সব নারীই কি নিজের স্বামীর হাড় থেকে সৃষ্ট?

জিজ্ঞাসা–৫৮৬: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। হুযুর, সব নারীই কি তার স্বামীর হাড় থেকে সৃষ্ট?–বিনতে মুমিনুর রহমান।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

সব নারী নিজের স্বামীর হাড় থেকে সৃষ্ট তা নয়। বরং কোরআন-সুন্নাহ ও সালফে সালিহীনের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, সকল মানুষের উৎস হচ্ছে, আদম আ., তাঁকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। তারপর তাঁর থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর স্ত্রী হাওয়া আ.-কে। তারপর তাঁদের থেকে সৃষ্টি করেছেন গোটা মানবজাতিকে। এর দলিল হল,

১- আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। (সূরা নিসা ১)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইবন কাসীর রহ. বলেন,

من نفس واحدة ، وهي آدم ، عليه السلام ( وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا ) وهي حواء عليها السلام ، خلقت من ضِلعه الأيسر من خلفه وهو نائم ، فاستيقظ فرآها فأعجبته ، فأنس إليها وأنست إليه وروى ابن أبي حاتم حدثنا أبي، حدثنا محمد بن مقاتل، حدثنا وكيع ، عن أبي هلال ، عن قتادة عن ابن عباس قال : خُلقَت المرأة من الرجل

‘এক ব্যক্তি থেকে’ তিনি হলেন আদম আ.। ‘তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন’ তিনি হলেন হাওয়া আ.। যাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তার পরে তার বাম পাঁজরের হাড় থেকে। তখন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। জাগ্রত হয়ে যখন তাকে দেখলেন, তখন বিস্মিত হলেন এবং তার প্রতি প্রীত হলেন। তিনিও আদম আ.-এর প্রতি প্রীত হলেন। ইবনে হাতিম তার পিতা থেকে, তিনি মুহাম্মাদ ইবন মুকাতিল থেকে, তিনি অয়াকী’ থেকে, তিনি আবু হিলাল থেকে, তিনি কাতাদাহ থেকে, তিনি ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, (প্রথম) নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষ থেকে।  (তাফসির ইবন কাসীর ২/২০৬)

২- অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,

خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا

তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন। (যুমার ৬)
ইমাম তাবারী রহ. বলেন, এর তাফসিরে লিখেন,
يقول تعالى ذكره : ( خَلَقَكُمْ ) أيها الناس( مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ) يعني من آدم ( ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا ) يقول : ثم جعل من آدم زوجه حواء ، وذلك أن الله خلقها من ضِلَع من أضلاعه
আল্লাহ বলেন, ‘সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে’ হে মানব সকল! ‘একই ব্যক্তি থেকে’ অর্থাৎ, আদম আ. থেকে। ‘অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন’ অর্থাৎ, অতঃপর আদম আ. থেকে তার স্ত্রী হাওয়া আ.-কে সৃষ্টি করেছেন। আর তা এভাবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো থেকে একটি হাড় দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। (তাফসির তাবারী ২২৫৪, ৭/৫১৫)
৩- আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ
তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও, কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের মধ্যে উপরের হাড্ডি সবচেয়ে বেশী বাঁকা। যদি তা সোজা করতে চাও ভেঙ্গে ফেলবে, ছেড়ে দিলেও তার বক্রতা যাবে না। অতএব নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও। (বুখারী ৩৩৩১ মুসলিম ১৪৬৮)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেন,
قَوْلُهُ : ( خُلِقَتْ مِنْ ضِلَع ) أَخْرَجَهُ اِبْن إِسْحَاق وَزَادَ : ( الْيُسْرَى مِنْ قَبْل أَنْ يَدْخُل الْجَنَّة ، وَجُعِلَ مَكَانه لَحْم )
‘পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ ইবন ইসহাক আরো বর্ণনা করেছেন, বাম পাঁজরের হাড় থেকে, জান্নাতে যাওয়ার আগে এবং সেখানে গোশত দ্বারা ভরে দেয়া হয়েছে। (ফাতহুল বারী ৬/৩৬৮)
ইবনুল আরাবী রহ. বলেন,
فقد رُوِيَ: أَنَّ آدَمَ نَامَ ، فَانْتُزِعَ ضِلَعٌ مِنْ أَضْلاَعِهِ الْيُسْرَى ، فَخُلِقَتْ مِنْهُ حَوَّاءُ ، فَلَمَّا أَفَاقَ ، وَجَدَهَا إلَى جَانِبِهِ ، فَلَمْ يَنْفرْ وَاسْتَأْنَسَ ؛ لأَنَّهَا جُزْءٌ مِنْهُ . فلذلك صَارَتِ الأضلاع الْيُسْرَى تَنْقُصُ عن الْيُمْنَى واحدًا
বর্ণিত আছে, আদম আ. ঘুমিয়ে ছিলেন। তখন তার বাম পাঁজরের একটি হাড় খুলে নেয়া হল। তারপর তা দ্বারা হাওয়া আ.-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন তার হুঁশ আসল তখন তাকে তার একপাশে পেলেন। তাকে দেখে তিনি বিব্রত না হয়ে প্রীত হয়েছিলেন। কেননা, তিনি তো তাঁরই অংশ। এজন্য ডান পাঁজরের তুলনায় বাম পাঁজরে একটি হাড় কম আছে। (আ’রিযাতুল আহওয়াযী ৬/৩৬৮)
ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,
 …منه ما خلق من غير أب ولا أم ، وهو أبو النوع الإنساني ، ومنه ما خلق من ذكر بلا أنثى ، وهي أمهم التي خلقت من ضلع آدم ، ومنه ما خلق من أنثى بلا ذكر ، وهو المسيح ابن مريم ، ومنه ما خلق من ذكر وأنثى وهو سائر النوع الإنساني ، فيرى عباده آياته ويتعرف إليهم بآلائه وقدرته وأنه إذا أراد شيئا أن يقول له كن فيكون
আল্লাহ তাআলার অন্যতম বিস্ময়কর কুদরত এই যে, তিনি বাবা ও মা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন মানবকুলের পিতাকে,  নারী ছাড়া শুধু পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকুলের মাতাকে, পুরুষ ছাড়া শুধু নারী থেকে সৃষ্টি করেছেন ঈসা ইবন মারইয়াম -.আকে আর পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছেন গোটা মানবকুলকে। বান্দা এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিদর্শন দেখতে পায় এবং তাঁর মারেফত ও কুদরত খুঁজে পায়। আর তিনি তো ‘হয়ে যাও’ বললেও হয়ে যায়। (মিফতাহু দারিস সাআ’দাহ ১/২৪২)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন-
স্বামী যদি স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার হুকুম কী?
স্বামীর প্রতি অবিশ্বাস থাকায় মানসিক অশান্তিতে আছি; কী করব?
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর করণীয়
স্বামী স্ত্রীর মাঝে আদর্শিক দ্বন্দ্ব; তাহলে কি তালাকের উপদেশ দিব?
সংসার সুখের হয় দু’জনের গুণে
আমার স্বামী ভাল মানুষ; কিন্তু নামাজ পড়ে না; কী করব?
স্বামী-স্ত্রী কে কোন পাশে ঘুমাবে?
‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত’ কথাটা সত্য কিনা?
মোহর: স্ত্রী মাফ করে দিলে মাফ হয় কিনা?
স্ত্রীর ঋতুকালীন স্বামী কোনো উপায়ে চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি?
রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে বস্ত্রহীন হয়ে কি ঘুমানো যায়?
স্ত্রীকে বোন,স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করা যাবে কি?
সহবাসের সঠিক নিয়ম এবং স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে তাকানোর হুকুম
ইসলামে বিয়ের বয়স কত?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 3 =