জিজ্ঞাসা–১২১০: ব্যংকে প্রকৌশলি হিসেবে চাকরী করা কি জায়েজ হবে?–ওসমান হারুন ( শাহিন)।
জবাব: এক কথায় এর উত্তর দেয়া মুশকিল। কারণ বিষয়টি একটু ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। ব্যাংকের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হলো- ব্যাংকে চাকুরি করা হারাম হওয়ার কারণ দুইটি। ১-হারাম কাজে সহায়তা করা। ২-হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা। হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন ধাপ আছে। ইসলাম সব ধরণের সহায়তাকে হারাম বলে নি। বরং ঐ সব সহায়তা হারাম যেখানে সরাসরি হারাম কাজ জড়িত। যেমন সুদী লেনদেন করা, সরাসরি সুদী হিসাব সংরক্ষণ করা বা সুদী লেনদেন লেখা, সুদী টাকা উসুল করা ইত্যাদি। এ ধরণের চাকরি তো সন্দেহাতীতভাবে হারাম।
হাদিসে এসেছে-
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه، وقال : هم سواء.
আল্লাহর রাসূল ﷺ সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক এবং তার উপর সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ করেছেন, আর বলেছেন, ওরা সকলেই সমান। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯)
তবে যদি সুদী কাজে লিপ্ত না হয়, বরং তার কাজ এমন হয় যেমন ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি হয় তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমন চাকরি করার সুযোগ আছে।
হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার বিষয়ও একটি মূলনীতি রয়েছে তা হল- যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত অর্থ থেকে হয় আর হালাল মাল বেশি হয় তাহলে তা নেয়া জায়েয। আর যদি হারাম মাল বেশি হয় তাহলে বেতন নেয়া জায়েয হবে না৷ (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২)
বর্তমানে ব্যাংকের অবস্থা হলো, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-
১-মূলধন। ২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩-জায়েয ব্যবসার আমদানী। ৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী।
উক্ত চারটি বিষয়ের মধ্যে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে জায়েয। যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন বেশি । আর ৪র্থ বিষয়টির লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে চাকরি করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয়, তাহলে তা জায়েয হবে। বেতন নেওয়াও জায়েয হবে। তবে এসব চাকরি না করাই উত্তম।
কিন্তু যদি হারাম আমদানী হালালের তুলনায় বেশি হয় বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয়, তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরি করা ও বেতন নেওয়া কোনটি ই জায়েয নয়। উক্ত ব্যাংকের চাকরীজীবির বেতনের সমস্ত অর্থ হারাম হিসেবে বিবেচ্য হবে৷ (ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬)
উপর্যুক্ত ব্যাখ্যার আলোকে বলা যায়, যদি প্রকৌশলি হিসেবে চাকরি করার মাধ্যমে সরাসরি সুদী-কারবারের সহযোগিতা হয় এবং ব্যাংকের হারাম আমদানী হালালের তুলনায় বেশি হয় তাহলে এই চাকরি হালাল হবে না। আর যদি এই চাকরি সরাসরি সুদী-কারবারের সহযোগিতা না হয় এবং ব্যাংকের হালাল আমদানী হারামের তুলনায় বেশি হয় তাহলে এই চাকরি হালাল হবে ।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী