জিজ্ঞাসা–৫১২: আস্সালামুআলাইকুম। আমার এক সহপাঠী এসে খুব কান্না করে এমন এক খবর বললেন, আমি কোন উত্তর দিতে পারি নাই শান্তনা ছাড়া। তার অপরাধ তিনি বিবাহিত হয়েও তার স্ত্রীর বোনের মেয়ের সাথে শারীরীক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। উল্লেখ্য তিনি নামাজী ব্যক্তি। এখন তার কান্না আর আল্লাহর ভয় এই যে এতো দিনের আমল আর একর্মের জন্য কিভাবে আল্লাহর ক্ষমা পাবে। তার মানসিক অবস্থা ভালো না। সারাক্ষণ শুধু মন খারাপ করে আল্লাহকে ডাকছে। আর ঐ মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তার কি করা উচিত?–মো মেহেদী হাসান।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক: আপনার সহপাঠীকে বলুন, তিনি যেন নিষ্কলুষভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করেন এবং এই কাজে পুনরায় জড়িয়ে পড়া থেকে পরিপূর্ণ সতর্ক থাকেন। এছাড়া তিনি যেন বেশি বেশি নেক কাজ করেন। কারণ নেককাজ বদকাজকে দূরীভূত করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًارَّحِيمًا তবে যে তাওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল ফুরকান ৭০)
দুই: তাকে নিজের স্ত্রীর সাথে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখতে বলুন। কেননা, সাধারণত এজাতীয় পাপের শিকার হন তারাই যাদের স্ত্রী নেই কিংবা স্ত্রী থাকলেও জৈবিকচাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে স্ত্রী পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে না। পবিত্র কুরআনে স্ত্রীর ‘উদ্দেশ্য’ বলা হয়েছে-لِتَسْكُنُوْآ اِلَيْهَا ‘যাতে তাদের কাছে স্বস্তি লাভ কর।’
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এরূপ অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকলে স্বামীর দৃষ্টি পরনারীর প্রতি যাবে না।
তিন: তাকে দৃষ্টি সংযত রাখার তাগিদ দিন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- غُضُّوْا اَبْصَارَكمُ وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ তোমরা দৃষ্টি অবনত রাখো এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত কর। (আলজাওয়াবুলকাফী, পৃষ্ঠা : ২০৪)
হাফেজ ইবনুল কাইয়িম রহ. লিখেছেন, দৃষ্টি ব্যভিচারের পিয়ন ও রাহবার হয়ে থাকে। দৃষ্টির সংরক্ষণ মূলতঃ লজ্জাস্থান ও যৌনচাহিদা পূরণের অবাধ সুযোগের সংরক্ষণ হয়ে থাকে। যে দৃষ্টিকে অবাধে বিচরণ করতে দিয়েছে সে নিজেকে ধ্বংসের মাঝে ফেলে দিয়েছে। মানুষ যেসব আপদে নিমজ্জিত হয় এর মূলভিত্তি হল দৃষ্টি। (আলজাওয়াবুলকাফী, পৃষ্ঠা-২০৪)
চার: তাকে আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করার উপদেশ দিন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা তার জন্য সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)
পাঁচ: পরিশেষে আপনি তাকে এও ব্লুন যে, তিনি যেন আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ না হন। দেখুন, আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন,
قُلْ يَاعِبَادِي الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”।(সূরা যুমার ৫৩)
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন–জিজ্ঞাসা নং–৫৭
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী