পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে নারীর চাকরি করা কি জায়েয?

জিজ্ঞাসা–১২৬৭: আমার মা বয়স ৫০ বছর। প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করেন যেখানে পুরুষ সহকর্মী আছে। উনার কি পর্দা করে চাকরি করা জায়েজ হবে?–ফারহানা।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক- নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে কাজ করতে গেলে পর্দাহীনতা, পারস্পরিক সহাবস্থান, অন্তরের আকর্ষণসহ সমূহ ফেতনার আশঙ্কা প্রবল থাকার কারণে ওলামায়ে কেরাম এজাতীয় পরিবেশে কাজ করাকে নাজায়েয বলেছেন। আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতওয়া সংকলন ফাতাওয়াতুল লাজনাতিতদ্দায়িমা (১২/১৫৬)-তে এসেছে,

الاختلاط بين الرجال والنساء في المدارس أو غيرها من المنكرات العظيمة ، والمفاسد الكبيرة في الدين والدنيا ، فلا يجوز للمرأة أن تدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও অন্যান্য স্থানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ঘটলে দীন ও দুনিয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও পাপাচার সংঘটিত হবে। সুতরাং নারীর জন্য জায়েয নয় নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা কিংবা চাকুরি করা। আর অভিবাবকের জন্য জায়েয নয় তাকে এর অনুমতি দেয়া।

দুই- প্রিয় বোন, সুতরাং আপনার মা যদি শিক্ষকতা করতে চান তাহলে তাকে এমন পরিবেশ গ্রহণ করতে বলুন, যেখানে মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা আছে। অন্যথায় এ চাকরি ছেড়ে দিতে বলুন। কারণ, পার্থিব লাভালাভ অর্জনের চাইতে দীনদারি রক্ষা করার গুরুত্ব অবশ্যই বেশি। যদি তিনি এমনটি করতে পারেন তাহলে আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا . وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। (সূরা তালাক ২,৩)

আমরা এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা ইতিপূর্বে জিজ্ঞাসা নং–৫০৮-এ করেছি।

তিন- আর যদি আপনার মা উক্ত মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা করতেই চান কিংবা এ ছাড়া যদি আপনাদের প্রয়োজন পূরণের ফেতনামুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে তাহলে আপনার মায়ের প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,

১- তিনি উক্ত পরিবেশে আল্লাহ তাআলাকে যথাসাধ্য ভয় করে চলবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)

২- পর্দা পালন, নেকাব পরিধান, হাত মোজা পরিধান, নির্জনবাস না ঘটা, ছেলেদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা-সহ ইত্যকার শরিয়তের যাবতীয় বিধান মেনে চলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন।

৩- পরপুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হল, কণ্ঠস্বর কঠোর রাখা, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে না বলাl কেননা আল্লাহ তালা বলেন,

فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الََّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلا مَعْرُوفًا

তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সুরা আহযাব৩২)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে আছে, আয়েশা রাযি. এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীগণ আসলে, তিনি কণ্ঠ বিকৃত করে কথা বলতেন যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয়। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 4 =