। তার স্ত্রী প্রথমবার তালাক শব্দটা শুনেছে কিন্তু পরবর্তী দুইবার তালাক শব্দ শুনে নাই। কিন্তু যে তালাক দিয়েছে, সে ঠিকই তিনবার তালাক শব্দ বলেছে। এখন তার স্ত্রী কি পরিপূর্ণভাবে তালাক হয়ে গেছে নাকি এক তালাকই হয়েছে? এবং যখন সে তালাক শব্দগুলো বলেছিলো, তখন তার পাশেও কেউ ছিলো না। স্ত্রী তালাকের ক্ষেত্রে কি কোনো স্বাক্ষী আবশ্যক অথবা স্ত্রী তালাক শব্দটা শুনা কি প্রয়োজন? আশাকরি কুরআন সুন্নাহের দালিলিক প্রমাণসহ সমাধান দিয়ে সহযোগিতা করবেন।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
সম্মানিত দীনি ভাই, আসলে তালাক তো দেওয়াই হয় রাগের মাথায়। কয়জন আছে, শান্তভাবে তালাক দেয়! মূলতঃ রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ
তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত। (আবু দাউদ ২১৯৪ তিরমিযি ১১৮৪)
অনুরূপভাবে তালাক স্ত্রীকে শুনিয়ে দিতে হবে কিংবা সাক্ষী রাখতে হবে; তালাকের ক্ষেত্রে এজাতীয় কোনো শর্ত নেই। বরং ফকিহগণের ঐকমত্য হল, স্বামী যদি নির্জনে একা একা বসে তালাক দেয় তাহলেও তালাক হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার ৪/৯৬, দারু আলামিল কুতুব, রিয়াদ, আল্মুহীতুল বুরহানী ৩/২১০)
সুতরাং আপনার উক্ত বন্ধুর স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে। আর তিন তালাক হয়ে গেলে বিধান কী- এসম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী