মোহরের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা

জিজ্ঞাসা–৩৯৪: আসসালামুয়ালাইকুম। দেনমোহর নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল। ইসলামে দেনমোহর এর হিসাব কিভাবে করা আছে? অর্থাৎ দেনমোহর বেশি দেওয়া ভালো নাকি কম দেওয়া? যদি আমার ৫ লাখ টাকা দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছা থাকে কিন্তু বর্তমানে আমার কাছে এই পরিমান টাকা নেই তখন কি স্ত্রীর কাছ থেকে সময় নেওয়া যাবে? Siamoon Siam Ayon

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক– মোহরের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হল, স্ত্রীর বংশে তার সমমানের নারীদের বাস্তবসম্মত মোহর এবং স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য এ দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে মোহর নির্ধারণ করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ত্রীকে তা পরিশোধ করে দেওয়া।

বাইহাকী (১৪৭২১) বর্ণনা করেন যে, নবী বলেছেন, خَيْرُ الصَّدَاقِ أَيْسَرَهُ “সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা”। একই হাদিস আবু দাউদ (২১১৭) বর্ণনা করেছেন এ ভাষায়- خير النكاح أيسره “সর্বোত্তম বিবাহ হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা”

আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলা হয়েছে-أيسره শব্দের অর্থ হচ্ছে- মোহরানা ও অন্যান্য খরচ কমানো, যাতে করে পুরুষের জন্য সহজসাধ্য হয়।

ইমাম আহমাদ (২৩৯৫৭) ও ইবনে হিব্বান (৪০৯৫) আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ বলেন, إِنَّ مِنْ يُمْنِ الْمَرْأَةِ : تَيْسِيرَ خِطْبَتِهَا ، وَتَيْسِيرَ صَدَاقِهَا ، وَتَيْسِيرَ رَحِمِهَا“কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভ ধারণ সহজ হওয়া।”

সুনানে তিরমিযি গ্রন্থে (১১১৪) ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, أَلَا لَا تُغَالُوا صَدُقَةَ النِّسَاءِ , فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِي الدُّنْيَا أَوْ تَقْوَى عِنْدَ اللَّهِ لَكَانَ أَوْلَاكُمْ بِهَا نَبِيُّ اللَّهِ ﷺ مَا عَلِمْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ نَكَحَ شَيْئًا مِنْ نِسَائِهِ وَلَا أَنْكَحَ شَيْئًا مِنْ بَنَاتِهِ عَلَى أَكْثَرَ مِنْ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً“সাবধান, তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দুনিয়াতে সম্মানের বিষয় হত কিংবা আল্লাহর কাছে তাকওয়া হত তাহলে তোমাদের নবী তা করতেন। আমার জানামতে, রাসূল যে নারীদেরকে বিয়ে করেছেন কিংবা তাঁর মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন তাদের কারো মোহরানা ১২ উকিয়ার বেশি ছিল না।

এক উকিয়া হচ্ছে- ৪০ দিরহাম। গ্রামের হিসেবে দিরহামের ওজন হচ্ছে- ২.৯৭৫ গ্রাম।

দুই- আপনি যদি  ৫ লাখ টাকা মোহর নির্ধারণ করেন এবং বর্তমানে আপনার কাছে না থাকলেও যদি পরবর্তীতে পরিশোধের ইচ্ছা আপনার থাকে তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে সময় নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে বিয়ের দিনই তা পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে নিবেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে এধরণের মোহরকে مهر مؤجل (মোহরে মুয়াজ্জাল) বা ‘বাকি মোহর’ বলে।

আমাদের সমাজে সাধারণত কোনো দিন-তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু এটুকু বলে দেওয়া হয় যে, এই পরিমাণ মোহরে মুয়াজ্জাল (বাকি মোহর)। আর সামাজিক প্রচলন অনুযায়ী তার অর্থ দাঁড়ায়, তা পরিশোধ করা হবে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হলে কিংবা স্বামী-স্ত্রী কারো মৃত্যু হলে। এটি একটি ভুল প্রচলন।

মনে রাখবেন, মোহর নির্ধারণের বিষয়টি নিছক কথার কথা বা ঐচ্ছিক কোনো আচার পালনের বিষয় নয়; বরং তা একটি ফরয বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী দায়িত্ব, যা পূর্ণ মনোযোগ ও বিচার-বিবেচনার দাবি রাখে। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ লেনদেন। অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। এটি বড়ই অন্যায় কথা যে, সারা জীবন উদাসীন থেকে মৃত্যুশয্যায় স্ত্রীর নিকট মাফ চাওয়া হয়, যখন পরিস্থিতির চাপে স্ত্রীরও মাফ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 5 =