জিজ্ঞাসা–১৭৭৯: হুজুর! আমি একটি মসজিদে নতুন জয়েন্ট করেছি,কিন্তু এখানে আসার পর দেখতেছি, আশেপাশের বিভিন্ন মসজিদ-এতিমখানা মাদ্রাসা (যদিও কোন এতিম নেই) কিছু কালেক্টর নিয়োগ দিয়েছে ফেরীঘাট ও বাজারে।
কালেক্টর নিয়োগ পদ্ধতি হলোঃ কালেক্টররা প্রতি মাসে তার মসজিদ বা মাদ্রাসায় মাসে ১২/১৪ হাজার বা এরকম একটা নির্ধারিত টাকা দিবে, আর তার অতিরিক্ত লক্ষ টাকা উঠলেও সেগুলো নিজেরা নিয়ে নিবে।
সরজমিনে গেলে দেখা যায়, কালেক্টররা মাসে ৫০হাজার + ইনকাম করে। এমন পদ্ধতি ব্যবহার করে মসজিদ মাদ্রাসার নামে কালেকশন করা জাযেজ কি না? দলিলসহ জানিয়ে উপকৃত করবেন।–মাহমুদ।
জবাব: মসজিদ-মাদরাসার জন্য কালেকশান করার প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতি কয়েক কারণে নাজায়েয। যথা-
১. এতে ধোঁকা ও প্রতারণা বিদ্যমান। অথচ হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَمَنْ غَشَّنَا ، فَلَيْسَ مِنَّا
যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (মুসলিম ১০২)
২. কোনো কোনো ক্ষেত্রে এতে রয়েছে মিথ্যার আশ্রয়। আর বলা বাহুল্য যে, মিথ্যা নিঃসন্দেহে হারাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
يُطبَعُ المؤمِنُ على كلِّ شيءٍ إلا الخيانَةَ والكذِبَ
মুমিনের মধ্যে আর যা-ই থাকুক খেয়ানত ও মিথ্যা থাকতে পারে না। (মুসনাদে আহমদ ২২১৭০)
৩. রাস্তার মোড়ে, পাবলিক বাসে, দোকান-পাট, হাট-বাজারে গিয়ে এভাবে চাঁদা/অর্থ কালেকশন অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং নিদেনপক্ষে একপ্রকার ভিক্ষাবৃত্তি। আর ইসলাম এ ধরনের কাজ করাকে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করে। যেমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لاَ تَزَالُ الْمَسْأَلَةُ بِأَحَدِكُمْ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ
তোমাদের কেউ কেউ মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইতে চাইতে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে তার মুখমণ্ডলে গোশতের কোন টুকরা অবশিষ্ট থাকবে না। (সহিহ মুসলিম ১০৪০)
৪. সর্বোপরি মসজিদ-মাদরাসা ইসলামের অন্যতম শিআ’র বা নিদর্শন। শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘শাআয়েরে ইসলামে’র বিষয় অত্যন্ত সংবেদনশীল। এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাকওয়ার পরিচয় এবং উপহাস করা এমন হারাম যে, যার কারণে ঈমান চলে যাওয়ার আশংকা থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ
আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটা তার হৃদয়ের তাকওয়া হতে উদ্ভূত বা আল্লাহ সচেতনতার লক্ষণ। (সূরা আল-হাজ ৩২)
আর এটা তো জানা কথা যে, মসজিদ মাদরাসার জন্য এভাবে অসম্মানজনক পদ্ধতিতে চাঁদা সংগ্রহ করতে গেলে অনেক সময় মানুষ নানা বাজে মন্তব্য করে। সুতরাং বলা বাহুল্য যে, মসজিদ-মাদরাসার জন্য এভাবে চাঁদা সংগ্রহ করা এবং উপরন্তু এর জন্য শরিয়ত অসমর্থিত পদ্ধতিতে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা কোনোভাবেই জায়েয হতে পারে না।
উল্লেখ্য, যদি মসজিদ কর্তৃপক্ষ কাউকে কালেক্টর নিয়োগ করে তার জন্য একটি যৌক্তিক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে তাহলে ওই ব্যক্তি শালীন ও সম্মানজনক উপায়ে কালেকশান করতে পারবে এবং তখন তার জন্য নির্ধারিত বেতন গ্রহণ করাও জায়েয হবে।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী