জিজ্ঞাসা–১৩০৯: আসসালামু আলাইকুম। হুজুর, আমি আমার অতীত জীবনে এমন কিছু কাজ করেছি যার দ্বারা খুব সম্ভবত আমি কয়েকজন ব্যক্তি দ্বারা অভিশপ্ত হয়েছি। এখন, আমি কি শুধু আল্লাহ তায়ালার কাছে মাফ চাওয়ার মাধ্যমে অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারব? না পারলে আমাকে কি করতে হবে? হুজুর, আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী। আপনার কাছে আমি একজন দোয়াপ্রার্থী আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন এবং স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার তৌফিক দান করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, যদি আপনি কারো আর্থিক অধিকার নষ্ট করে থাকেন তাহলে তা ফিরিয়ে দিবেন অথবা তার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। যদি ক্ষমা না করে তাহলে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَن كانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لأخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْها، فإنَّه ليسَ ثَمَّ دِينارٌ ولا دِرْهَمٌ، مِن قَبْلِ أنْ يُؤْخَذَ لأخِيهِ مِن حَسَناتِهِ، فإنْ لَمْ يَكُنْ له حَسَناتٌ أُخِذَ مِن سَيِّئاتِ أخِيهِ فَطُرِحَتْ عليه
কারো উপর তার ভাইয়ের কোন প্রকার দাবি থাকলে সে যেন তাতে থেকে মুক্ত হয়ে যায়। কেননা সেখানে (কিয়ামত দিবসে বা পরকালে) কোন দীনার-দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না। তার অন্যায়ের সমপরিমাণ নেকী তার ভাইয়ের জন্য কেটে নেয়ার আগেই। তার যদি নেকী না থাকে তাহলে তার ভাইয়ের গুনাহগুলো নেয়া হবে, অতঃপর তার উপরে চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী ৬৫৩৪)
দুই. আর যদি কারো গীবত, চোগলখোরী কিংবা তার উপর অন্য কোনো শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে থাকেন তাহলে বিষয়টি নির্ভর করছে এর ভাল ও মন্দ দিকটি নির্ণয় করার উপর। যদি তাদেরকে বিষয়টি জানালে ক্রোধান্বিত না হন বা আপনার প্রতি কোন আক্রোশের সৃষ্টি না হয় তাহলে আপনি সরাসরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। কোন রকমের বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ না করে। যেমন হয়তো বললেন, আমি আপনার ব্যাপারে অতীতে ভুল করেছি বা আপনাকে কথার দ্বারা কষ্ট দিয়েছি, এখন আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। তাহলে কোন অসুবিধা নেই।
আর যদি তাদেরকে জানালে ক্রোধ ও আক্রোশ বেশী হবার আশংকা থাকে, এটিই সাধারণত ঘটে থাকে বা তাদেরকে সাধারণভাবে বললে যদি ব্যাখ্যা দাবী করে এবং তা শুনলে আপনার প্রতি তাদের ঘৃণা বৃদ্ধির আশংকা থাকে, তাহলে তাদেরকে জানানো ওয়াজিব নয়। কেননা শরীয়ত ফেতনা ফাসাদের অনুমতি দেয় না। কাউকে কোন বিষয় জানানোর ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে সেটিও শরীয়তের কাম্য নয়। তাছাড়া দ্বীনের উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক ও ভালবাসা বৃদ্ধি করা। তাকে জানানোর ফলে হয়তো শত্রুতা আরো বেড়ে যেতে পারে এবং সে হয়তো আপনার প্রতি খুবই আক্রোশী হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় তাওবা করার ক্ষেত্রে আপনার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন:
১. অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে সাথে কৃত অপরাধের কদর্যতা ও জঘন্যতার কথা চিন্তা করা এবং বিশ্বাস রাখা যে তা হারাম।
২. কারো গীবতের কথা শুনে বিশ্বাস করবেন না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ মনে করবেন।
৩. যাদের এজাতীয় হক নষ্ট করেছেন তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন মজলিসে সুনাম বর্ণনা করবেন এবং তাদের ভালো গুনাবলীর কথা উল্লেখ করবেন। তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবেন এবং কেউ তাদের প্রতি কটাক্ষ করলে বা বদনাম করলে তা প্রতিহত করবেন।
৫. তাদের জন্য গোপনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। (মাদারেজুস সালেকীন ১/২৯১, মুগনী ব্যাখ্যাসহ ১২/৭৮)
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই! আপনি আর্থিক অধিকার (হক) এবং শারীরিক অপরাধের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করুন, গীবত ও চোগলখোরীর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করুন। আর্থিক অধিকারের কথা জানালে এর দ্বারা মালিকেরা উপকৃত হবে এবং তাদের নিকট তা ফেরত দিলে তারা খুশী হবে, এজন্য তা গোপন করা জায়েয হবে না। তবে ইজ্জত আবরুর ব্যাপারটি এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কেননা তা জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে।
পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দান করুন এবং আপনার নেক স্বপ্নগুলো পূরণ করুন। আমীন।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী