জিজ্ঞাসা–৮৪১: আসসালামুয়ালাইকুম। আমি অভিভাবককে না জানিয়ে একটা ছেলেকে বিয়ে করেছি। আমাদের বর্তমান সময়ে ছেলে মেয়ের পড়াশোনা শেষ না হলে বিয়ে দেয়া হয় না। আমার মনে হয়েছে, সে সময় আমি তাদের বোঝাতে পারতাম না। আমার ২ টি প্রশ্ন– ১.আমি এবং সে ছেলেটা কোন চাকরি করি না। আমার বাবা মার থেকে তার বাবার চাকরী, আয়, সমাজে অবস্থান সবি ভাল এবং ছেলেটির চরিত্র আলহামদুলিল্লাহ ভালো এবং ইসলাম মানার চেষ্টা করে। সে কি আমার কুফুর মধ্যে পড়ে? আর পরের প্রশ্নটি হল আমাদের বিয়েটা এভাবে হয়েছিল যে, আমি একটি কাগজে আমার বাবা মার নাম আর বর্ণনা দিয়ে লিখি যে, আমি তাকে স্বামী হিসেবে কবুল করলাম এমন লেখা ছিল তার নিচে সাইন এর জায়গা ছিল। তার ক্ষেত্রেও এমন পরিচয় আর সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে কবুল করছে এমন লেখা ছিল তারপর সাইন এর জায়গা। আমি তারপর সাইন করে আমাদের ছোট ভাই ১৩ বছর ছিল তখন। (একজন ছেলে দ্বারা জিজ্ঞেস করিয়েছিলাম সে বলেছে যে, ওর নিম্নদেশে লোম ছিল তখন) ওর দ্বারা পাত্রের কাছে (প্রায় ১ কিমি দুরে ছিলো আমার বাসা থেকে) পাঠাই। আমার ভাই সেখানে গিয়ে কাগজটা দেয় এবং ছেলেটি আমার ভাই এবং আর একজন স্বাক্ষীর সামনে মনে মনে পড়ে সাইন করে এবং অপর সাক্ষী ও সাইন করার সময় তা দেখেছে। এভাবে বিয়ে কি বৈধ?–Nishat
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
আপনাদের উক্ত বিবাহ শুদ্ধ হয় নি। কেননা, ইজাব ও কবুল হচ্ছে, বিয়ের রুকন। যা ছাড়া বিবাহ সংঘটিত হয় না। আর মুখে ইজাব কবুল না করে শুধু কাবিননামায় সাইন করা দ্বারা ইজাব-কবুল হয় না। সুতরাং এখনো আপনারা স্বামী-স্ত্রী হন নি। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া-২/৪৮, জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল-১/২৮৭-২৮৮)
অনুরূপভাবে বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হয়। কমপক্ষে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া বিয়ে করলে বিয়ে হয় না। যা আপনাদের ছিল না। সুতরাং শরিয়তের দৃষ্টিতে আপনাদের বিয়ে সম্পন্ন হয় নি।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,الْبَغَايَا اللاَّتِي يُنْكِحْنَ أَنْفُسَهُنَّ بِغَيْرِ بَيِّنَةٍ তারা হলো ব্যভিচারিনী যারা সাক্ষী ছাড়া নিজেরাই নিজেদের বিবাহ করে নেয়। (তিরমিযি ১১০৩)
ইমাম তিরমযি রহ. বলেন,
وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ وَمَنْ بَعْدَهُمْ مِنَ التَّابِعِينَ وَغَيْرِهِمْ قَالُوا لا نِكَاحَ إِلا بِشُهُودٍ
‘সাহাবী এবং তাঁদের পরবর্তী যুগের তাবিঈ ও অন্যান্য আলিমগণের আমল এই হাদীস অনুসারে রয়েছে। তাঁরা বলেন, সাক্ষী ছাড়া বিবাহ হয় না।’
প্রকাশ থাকে যে, ব্যভিচার জঘন্যতম গুনাহের কাজ। বড় মাপের কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِیْلًا
আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। সেটা অশ্লীলতা ও নিকৃষ্ট পন্থা। (সূরা বনী ইসরাইল ৩০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ
কোন ব্যক্তি মুমিন থাকা অবস্থায় ব্যভিচার করতে পারে না। (সহীহ মুসলিম ৫৭)
সুতরাং আপনাদের উভয়ের কর্তব্য হল, খাঁটি দিলে তাওবা ইস্তিগফার করা এবং অভিবাবকের সম্মতিতে কমপক্ষে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে শুদ্ধ করে নেয়া।
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী