মায়ের সঙ্গে অন্যায় আচরণের কারণে বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেয়া যাবে কি?

জিজ্ঞাসা–৯৬০: আমার বড় ভাই আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে এবং কথা বলে না তাই আমি আমার ভাইর সাথে কথা বলি না, আমি কি ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায় করছি?–মোঃ রাজু আহমেদ।

জবাব:

এক- বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচারণ করা ওয়াজিব। কেননা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বহু জায়গায় এর নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা এক আয়াতে বলেছেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। (সূরা লোকমান ১৪)

দুই- সুতরাং আপনার বড় ভাই মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে–যেমনটি আপনি বলেছেন–নিঃসন্দেহে একটি মহা অন্যায় করছেন। এর দ্বারা তার কবিরা গুনাহ হচ্ছে। আর ভাই হিসেবে ভ্রাতৃত্বের প্রথম দাবি হল, আপনি তাকে উক্ত কবিরা গুনাহ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। ইসলামে মায়ের মর্যাদা কী, মায়ের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করলে দুনিয়া ও আখেরাতে তার কেমন ক্ষতি হতে পারে ইত্যাদি বিষয়গুলো তার সামনে ভদ্রোচিতভাবে তুলে ধরবেন। যাতে করে আপনি আল্লাহর কাছে এ বিষয়ের জবাবদিহিতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

আপনার কথাগুলো আপনার ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উপায়গুলো যেন বৈচিত্র্যময় হয়। যেমন, সুযোগ বুঝে কখনও তাকে তার প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন, তাকে এবিষয়ের উপর লিখিত সহজ কোনো কিতাব হাদিয়া দিতে পারেন, তাকে কোনো আলেমের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন যে, সে যেমন আচরণ নিজের মা-বাবার সঙ্গে করবে তেমন আচরণ একদিন তার সন্তানরাও তার সঙ্গে করবে।

তিন- উক্ত প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ নেয়ার পরেও যদি সে তার বিশ্রি আচরণ থেকে ফিরে না আসে তাহলে আপনি আপনার ঈমানি-বিবেককে কাজে লাগাবেন এভাবে যে, যদি আপনার প্রবল ধারণা এটা হয় যে, তার সঙ্গে কথা না বলা তার জন্য উপকারী হবে, এতে সে নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবং সে উক্ত গুনাহ থেকে ফিরে আসবে তাহলে তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারেন। আর যদি মনে করেন, এটা তার জন্য উপকারী হবে না; বরং আপনার কথা বলা বন্ধ করার কারণে তার অন্যায় আরো বেড়ে যেতে পারে তাহলে আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল, কথা বলা বন্ধ না করে তাকে অন্য কোনো বৈধ পন্থায় প্রভাবিত করার চেষ্টা করুন।

ইবন রজব হাম্বলি রহ. বলেন,

وكل هذا في التقاطع للأمور الدنيوية ، فأما لأجل الدين : فتجوز الزيادة على الثلاثة

আর (হাদিসে যে বলা হয়েছে, কোনো মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা জায়েয নয় ইত্যাদি)–এ সকল নিষেধ দুনিয়াবি উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে। দীনি কোনো উদ্দেশ্য থাকলে তখন তিন দিন ছাড়িয়ে যাওয়া জায়েয। (জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম ৩৩১)

চার- সর্বোপরি আপনি আপনার ভাইয়ের হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে কখনও ভুলবেন না। রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

مَنْ دَعَا لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ : آمِينَ ، وَلَكَ بِمِثْلٍ

মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে দোয়াকারীর মাথার কাছে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা থাকে। যখনই তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা তার দোয়া শুনে আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তুমি যে কল্যাণের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ অনুরূপ কল্যাণ তোমাকেও দান করুন। (মুসলিম ২৭৩২)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − five =