কোরআন শিখে ভুলে যাওয়ার পরিণাম

জিজ্ঞাসা–১৩৩৬: কোরআন পড়া কেউ ভুলে গেলে তার কী হবে??–মোস্তাফিজুর রহমান।

জবাব:

এক: নিঃসন্দেহে কোরআন ভুলে যাওয়া গর্হিত কাজ। তাই রাসূলুল্লাহ্‌ বহু হাদিসে ভুলে যাওয়ার আশংকা রোধ করার জন্য নিয়মিত তেলাওয়াত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। যেমন, এক হাদিসে তিনি বলেছেন,

مَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهْوَ حَافِظٌ لَهُ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَمَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهْوَ يَتَعَاهَدُهُ وَهْوَ عَلَيْهِ شَدِيدٌ، فَلَهُ أَجْرَانِ

কোরআনের তেলাওয়াতকারী হাফেজ লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মত। অতি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি বারবার কোরআন তেলাওয়াত করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। (বুখারী ৪৫৭৩)

দুই: কোরআন ভুলে গেলে ‘আমি ভুলে গেছি’ বলা উচিত নয়। বরং বলতে হয়, ‘আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে’। কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ ‌ বলেছেন,

‏ بِئْسَمَا لأَحَدِهِمْ يَقُولُ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ بَلْ هُوَ نُسِّيَ اسْتَذْكِرُوا الْقُرْآنَ فَلَهُوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ بِعُقُلِهَا

যদি কেউ এভাবে বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি তাহলে তা তার জন্য খুবই খারাপ। বরং তাকে তো ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা কোরআনকে স্মরণ রাখ। কারণ কোরআন মানুষের হৃদয় থেকে পা বাঁধা পলায়নপর চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও অধিক পলায়নপর। ছাড়া পেলেই পালিয়ে যায় অর্থাৎ স্মরণ রাখার চেষ্টা না করলেই ভুলে যায়। (মুসলিম ১৭২৬)

তিন: কোরআন ভুলে যাওয়ার পরিণাম কী, এব্যপারে ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, فإن نسيان القرآن من الذنوب কোরআন ভুলে যাওয়া গুনাহ। (মাজমু’উল ফাতাওয়া ১৩/৪২৩)

শায়খ জাকারিয়া আলআনসারি রহ. বলেন, অবহেলা ও অলসতার কারণে কোরআন ভুলে যাওয়া কবিরা গুনাহ। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ ‌ বলেছেন,

عُرِضَتْ عَلَىَّ ذُنُوبُ أُمَّتِي فَلَمْ أَرَ ذَنْبًا أَعْظَمَ مِنْ سُورَةٍ مِنَ الْقُرْآنِ أَوْ آيَةٍ أُوتِيَهَا رَجُلٌ ثُمَّ نَسِيَهَا

আমার উম্মাতের গুনাহসমূহ আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কোরআনের কোন সূরাহ বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আর দেখি নি। (আবু দাউদ ৪৬১ তিরমিযী ১৯৭৬ ইবনু খুযাইমাহ ১৯১৬)

অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ ‌ বলেছেন,

مَا من امْرِئٍ يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ ثُمَّ يَنْسَاهُ إِلَّا لَقِىَ اللّٰهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَجْذَمَ

যে ব্যক্তি কোরআন শিখে ভুলে গিয়েছে, সে কিয়ামাতের দিন অঙ্গহানি অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে। (আবু দাউদ ১৪৭৪ মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ ১০/৪৭৮)

সাহাবী আবূ ‘আলিয়্যাহ্ রাযি. বলেন,

كنا نعد من أعظم الذنوب أن يتعلم الرجل القرآن ثم ينام عنه حتى ينساه

আমরা সবচাইতে বড় গুনাহ বলে আখ্যায়িত করতাম কোন ব্যক্তির কোরআন শিক্ষা গ্রহণের পর অবহেলাবশত তা ভুলে গেলে। (ফাতহুল বারী ১১/২৮৫)

কারো কারো মতে, এটি এমন একটি মুসিবত যা বান্দার অন্তর ও দ্বীনদারিকে আক্রান্ত করে। এর ফলে বান্দার কোন কোন আমলের উপর আল্লাহর শাস্তি নামতে পারে। যদিও এটি কবিরা গুনাহ নয় বা পাপ নয়। (প্রাগুক্ত ৯/৮৬) কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ

তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সুরা শূরা ৩০)

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − five =