জিজ্ঞাসা–৬৯৫: শবে মেরাজ উপলক্ষে মিলাদ কিয়াম করা কী জায়েয?– আহমদ আলী।
জবাব:
এক. নিঃসন্দেহে ইসরা ও মেরাজ রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর রিসালাতের সত্যতার পক্ষে অন্যতম মুজিজা এবং আল্লাহর কুদরতের মহান নিদর্শন। আল্লাহ বলেন,
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সূরা বনী ইসরাইল ১)
ইমাম তাহাবি রহ. বলেন,
وَالْمِعْرَاجُ حَقٌّ ، وَقَدْ أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ ﷺوَعُرِجَ بِشَخْصِهِ فِي الْيَقَظَةِ ، إِلَى السَّمَاءِ . ثُمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الْعُلَا وَأَكْرَمَهُ اللَّهُ بِمَا شَاءَ ، وَأَوْحَى إِلَيْهِ مَا أَوْحَى ، مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى . فَصَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْآخِرَةِ وَالْأُولَى
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর মেরাজ সত্য, তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় আসমানের দিকে মেরাজ করানো হয়েছে। তারপর তাঁকে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা অনুপাতে ঊর্ধ্বজগতে নেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর কাছে অহি পাঠিয়েছেন। যা কিছু তিনি সেখানে দেখেছেন তাঁর অন্তর মিথ্যা বলে নি। আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর দুনিয়া ও আখেরাতে রহমত নাজিল করুন। (শরহুত তাহাবিয়া ১/২২৩, মাকতাবা দারুস সালাম)
দুই. তবে যে রাত্রিতে মেরাজ সংগঠিত হয়েছে সে রাত্রিকে সুনির্দিষ্ট করে কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি; না রজব মাসের ব্যাপারে; আর না অন্য কোনো মাসের ব্যাপারে। সে রাত্রিকে নির্দিষ্ট করে যে সব বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে সে বর্ণনাগুলোর কোনোটি হাদিস বিশারদদের নিকট নবী ﷺ থেকে সাব্যস্ত নয়। সে রাত্রিটিকে সুনির্দিষ্টকরণ থেকে মানুষকে ভুলিয়ে দেয়ার মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার মহান কোন হেকমত নিহিত রয়েছে। যেমন শায়খ আবু উমামা ইবন আন্নাক্কাশ রহ. বলেন,
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, শবে মেরাজ উদযাপন করা শরিয়তের বিধান হত তাহলে নবী ﷺ উম্মতকে সেটা কথা কিংবা কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে যেতেন। তারপর সাহাবায়ে কেরাম পরবর্তী উম্মতের কাছে সেটা বর্ণনা করতেন। যদি এ দিবসটি উদযাপন করা শরিয়তসম্মত হত তাহলে তাঁরা সবার আগে সেটা উদযাপনে এগিয়ে যেতেন। সুতরাং যেহেতু নবী ﷺ এবং তাঁর সাহাবাদের থেকে এমন কিছু আসে নি অতএব বুঝতে হবে এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ও এ রাতটি উদযাপন করা বেদআত বৈ কিছু নয়।
আর বেদআত সম্পর্কে নবী ﷺ স্পষ্টভাবে বলেছেন, مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে আমাদের দ্বীনে যার অনুমোদন নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম)
বাকি রইল, মিলাদ-কিয়াম প্রসঙ্গে। এমনিতে এটি বেদআত। যে সম্পর্কে আমরা আলহামদুলিল্লাহ ইতিপূর্বে জিজ্ঞাসা নং–১৪৩ এ আলোচনা করেছি। সুতরাং মেরাজ পালন করতে গিয়ে মিলাদ কিয়াম করা মানে একাধিক বেদআত পালন করা ছাড়া আর কিছু নয়।
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী