যে মেয়ে নিজের ব্যাপারে হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ভয় করছে; তার প্রতি নসিহত

জিজ্ঞাসা–১১৭৯: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি মেয়ে, আমি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কেমন, সহবাস কিভাবে করে; এগুলা কলেজে উঠে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনেছি। তার আগে কিছুই জানতাম না। কিন্তু স্কুল থেকেই আমি নিজের স্তনে হাত দিতাম আর এটা অভ্যাস হয়ে যায়। অটোমেটিক হাত চলে যায়। মর্দন করতে ভালো লাগে, স্তনের বোটা ধরতে ভালো লাগে। কিন্তু এটা কি হারাম; আমি এখনও জানিনা। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়ে করাটা জরুরি। অনেক খারাপ চিন্তা আসে মনে। কিন্তু পরিবার থেকে কিছু করছে না আমার বয়স ২৩ হয়ে গেছে। এখন আমি কী করতে পারি? আবার বিয়ে নিয়ে আতংক লাগে, মনে হয় হাসবেন্ড যদি ভাল না হয়? আজকাল তো অনেক ডিভোর্স হয়। মাঝে মাঝে শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয় ফেইসবুকে ছেলেদের সাথে চ্যাট করার, একটা ছেলে ঠিক করার বিয়ের জন্য। কিন্তু গুনাহ হবে চিন্তা করে করি না। আর পরিবারের উপর খুব রাগ হয় আমার, শত্রু মনে হয়, তারা আমার সুখের কথা একটু ও চিন্তা করে না। দেখে যে আমি একা একা কারো সাথে কথা বলি না। টিভি দেখি না। গান শুনিনা। অনেক একাকীত্বে ভুগি। তারপরও তাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। ইসলাম কি আমাকে এই ক্ষেত্রে নিজের জন্য ছেলে ঠিক করার অনুমতি দেয়? আমি খুব দ্বিধা দ্বন্দে ভুগি। স্পেশালি রাতে ঘুমের সময় আর একদম ঘুম হয়না, সকালের পর ঘুমাই।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

প্রিয় বোন, নিজের হাত দ্বারা যৌনসুখ লাভ করা একটি জঘন্য বদঅভ্যাস। এমনকি এর অভ্যাসী ব্যক্তি অনেক সময় বিবাহের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সীমালংঘন বিধায় কবিরা গুনাহ। অনুরূপভাবে ফেসবুকে ছেলেদের সঙ্গে চ্যাট করার মাঝে রয়েছে বহুবিধ ফেতনার আশংকা, তাই ঈমানের দাবী হল, এই পথ পরিহার করে চলা। রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه

‘দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল কণ্ঠস্বর শোনা, জিহবার ব্যভিচার হল, সুড়সুড়িমূলক কথোপকথন। হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ানো, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহীহ মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)

তাই আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আপনার উপর তার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেন। আপনার তাকওয়া ও লজ্জাশীলতা আরও বাড়িয়ে দেন। আমীন।

আর আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল–

এক. আপনি যদি নিজের উপর হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করেন তাহলে নিজের বিয়ের জন্য নিজে ছেলে ঠিক করা নয়; বরং আপনার উচিত আর দেরি না করে আপনার অভিভাবকের কাছে আপনার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা। কেননা, যে ব্যক্তির অবস্থা এমন তার চুপ থাকার সিদ্ধান্ত ভুল। আর ‘অভিভাবকশূন্য বিয়ে’ মানে পারিবারিক মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান, চরিত্রের পবিত্রতা, নারীত্বের আমানতদারিতা, অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ সর্বোপরি  দ্বীনদারির উপর কালো ও অতি বিশ্রি দাগ স্থায়ীভাবে বসে যাওয়া এবং এমন কিছু পরিণামের দুয়ার খোলা, যা পরবর্তীতে আপনার বৈবাহিক-জীবনে অশান্তির বড় কারণ হবে। সুতরাং এ পথে চিন্তা না করে বরং প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সরাসরি অথবা যথাযোগ্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। নিজের ও পরিবারের কল্যাণের জন্য এটা আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব করতেই হবে। কেননা, ‘আল্লাহ না করুন’  শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যদি আপনি কোন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তাহলে এর দায়ভার আপনার পরিবারের উপরও বর্তাবে। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه

তোমাদের মাঝে যার কোন (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোন পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বাইহাকি ৮১৪৫)

দুই. যৌনসুড়সুড়ি জাগানিয়া কাণ্ডসমূহ থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে চলুন। বিশেষত ইন্টারনেটের অবাধ ও অবৈধ ব্যবহার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। নারীপুরুষের সহাবস্থান কিংবা ফ্রেন্ডশিপের নামে ছেলেদের সঙ্গে কথোপকথন এড়িয়ে চলুন। এক কথায়, পর্দার প্রতি পরিপূর্ণ যত্নশীল হোন। মনে রাখবেন, পৃথিবীর সবচে দীর্ঘতম সফর এক পা ওঠালেই শুরু হয়ে যায়। অনুরূপভাবে উক্ত কর্মকান্ডগুলোর মাধ্যমে শুরু হয় মূল ব্যভিচারের প্রতি সফর। ঈমানদারের কর্তব্য হল সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেলা থেকে বিরত থাকা। এজন্যই আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন–

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর ৩১)

তিন. মাসে অন্তত তিনদিন অর্থাৎ আরবি মাসের ১৩,১৪,১৫ রোজা রাখার চিন্তা করতে পারেন। অথবা প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার। কেননা রোজার মধ্যে প্রবৃত্তির টানে ছুটে যাওয়া থেকে যেমন সুরক্ষা রয়েছে, তেমনি রয়েছে আল্লাহর কাছে বড় প্রতিদান। মানুষের ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় করা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নফসের খাহেশ ও আনন্দদায়ক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দীক্ষাও রয়েছে রোজায়। তাই রোজা রাখার ব্যাপার মনস্থির করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ আপনার বোঝা হালকা করবেন। রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ ، مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ

হে যুবক সম্প্রদায় ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে এবং যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নাই, সে যেন রোযা পালন করে। কেননা, রোযা তার যৌনতাকে দমন করে। (বুখারী ৪৯৯৬)

চার. কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আর আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। যেমন- সৎকাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, নামাজ ইত্যাদি।

পাঁচ. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।

হে প্রিয় বোন,  সর্বোপরি কোনো পাপের পথে পা বাড়াবার আগে একটু ভাবুন, আল্লাহ আমাকে দেখছেন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × one =