জিজ্ঞাসা–৫৫২: শুনেছি, ইসমে আ’যম পড়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না; বরং আবশ্যই কবুল করেন। মহান আল্লাহর ইসমে আ’যম সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানতে চাই।–এম মনজুরুল হাসান।
জবাব:
এক. সাধারণত আল্লাহর পবিত্র নামকেই ‘ইসমে আ’যম (মহান নাম) বলা হয়। যার মাধ্যমে দোয়া করা হলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তবে ইসমে আ’যম আল্লাহর নির্দিষ্ট কোনো নাম কিনা; এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস, বর্ণনা ও ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য -মন্তব্য পাওয়া যায়। যেমন,
১. আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উপস্থিতিতে নিম্নোক্ত শব্দমালার মাধ্যমে দোয়া করেছিলেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لك الْمَنَّانُ بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনার নিকট এই অসীলায় চাই যে, (আমি বলি) কেবল আপনারই প্ৰশংসা, আপনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, আপনি এক, আপনার কোন শরীক নেই, অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী হে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে মর্যাদা ও সম্মান দানের অধিকারী। হে চিরঞ্জীব ও সর্বনিয়ন্তা।
ওই সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন- لَقَدْ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْعَظِيمِ الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى ‘এই লোক মহান আল্লাহর ওই ইসমে আ’যমের মাধ্যমে দোয়া করেছে যার মাধ্যমে দোয়া করা হলে আল্লাহ কবুল করেন এবং প্রার্থনা করা হলে তিনি তা দান করেন। (আবু দাউদ ১৪৯৫ তিরমিযী ৩৫৪৪ নাসাঈ ১৩০০)
২. আবু উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اسْمُ اللَّهِ الأَعظَمُ فِي سُوَرٍ مِنَ القُرآنِ ثَلَاثٍ : فِي ” البَقَرَةِ وَ آلِ عِمرَانَ وَ طَهَ
আল্লাহর ইসমে আ’যম কোরআনের তিনটি সূরা- বাকারা, আল ইমরান ও ত্বহার মধ্যে রয়েছে। (ইবন মাজাহ ৩৮৫৬)
৩. বুরাইদাহ ইবন হুসাইব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক সাহাবীকে বলতে শুনেছেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট চাচ্ছি। নিশ্চয় আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি একক, অমুখাপেক্ষী যিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তার থেকে কেউ জন্ম নেন নি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
ওই সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন- لَقَدْ سَأَلْتَ اللَّهَ بِالِاسْمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ তুমি আল্লাহর ওই নাম নিয়ে দোয়া করেছ, যার মাধ্যমে প্রার্থনা করা হলে তিনি তা দান করেন এবং দোয়া করা হলে কবুল করেন। (আবু দাউদ ১৪৯৩ তিরমিযী ৩৪৭৫ ইবন মাজাহ ৩৮৫৭)
৪. আসমা বিনত ইয়াযিদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর ইসমে আ’যম নিম্নোক্ত দু’টি আয়াতে রয়েছে-
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ এবং আল ইমরানের শুরুর আয়াত الم . اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ (আবু দাউদ ১৪৯৬ তিরমিযী ৩৪৭৮ ইবন মাজাহ ৩৮৫৫)
৫. কোনো কোনো সাহাবী থেকে থেকে বর্ণিত আছে, الْحَيُّ এবং الْقَيُّومُ আল্লাহর ইসমে আ’যম। ইমাম রাযী রহ. ও আল্লামা নববী রহ. এ মতকেই গ্রহণ করেছেন। (ফাতাওয়া উসমানী ১/২৬৪)
৬. ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে শুনেছি, আল্লাহ তাআলার ইসমে আ’যম হল, اللَّه (আল্লাহ)। (আত-তাকরীর ওয়াত-তাহবীর ১/৫) কেননা, এটি তাঁর সত্তাগত নাম। তাছাড়া কোরআন মজিদে এই নামটিই ২৬৯৭ বার এসেছে। এত বেশি তাঁর অন্য নাম আসে নি।
৭. আল্লামা জাযারী রহ. বলেছেন, আমার মতে ইসমে আ’যম হল, لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ তবে কারো কারো মতে رب শব্দটি এবং অনেকের মতে اللَّه শব্দটি ইসমে আ’যম। (প্রাগুক্ত)
৮. কেউ কেউ কলেছেন, استأثر الله تعالى بعلم الاسم الأعظم ولم يطلع عليه أحداً من خلقه ইসমে আ’যম একটি রহস্য। আল্লাহ কাউকে জানান নাই। (ফাতহুল বারী ১১/২২৪)
দুই. তবে এক্ষেত্রে মুহাক্কিক আলেমগণের বক্তব্য হলো, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তা’আলার সকল নামই আ’যীম তথা মহিমান্বিত। কোনো নামের উপর কোনো নামের আলাদা ফযিলত-মর্যাদা নেই। সুতরাং ইসমে-আ’যম তথা আল্লাহ তা’আলার সকল নামের মধ্যে সবচে সম্মানিত কোনটি; এরূপ কোনো বিষয় নির্দিষ্টভাবে নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত নয়। যে সব নামকে হাদীস শরীফে ‘ইসমে-আ’যম’ বলা হয়েছে- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এই নামগুলো আল্লাহ তা’আলার আ’যীম (মহান) নামের মধ্য থেকে। বিশেষভাবে এই নামগুলোর মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়। এ কারণেই ইসমে-আ’যম সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। সুতরাং নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে কোনো একটি নামকে ‘ইসমে-আ’যম’ হিসাবে আখ্যা দেয়া সুকঠিন বৈ কি! (ফাতাওয়া উসমানী ১/২৬৪, ২৬৫)
ফাতাওয়াল লাজনাতিদ্দায়িমা (২/ ৪১৩)-তে এসেছে,
قال الله تعالى: (وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ) ، وقال النبي ﷺ : (إن لله تسعة وتسعين اسما من أحصاها دخل الجنة) ، ومنها الاسم الأعظم الذي إذا دعي به أجاب، وإذا سئل به أعطى، فأسماء الله جل وعلا لا يعلم عددها إلا هو، وكلها حسنى
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,আল্লাহ্ তাআলার নিরানববইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্থ করে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এ নামগুলোর মধ্যে ইসমে আ’যম রয়েছে, যার মাধ্যমে দোয়া করা হলে আল্লাহ কবুল করেন এবং প্রার্থনা করা হলে তিনি তা দান করেন। আল্লাহর নামগুলোর সংখ্যা একমাত্র তিনি জানেন। আর তাঁর প্রতিটি নাম উত্তম।
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন- ☞ মাজারে গিয়ে মাথা নত করা যাবে কিনা? ☞ পীর-ওলি ও মাজারের নামে মানতকৃত পশু খাওয়া যাবে কি? ☞ বিধর্মীর ঘরে জন্ম নেয়া মানে কি আল্লাহ্র রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া? ☞ অমুসলিম দুনিয়া ও আখেরাতে ভাল কাজের প্রতিদান পাবে কিনা? ☞ মনের সাহস বাড়ানোর আমল ☞ ঋণ পরিশোধের দোয়া ☞ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার দোয়া ও আমল ☞ গর্ভবতী মায়ের আমল ও দোয়া