বর্তমানের ইফতার পার্টি : নতুন ট্রেন্ড না নতুন জাহিলিয়াত?

জিজ্ঞাসা–১৮৫: আসসালামু আলাইকুম। এই রমজান মাস উপলক্ষে ছেলে মেয়ে একসাথে স্পেশালি ক্লাসমেট অবাধে সেহরি এবং ইফতার পার্টি করে থাকে। এটা নাকি নতুন ট্রেন্ড! ইসলামি শরিয়ত এগুলো সম্পর্কে কী বলে? –Adnan Jawad

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله

বেগানা নারী-পুরুষরা মিলে ইফতার পার্টি! এটা নতুন ট্রেন্ড!! এবিষয়ে নাউজুবিল্লাহ, ইন্নালিল্লাহ…ছাড়া কী বলা যেতে পারে…মুলতঃ এটা এক নতুন জাহিলিয়াত এবং ইসলামের সাথে তামাশা বৈ কিছু নয়।

প্রিয় ভাই, কারণ আমরা জানি, রমযানুল মুবারক বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এই মাসের দিবস-রজনীকে আল্লাহ তাআলা খায়ের ও বরকত দ্বারা পূর্ণ করে রেখেছেন। তাকওয়া অর্জনের অনুশীলনের জন্য এবং ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সকল আমলের জন্য ভরা বসন্ত বানিয়েছেন। মুমিনের কর্তব্য হল, এই মহা নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া। একে আল্লাহ তাআলার অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের উত্তম সময় এবং পরকালীন পাথেয় অর্জনের উৎকৃষ্ট মৌসুম মনে করা।

কিন্তু যে লোকগুলো নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে দাবি করা সত্ত্বেও এমনই মহিমান্বিত মাসটির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নগ্নতা ও নারী-পুরুষের সহবিচরণসহ অন্যান্য হারাম কাজগুলোর মাঝে ডুবে থাকে এবং উদ্দাম এই অশ্লীলতাকে সেহরি এবং ইফতার পার্টি নাম দেয়, নিঃসন্দেহ ওই লোকগুলো মাসটির কেবল পবিত্রতাই নষ্ট করছে না; বরং মহান আল্লাহ্‌র ঘোষিত রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের সাথে তামাশা করছে এবং নিজেদের জীবনে লা’নত ও অভিশম্পাত ডেকে আনছে।

মূলতঃ এভাবে রমযানের খায়ের ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকা মুনাফিকীর দলীল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত এবং মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ ২/৩৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৪০)

প্রিয় ভাই, উচিত তো ছিল এই সময়ে দুআ ও জিকিরের প্রতি মনোযোগী হওয়া। কারণ,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন –

إن للصائم عند فطره لدعوة ما ترد.

ইফতারের সময় রোযাদার যখন দুআ করে, তখন তার দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দুআ কবুল হয়)। (ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৫৩)

অথচ তা না করে কথিত এসব সেহরি এবং ইফতার পার্টিতে কী হচ্ছে! বেগানা ছেলে-মেয়েদের উপস্থিতিতে পর্দা নষ্ট হচ্ছে, গল্পগুজব করার সুযোগ হচ্ছে, ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে সেলফি তুলছে, ফিতনায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে–এসব কি সওয়াবের কাজ !?

বলুন, এমন ইফতার পার্টি আল্লাহর গজব ছাড়া কী-ই বা ডেকে আনবে!

অতএব, এসব ইফতার পার্টি নামক ফিতনা থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুমিনের জন্যই ওয়াজিব।

মনে রাখবেন, এই মাসের প্রতিদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে-

يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَ يَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ

‘হে কল্যাণ-অন্বেষী, অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের পথিক, থেমে যাও।’

والله اعلم بالصواب

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − ten =