ব্যভিচার করার পর তাওবা

জিজ্ঞাসা–১৩৫৮: আমি প্রেম করেছি এবং তার সাথে মেলামেশা ও করেছি। এখন ভুল যেহেতু করেই ফেলেছি ইসলামের শরিয়ত মোতাবেক আমাদের কী করা উচিৎ? সঠিক উপদেশ চাই আপনাদের কাছ থেকে। দয়া করে আমাকে সাহায্য করবেন।–ইচ্ছাকৃতভাবে নাম প্রকাশ করা হয় নি।

জবাব: আপনাদের উভয়ের প্রধান কাজ হল তাওবা করা। দেখুন, আল্লাহ তাআলা ব্যভিচারীর পরকালীন শাস্তির ওয়াদার কথা উল্লেখের পর বলেন,

إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًارَّحِيمًا
তবে যে তাওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আল ফুরকান ৭০)

দুই. আর তাওবার মূল হল, লজ্জিত হওয়া। এমনকি সহিহ বুখারীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এসেছে, মাশায়েখগণ এও বলেছেন, يَكْفِي فِي التَّوْبَةِ تَحَقُّقُ النَّدَمِ লজ্জিত হওয়াটা পাওয়া গেলেই চলবে, তাওবা হয়ে যাবে। হাদিসেও আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, النَّدَمُ تَوْبَةٌ লজ্জিত হওয়াটাই তাওবা। (সহিহ ইবন হিব্বান ২/৩৭৯)

সুতরাং আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা এবং তাওবা করেছেন; এটা বুঝানোর জন্য অধিকহারে ইস্তেফার করুন। ভবিষ্যতে আর এজাতীয় পাপকর্মে লিপ্ত হবেন না বলে দৃঢ় সংকল্প করুন। এই কাজে পুনরায় জড়িয়ে পড়া থেকে পরিপূর্ণ সতর্ক থাকুন। নেক কাজের প্রতি মনোযোগী হোন এবং তাওবা করার সময় আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা রাখুন।

তিন. আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

চার. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং  বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।

পাঁচ. অবশেষে বলতে চাই, নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে-বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (বুখারী ৫০৬৬)

আল্লাহ তাআলা তাওফিকদাতা।

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 2 =