মহিলাদের চুলের বিভিন্ন কাটিং এর বিধান

জিজ্ঞাসা–৩৯৩: আসসালামু আলাইকুম। এই ব্যাপারটায় মহিলারা ব্যাপকহারে অভ্যস্ত। অধিকাংশরাই না জেনে, তাই জরুরী ভিত্তিতে উত্তর দানের অনুরোধ রইলো। হযরত, বিভিন্ন ফতোয়া বা মাসলা মাসায়েলের কিতাবে মহিলাদের চুল কাটার ব্যাপারে পুরুষের সাথে সাদৃশ্যতা পায় এমনভাবে কাটার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছি এবং বিধর্মীদের অনুকরণের নিষিদ্ধতা। কিন্তু আজকাল পার্লারে মেয়েরা যেভাবে চুল কাটে যেমন সামনে ছোট ছোট করে, কিংবা ইউ কাট, ভি কাট, লেয়ার কাট এজাতীয় সকল স্টাইলে চুল কাটার ব্যাপারে শরয়ী কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা? এভাবে কাটা টা এতই ব্যাপক হয়ে গেছে যে, এটা এখন শুধু বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্যতা হিসেবে ধরা যায় না। আর মেয়েদের তো পর্দায় থেকে সাজসজ্জার অনুমতি আছে। আর এভাবে চুল কাটার দ্বারা মূলত সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে শরয়ী বিধান কী হবে?–বিনতে আব্দুল্লাহ।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

একবাস্তবতা হল, ইউ কাট, ভি কাট, লেয়ার কাট ইত্যাদি স্টাইলে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে, এসব স্টাইল মুসলিম সমাজের নারীদের মাঝে ফ্যাশন হিসেবে ব্যপকহারে অনুপ্রবেশ করেছে; এর কারণে এসব স্টাইল জায়েয হয়ে যাবে না। কেননা ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْযে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। (আবু দাউদ ৪০৩১)

অপর হাদীসে এসেছে,

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى

যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। (তিরমিযী ২৬৯৫)

আর মাথার কিছু অংশের চুল ছোট করা, যেমন সামনের চুল ছোট করা এবং অন্যগুলো রেখে দেওয়া– এটি ‘কুযা’ এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে ইবনে উমর রাযি. থেকে সাব্যস্ত হাদীসে এসেছে যে, তিনি বলেন, نهى رسول الله عن القزع রাসূলুল্লাহ্‌ ‘কুযা’ করা থেকে তথা শিশুর মাথার একাংশের চুল কামাই করে অপর অংশের চুল রেখে দিতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ৫৯২১ মুসলিম ২১২০)

তাছাড়া এধরণের এই চুল কাটার কারণে মহিলাদেরকে পুরুষের মত মনে হয়।  আর মহিলাদের পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ নাজায়েয। ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

أَنَّ النَّبِيَّ لَعَنَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ، وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ ، وَقَالَ: أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ

রাসূলুল্লাহ ওই পুরুষদের লানত করেছেন, যারা মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। এবং ওই মহিলাদের লানত করেছেন, যারা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে৷ এবং তিনি আরও বলেন, তাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও। (বুখারী ৫৮৮৫)

আর যেহেতু এভাবে চুল কাটা বেদ্বীন ও বিধর্মীদের বৈশিষ্ট্য; কোন রুচিশীল, সুষ্ঠ চরিত্রের মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়। তাই কোন মুসলামানের এ শ্রেণীর লোকেদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা উচিত নয়।

দুই- মহিলাদের চুলের ক্ষেত্রে শরীয়তের মৌলিক নীতিমালা হল : ১. মহিলারা চুল লম্বা রাখবে। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, উম্মাহাতুল মুমিনীন রাযি. চুল লম্বা রাখতেন। ২. এ পরিমাণ ছোট করবে না যে, পুরুষের চুলের মতো হয়ে যায়। হাদীস শরীফে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারিনী মহিলার প্রতি অভিসম্পাত করা হয়েছে। ৩. চুল কাটার ক্ষেত্রে বিজাতীয়দের অনুকরণ করবে না। কারণ হাদীসে বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব যে মহিলার চুল এত লম্বা যে, কিছু অংশ কাটলে পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্য হবে না তার জন্য ঐ পরিমাণ কাটা জায়েয হবে। পক্ষান্তরে যার চুল তত লম্বা নয়; বরং অল্প কাটলেই কাঁধ সমান হয়ে যাবে এবং পুরুষের বাবরী চুলের মতো দেখা যাবে তার জন্য অল্প করেও কাটার অনুমতি নেই। তবে জটিল অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চুল ছোট করা, এমনকি জরুরতবশতঃ কামানোরও অনুমতি রয়েছে। তবে সর্বাবস্থায় ফ্যাশনের অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে মহিলারা তাদের চুল খাটো করতে পারবে। (সহীহ বুখারী ২/৮৭৪; জামে তিরমিযী ১/১০৩; সহীহ মুসলিম ১/১৪৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৪৭২)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–

 

 
 চুলে রং করলে অজু-গোসলে সমস্যা হয় কি?
 মেয়েদের পায়ে মেহেদী দেয়া জায়েয কি?
 মহিলারা হক্কানী ওলামায়ে কেরামের ভিডিও দেখতে পারবে কি?
 
 পুরুষের জন্য স্বর্ণ বা রুপার আংটি ব্যবহার জায়েজ আছে কি?
 আযানের সময় মহিলাদের মাথায় কাপড় দেওয়া
 হিজাবের বৈশিষ্ট্যাবহ
 গর্ভবতী মায়ের আমল ও দোয়া
 চেহারার কি পর্দা নেই?
 নারী স্বাধীনতার ধোঁকা

��ন্তব্য

  1. আসসালামুআলাইকুম। কোনো মেয়ে যদি চুল চেছে ফেলে কিন্তু তা তার প্রয়োজনে করে, অন্যদের দেখানোর জন্য নয়, তাহলেও কি তার কারণে আল্লাহর অভিশাপ পড়বে?

    • জটিল অসুস্থতার কারণে কামানো যাবে। অন্যথায় যাবে না। কেননা, জটিল অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চুল কামানোর অনুমতি মেয়েদের জন্যও রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 3 =