জিজ্ঞাসা–২৮৩: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ,আমার প্রশ্নটি হলো অনেকে বলে যে ছোটো শিশুদের পেশাব কাপড়ে/গায়ে লেগে গেলে নামাজ পড়া চলে; এটা কি সহী নাকি ভুল ফতোয়া? –ইমরান আলী সাঁপুই: [email protected]
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, যে শিশু এখনও কেবল মায়ের দুধ খায়; অন্য খাবার খায় না, তার প্রস্রাব নাপাক কিনা–এই মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, তার প্রস্রাবও অপবিত্র এবং তা কাপড়ে/গায়ে লাগলে পবিত্র করা ব্যতিত নামাজ আদায় শুদ্ধ হবে না। কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، أَنَّهَا قَالَتْ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِصَبِيٍّ، فَبَالَ عَلَى ثَوْبِهِ، فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَتْبَعَهُ إِيَّاهُ
উম্মুল মু’মিনীন আয়শা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ-এর কাছে একটি শিশুকে আনা হল। শিশুটি তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং এর ওপর ঢেলে দিলেন। (সহীহ বুখারী ২২২)
অপর হাদিসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّهُ مَرَّ بِقَبْرَيْنِ يُعَذَّبَانِ فَقَالَ ” إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ
ইবনু আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দু’টির বাসিন্দাদের আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এদের দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন গুনাহর জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না যা থেকে বিরত থাকা দুঃরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। (সহীহ বুখারী ১২৭২)
অপর হাদিসে রাসূল ﷺ বলেছেন,
استنزهوا من البول فإن عامة عذاب القبر منه
পেশাব থেকে নিজেকে রক্ষা করো। অর্থাৎ পবিত্র থাকো। কেননা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবরের আজাব হবে, পেশাব থেকে ভালোভাবে পবিত্র না হওয়ার কারণে। (ইবন মাজাহ ৩৪৮ হাকিম ১/১৮৩ মুসনাদ আহমাদ ২/৩২৬)
তবে এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় হলো, হাদিসের মূলপাঠ দ্বারা বোঝা যায়, পেশাব অপবিত্রতার ক্ষেত্রে ছেলের পেশাবের থেকে মেয়ের পেশাবে নাপাকি বেশি থাকে। ফলে আলেমগণ মত দিয়েছেন যে, শিশু যদি ছেলে হয়, তবে তার পেশাব হালকা ধৌত করলেই হবে। কিন্তু শিশু যদি মেয়ে হয়, তাহলে হালকা ধৌত করলে চলবে না। বরং বেশি পানি দিয়ে বড়দের প্রস্রাবের মতো করে ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।
আসসালামু অলাইকুম।
আমার হোস্টেল এর হুজুর বলেছিলেন যে বীর্য দ্বারা নাপাক(ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত) হওয়া কাপড় পাক করতে হলে 3 বার ধৌত করতে হবে ।এবং শেষ বার, মানে 3 বারের সময় এমন ভাবে ধৌত করতে হবে যেন কাপড় ছেড়ার উপক্রম হয়। এই সম্মন্ধে আপনার বক্তব্য কী..?
চাদরে কিংবা কাপড়ে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রত্যেকবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধোয়ার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে তাতে কোনো দোষ নেই। এতেই চাদর কিংবা কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে। (বেহেশতি জিওর, উর্দূ ২/৭৭)
উল্লেখ্য, তিনবারের কথা বলা হয়, যাতে সন্দেহ না থাকে। অন্যথায় যদি প্রবাহমান পানি যেমন, নদী, পুকুরে বা টেপের পানিতে এত বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায় তাহলে তা পাক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তিনবার নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৩ আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৭ শরহুল মুনইয়া ১৮৩)
হাদিস শরিফে এসেছে,আসমা রাযি. থেকে বর্ণিত,
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ -فِي دَمِ الْحَيْضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ-: «تَحُتُّهُ، ثُمَّ تَقْرُصُهُ بِالْمَاءِ، ثُمَّ تَنْضَحُهُ، ثُمَّ تُصَلِّي فِيهِ
হায়িযের রক্ত কাপড়ে লেগে যাওয়া প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘পানি দিয়ে ঘষা দিবে তারপর পানি দ্বারা ভালোভাবে ধৌত করবে। অতঃপর সলাত আদায় করবে।’ (বুখারী ২২৭,৩০৭)