জিজ্ঞাসা–১৭৬৩: হযরত, একটি জিজ্ঞাসা। কোন ব্যক্তি যদি মসজিদের জন্য একটি জমি দান করে এবং সেখানে গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় একটি মসজিদ গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে যিনি জমি দান করেছিলেন তিনি যদি বলেন, আমার জমির উপরে মসজিদ হয়েছে। এটা আমার জমি। অতএব এ মসজিদটা আমার মসজিদ। আমি যেভাবে বলব ওইভাবেই চলবে। না হলে মসজিদে নামাজ পড়তে আসার কোন দরকার নাই। তাহলে ওই মসজিদে যদি স্থায়ী ইমাম নির্ধারণ করার পর নামাজের জন্য মুসল্লিদের যাওয়া কি উচিত হবে? ওই মসজিদে নামাজ পড়া যাবে? প্রশ্নটির উত্তর দয়া করে জানাবেন, জানালে উপকৃত হতাম।–Morfachhel Laskar
জবাব: পবিত্র কুরআনের ভাষ্য মতে মসজিদ আল্লাহর জন্য এবং মসজিদ থেকে বাঁধা দেওয়ার অধিকারও কারো নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَنَّ ٱلْمَسَٰجِدَ لِلَّهِ
মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্যে। (সূরা জিন ১৮)
অন্যত্র তিনি বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُوْلَئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
আর তার চেয়ে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়, এই ধরনের লোকেরা এসব ইবাদাত গৃহে প্রবেশের যোগ্যতা রাখে না। আর যদি কখনো প্রবেশ করে, তাহলে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রবেশ করতে পারে। তাদের জন্য রয়েছে এ দুনিয়ার লাঞ্ছনা এবং আখিরাতের বিরাট শাস্তি। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১১৪)
এই আয়াতের তাফসিরে ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
وَأَجْمَعَتْ الْأُمَّة عَلَى أَنَّ الْبُقْعَة إِذَا عُيِّنَتْ لِلصَّلَاةِ بِالْقَوْلِ خَرَجَتْ عَنْ جُمْلَة الْأَمْلَاك الْمُخْتَصَّة بِرَبِّهَا وَصَارَتْ عَامَّة لِجَمِيعِ الْمُسْلِمِينَ , فَلَوْ بَنَى رَجُل فِي دَاره مَسْجِدًا وَحَجَزَهُ عَلَى النَّاس وَاخْتَصَّ بِهِ لِنَفْسِهِ لَبَقِيَ عَلَى مِلْكه وَلَمْ يَخْرُج إِلَى حَدّ الْمَسْجِدِيَّة , وَلَوْ أَبَاحَهُ لِلنَّاسِ كُلّهمْ كَانَ حُكْمه حُكْم سَائِر الْمَسَاجِد الْعَامَّة , وَخَرَجَ عَنْ اِخْتِصَاص الْأَمْلَاك
‘উম্মত এ ব্যাপারে একমত যে, যদি কোনো ভূমি মৌখিকভাবে নামাযের জন্য বরাদ্দ করে দেওয়া হয় তাহলে তা নির্দিষ্ট মালিকের সমুদয় মালিকানা থেকে বের হয়ে যায় এবং তা সকল সাধারণ মুসলমানের জন্য হয়ে যায়। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি নিজের বাড়িতে মসজিদ বানিয়ে মানুষের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে রাখে এবং তা নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখে তাহলে তা তার মালিকানায়ই থেকে যাবে এবং তা মসজিদের পরিচয় পাবে না। আর যদি তা সকল মানুষের জন্য উম্মুক্ত করে দেয় তাহলে তার বিধান সকল সাধারণ মসজিদের মতই হবে এবং তা নির্ধারিত মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে।’
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, উক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চয় এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, প্রশ্নেল্লেখিত ব্যক্তির এই অধিকার নেই যে, ‘আমার মসজিদ’ বলে মসজিদের মালিকানা দাবী করা এবং মসজিদ থেকে অন্যদের বাঁধা প্রদান করা। তার এই উভয় কাজই শুধু অন্যায় নয়; বরং চরম অন্যায় ও ভয়াবহ কবিরা গুনাহ। তার উচিত তাওবা করা এবং শেষ পরিণতির কথা চিন্তা করা।
অনুরূপভাবে সাধারণ মুসলমানদের জন্যও তার এই অন্যায় মেনে নেয়া বৈধ নয়। বরং উচিত হবে তার এহেন অনর্থক বাঁধা অমান্য করে মসজিদে যাওয়া এবং প্রজ্ঞা, শালীনতা ও ভদ্রোচিত পন্থায় তার এই অন্যায়কাণ্ডের প্রতিবাদ করা। কেননা, কেননা, ইসলামের শিক্ষা হল,
لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق
অর্থাৎ, আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা যেখানে আসবে, সেখানে সৃষ্টির আনুগত্য কোনো অবস্থাতেই করা যাবেনা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ
অসৎকাজে আনুগত্য নয় ; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫ মুসলিম ১৮৪০)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী