বিসমিল্লাহ্‌ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ১০ আলোচনা

শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

দশের সমাহার পর্ব-২০:বিসমিল্লাহ্‌ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ১০ আলোচনা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (আরবী: بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ) কুরআন মাজীদের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা তওবা ব্যতিরেকে অন্য বাকি ১১৩টি সূরা শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহ দিয়ে। এছাড়া হাদীস থেকে জানা যায়, সব ভালো কাজের সূচনা বাক্য এই বিসমিল্লাহ। বিধানগত বিচারে এটা মাসনূন বা মুস্তাহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর বিধায় নিম্নে এ সম্পর্কে সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকার খেদমতে দশটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা তুলে ধরা হল–

আল্লাহ তাআলা আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

এক.

বিসমিল্লাহ্‌ (بِسْمِ اللَّـهِ)-র অর্থ প্রসঙ্গে

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর অর্থ সাধারণত এভাবে করা হয়–শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

উক্ত প্রচলিত অনুবাদে বলা হয় ‘শুরু করছি আল্লাহর নামে…’, কিন্তু বিসমিল্লাহতে ‘শুরু করছি’ সরাসরি বলা নেই। এর সরাসরি অর্থ: ‘আল্লাহর নামে।’ তবে আরবি ব্যাকরণ অনুসারে ‘বিসম’ এর আগে কিছু একটা আসবে। এক শ্রেণীর ব্যাকরণবিদদের মতে এর আগে একটি ক্রিয়াপদ আসবে, যেমন, ‘আমি তিলাওয়াত করছি’, ‘আমি শুরু করছি’ ইত্যাদি প্রেক্ষাপট অনুসারে ‘আমি অমুক করছি’ দিয়ে। আরেক শ্রেণীর ব্যাকরণবিদ অনুসারে এর আগে একটি বিশেষ্য আসবে, যেমন ‘আমার খাওয়া’, ‘আমার পড়া’ ইত্যাদি আল্লাহর নামে। এখানে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সরাসরি ‘শুরু করছি’ না বলে বিসমিল্লাহ-এর প্রয়োগকে আরও ব্যাপক করে দিয়েছেন। (https://quranerkotha.com/surah-fatiha)

দুই. 

বিসমিল্লাহ্‌ নতুন কিছু নয়

বিসমিল্লাহ কোনো নতুন কিছু নয়। নবী নুহ আ.-কে আল্লাহ তাআলা তার জাহাজে উঠার সময় বলেছিলেন, ارْكَبُوا فِيهَا بِسْمِ اللَّهِ ‘আরোহণ কর আল্লাহর নামে…'(১১:৪১) নবী সুলায়মান আ. যখন রানী বিলকিসকে বাণী পাঠিয়েছিলেন, তখন তা শুরু হয়েছিল ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে (২৭:৩০)। এই দুটি আয়াত থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শেখাচ্ছেন: আমরা যখন কোনো যাত্রা শুরু করবো, বা কোনো দলিল বা চিঠি লিখব, তখন আমরা যেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে শুরু করি।

তিন.

প্রত্যেক কাজে বিসমিল্লাহ বলার রহস্য

ইসলাম প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করার নির্দেশ দিয়ে মানুষের গোটা জীবনের গতিবিধি অন্য সব কিছুর দিক থেকে সরিয়ে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে। বারবার আল্লাহর নামে কাজ শুরু করার মাধ্যমে সে প্রতি মুহূর্তেই আনুগত্যের এ স্বীকারোক্তি নবায়ন করে যে, আমার অস্তিত্ব ও আমার যাবতীয় কাজ-কর্ম আল্লাহর ইচ্ছা ও সাহায্য ছাড়া হতে পারে না। এ নিয়তের ফলে তার ওঠাবসা, চলাফেরাসহ পার্থিব জীবনের সকল কাজকর্ম ইবাদতে পরিণত হয়ে যায়।
কাজটা কতই না সহজ। এতে সময়ের অপচয় হয় না, পরিশ্রমও হয় না। কিন্তু উপকারিতা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এতে দুনিয়াবী প্রতিটি কাজ দ্বীনের কাজে রূপান্তরিত হয়ে যায়। মুসলিম-অমুসলিম সকলেই পানাহার করে, কিন্তু মুসলমান আহার গ্রহণের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে এ স্বীকারোক্তি জানায় যে, আহার্য-বস্তু যমীনে উৎপন্ন হওয়া থেকে শুরু করে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত তাতে কত পরিশ্রমই না নিয়োজিত হয়েছে। আকাশ-বাতাস, গ্রহ-নক্ষত্রের কত অবদানেই না এক-একটি শস্যদানার দেহ পুষ্টিলাভ করেছে। মানুষ, প্রকৃতি এবং উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত অন্যান্য জীব-জানোয়ারের যে অবদান খাদ্যের প্রতিটি কণায় বিদ্যমান, তা আমার শ্রম বা চেষ্টা দ্বারা সম্ভব ছিল না। একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই অনুগ্রহ করে এগুলোকে বিবর্তনের সকল স্তর অতিক্রম করিয়ে উপাদেয় আহার্যরূপে আমাকে দান করেছেন।
মুসলমান-অমুসলমান সকলেই বিশ্রাম নেয়, ঘুমায়, আবার জেগে ওঠে। কিন্তু মুমিন তার শোয়ার এবং জেগে ওঠার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আল্লাহর সাথে তার যোগাযোগের সম্পর্ক নবায়ন করে। ফলে তার পার্থিব কাজকর্মও আল্লাহর যিকিরে রূপান্তরিত হয়ে ইবাদতরূপে গণ্য হয়। একজন মুমিন কোনো যানবহনে আরোহণকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ কথারই সাক্ষ্য দেয় যে, এ বাহন সৃষ্টি এবং আমার ব্যবহারে এনে দেওয়া ছিল মানবীয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সুষ্ঠু এক পরিচালনা পদ্ধতিতে কোন স্থানের কাঠ, লোহা, কারিগর ও চালক সবকিছু সমবেত করে সবগুলোকে মিলিয়ে আমার খেদমতে নিয়োজিত করেছেন। সামান্য কয়টি পয়সা ব্যয় করে আল্লাহর এতবড় সৃষ্টি আমার নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারছি এবং সে পয়সাও আমি নিজে কোনো জায়গা থেকে সাথে করে নিয়ে আসিনি। বরং তা সংগ্রহ করার সকল ব্যবস্থাও তিনিই করে দিয়েছেন। চিন্তা করুন, ইসলামের এ সামান্য শিক্ষা মানুষকে কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে। এজন্য এরূপ বলা যথার্থ যে, বিসমিল্লাহ এমন এক পরশপাথর যা শুধু তামাকে নয়, বরং মাটিকেও স্বর্ণে পরিণত করে। (তাফসিরে মাআ’রিফুল কুরআন খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ১৭)

চার. 

বিসমিল্লাহ্‌র ফায়দা (উপকারিতা)

মানুষ যে আদব ও শিষ্টাচার অন্যকে শেখায় তার মধ্যে একটি এটাও যে, সে তার কাজ আল্লাহর নামে শুরু করবে। (কেননা, আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোনো নাম আত্মিক ও চারিত্রিক উন্নতি ঘটাতে পারে না)। এই শিষ্টাচার ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে পালন করলে কমপক্ষে তিনটি ফায়দা পাওয়া যায়।
প্রথমত, মানুষ বহু খারাপ কাজ থেকে বাঁচতে পারবে। কারণ, অল্লাহর নামে কাজ শুরুর অভ্যাস তাকে এ কথা ভাবতে বাধ্য করবে যে, আসলেই কি এই কাজ শুরুর পূর্বে আল্লাহর নাম নেওয়া সমীচীন?
দ্বিতীয়ত, জায়েয ও নেক কাজ শুরুর পূর্বে আল্লাহর নাম নিলে মানুষের মস্তিষ্ক যথার্থ সিদ্ধান্তে উপনীত হবে এবং সব সময় সঠিকরূপে নিজের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবে।
তৃতীয়ত, সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো, যখন সে আল্লাহর নামে নিজের কাজ শুরু করবে তখন আল্লাহর সাহায্য ও সন্তুষ্টি তার সাথে থাকবে। তার কর্মতৎপরতায় বরকত নাযিল হবে। তাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও চক্রান্ত থেকে রক্ষা করা হবে। আল্লাহর স্বভাব হলো, বান্দা যখন তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করে তখন তিনিও তাঁর প্রতি কুদরতিভাবে মনোনিবেশ করেন।

পাঁচ.

বিসমিল্লাহর ফযীলত

হাদীস- ১ : হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, হযরত উসমান ইবনে আফফান রাযি. (আল্লাহর রাসূলের কাছে) بِسْمِ اللَّـهِ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল -এর বললেন, এটি আল্লাহর নামের মধ্য থেকে একটি নাম। আর এ নাম ইসমে আযমের এত নিকটবর্তী যেমন চোখের মণি ও সাদা অংশের মধ্যকার দূরত্ব। (ইবনে হাতেম, ইবনে মারদূয়া)
হাদীস- ২ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল ইরশাদ করেছেন, হযরত ঈসা ইবনে মারয়ামকে তাঁর সম্মানিতা মাতা শিক্ষকের হাতে সোপর্দ করেন। শিক্ষক হযরত ঈসা ইবনে মারয়ামকে বললেন, بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ লেখ। হযরত ঈসা আ. জিজ্ঞাসা করলেন, بِسْمِ اللَّـهِ কী? শিক্ষক উত্তর দিলেন, আমার জানা নেই। তখন হযরত ঈসা আ. বললেন, ب দিয়ে بهاء الهي (আল্লাহর জ্যোতি) س দিয়ে الهي سنا (আল্লাহর জ্যোতি), م দিয়ে مملكت الهي (আল্লাহর রাজত্ব) উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সকলের মাবুদ ও মালিক। দুনিয়া ও আখেরাতে মুমিন-কাফের উভয়ের উপর রহম করেন (রাহমান) আর আখেরাতে শুধু মুমিনের উপর রহম করেন (রহীম)। (ইবনু হাতিম, ইবনু মারদূয়া)
হাদীস- ৩ : হযরত বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল ইরশাদ করেছেন, আমার উপর এমন আয়াত নাযিল হয়েছে যা হযরত সুলাইমান আ. ছাড়া আর কোনো নবীর উপর নাযিল হয়নি। সেটা হলো, بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ (ইবনু আতিয়্যা ও কুরতুবী এই আসার বর্ণনা করেছেন)
হাদীস- ৪ : হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. এর উক্তি আছে যে, যে ব্যক্তি দোযখের ১৯ জন প্রহরী থেকে (দোযখের ফেরেশতা) রক্ষা পেতে চায় সে যেন بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِপড়ে। যেন আল্লাহ তাআলা بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ এর প্রতিটি হরফের বিনিময়ে তাকে আযাবের ফেরেশতা থেকে মুক্ত রাখেন। (ইবনু আতিয়্যা ও কুরতুবী এই আসার বর্ণনা করেছেন)

হাদীস- ৫ : এক হাদীসে এসেছে, যে কাজ আল্লাহর নাম ছাড়া শুরু হয় তা অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত। (অর্থাৎ তাতে বরকত নসীব হয় না) যদিও বাহ্যত সেটা পরিপূর্ণ মনে হয়। (ইবনু মাজাহ, ইবনু সালাহ)
নোট- ইমাম সুয়ূতী রহ. লুবাবুল হাদীসের তৃতীয় অধ্যায়ে بسم الله দশোর্ধ্ব ফযীলতের হাদীস উল্লেখ করেছেন।

ছয়.

বিসমিল্লাহ্‌র বরকত

০১. ইমাম রাযী রহ. তাফসীরে কাবীরে বিসমিল্লাহর বরকত সম্পর্কে বয়ান করতে গিয়ে বলেন, ফেরাউন খোদায়ি দাবি করার পূর্বে একটি বাড়ি বানিয়ে এর মূল ফটকে بسم الله লিখে রেখেছিলো। সে খোদায়ি দাবি করলে হযরত মূসা আ. তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন তখন সে তা কবুল করেনি। ফলে হযরত মূসা আ. তার ব্যাপারে এ বলে বদদুআ দিয়েছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি কী কারণে এই খবিশকে অবকাশ দিয়ে রেখেছেন?
তখন ওহী আসলো, হে মূসা! সে তো ধ্বংসের উপযুক্ত কিন্তু তার বাড়ির দরজায় بسم الله লিখিত থাকায় সে এখনও শাস্তি থেকে বেঁচে আছে। এর ফলেই ফেরাউনের ঘরে কোনো আযাব আসেনি বরং তাকে ঘর থেকে বের করে সমুদ্রে নিমজ্জিত করা হয়েছে।
সুবহানাল্লাহ! এক কাফেরের ঘর যখন بسم الله – এর বরকতে রক্ষা পেল তখন একজন মুসলমান যদি মনেপ্রাণে ও মুখে তা অঙ্কন করে নেয় তাহলে সে কিভাবে আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি পাবে না!
০২. হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহ. তাফসীরে আযীযীতে লিখেছেন, মুফাসসিরগণ বলেছেন, নূহ আ. এর সময়ে তুফান যখন পৃথিবীকে ভয়াবহ আযাবে ঘিরে ফেলল এবং হযরত নূহ আ. নিজের কিশতীতে আরোহণ করলেন তখন তিনি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন। তিনি প্লাবন থেকে বাঁচতে ও আল্লহর আযাব থেকে রক্ষা পেতে بسم الله مجرها ومرساها পড়লেন। এই কালেমার বরকতে তাঁর কিশতী প্লাবিত হওয়া থেকে রেহাই পেয়েছিলো।
মুফাসসিরগণ বলেন, যখন এই অর্ধেক কালেমার বরকতে এত ভয়ংকর প্লাবন থেকে মুক্তি এসেছিলো তখন যে ব্যক্তি তার জীবনের প্রতিটি কাজের শুরুতে পূর্ণ কালেমা অর্থাৎ بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ বলাকে আবশ্যক করে নেয় সে কী কারণে নাজাত থেকে মাহরূম থাকবে? (তাফসিরে আজীজী পৃষ্ঠা ১৬, তাফসিরে কাবীর খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ১৬৯)
০৩. হযরত সুলাইমান আ. ইয়ামানের রাণী বিলকিসের কাছে প্রথম চিঠি লেখার সময় بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ লিখলে এর বরকতে বিলকিস তাঁর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং সম্পূর্ণ রাজত্ব হযরত সুলাইমান আ.-এর আয়ত্বে এসেছিলো। (তাফসিরে কাবীর খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ১৬৯)
০৪. হযরত ঈসা আ. একবার কবরস্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দেখলেন, এক ব্যক্তিকে কঠিনভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এটা দেখে হযরত ঈসা আ. কয়েক কদম সামনে গিয়ে ওযূ-গোসল করে ফিরে এলেন। ফেরার পথে কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলেন, সেই কবর নূরে নূরান্বিত এবং তার উপর রহমতে ইলাহীর বারিধারা বর্ষিত হচ্ছে। তিনি তখন হতবাক হয়ে গেলেন এবং দরবারে ইলাহীতে আরয করলেন, আমার কাছে যেন এর রহস্য বর্ণনা করা হয়। গায়বী আওয়াজ আসলো, হে রূহুল্লাহ! এই ব্যক্তি মারাত্মক গুনাহগার ও বদকার ছিলো। এর কারণে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিলো। তবে সে মৃত্যুকালে নিজ স্ত্রীকে গর্ভবতী অবস্থায় রেখে এসেছিলো। তার গর্ভে ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছিলো। আজকে তার ছেলেকে মকতবে পাঠানো হয়েছে আর উস্তাদ তাকে بسم الله পড়ালেন। এটা দেখে আমার আত্মমর্যাদায় লাগলো যে, আমি পৃথিবীতে এমন এক ব্যক্তি শাস্তি দিব যার সন্তান আমার নাম জমিনে উচ্চারণ করছে। (তাফসিরে কাবীর খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ১৭২)
০৫. হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রাযি. এর কাছে এক ব্যক্তি জীবননাশক বিষভর্তি পেয়ালা এনে বলল, আপনি যদি এই বিষ পান করে সুস্থ-স্বাভাবিক থাকেন তাহলে আমরা মেনে নিব যে, আপনার ইসলাম ধর্ম সত্য। তিনি بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِবলে বিষ পান করলেন। আল্লাহর রহমতে তাঁর মধ্যে এর কোনো প্রতিক্রিয়াই প্রকাশ পায়নি।
০৬. রোমের কায়সারের কঠিন মাথা ব্যথা হলো। সব ধরনের চিকিৎসা থেকে নিরাশ হয়ে সে হযরত ফারূকে আযম রাযি. এর খেদমতে চিঠি লিখে পাঠালো যে, আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা; কোনো চিকিৎসা বলে দিন। তিনি তার কাছে একটি টুপি পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ যখন সেই টুপি পড়তো তখন মাথা ব্যথা দূর হয়ে যেত। আর যখন খুলে ফেলতো তখন ব্যথা শুরু হয়ে যেত। সে এতে খুবই বিস্মিত হলো। সে টুপিয়ে খুলিয়ে দেখলো যে, তাতে একটি চিরকুট রয়েছে যাতে بسم الله الرحمن الرحيم লেখা।
০৭. উলামায়ে কেরাম লিখেছেন, রাত-দিন মোট ২৪ ঘণ্টা। পাঁচ ঘণ্টার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায আর অবশিষ্ট ১৯ ঘণ্টার জন্য ১৯টি হরফ দান করা হয়েছে। যেন ১৯ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্ত, কাজ ও ব্যস্ততা ১৯টি হরফের বরকতে ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়। অর্থাৎ بسم الله الرحمن الرحيم এর বরকতে ১৯ ঘণ্টাও ইবাদতরূপে বিবেচিত হয়। (তাফসিরে আজীজী খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ১৬)
০৮. উলামায়ে কেরাম আরও লিখেছেন, কাফেরদের হত্যার হুকুম সম্বলিত সূরা বারাআতে (তওবা) بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। কেননা, এটা রহমতপ্রকাশক কালেমা যা এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এমনিভাবে পশু জবাইয়ের সময় শুধু بسم الله বলতে হয়। بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ পুরোটা পড়ার হুকুম দেয়া হয়নি। কেননা, জবাইয়ের ক্ষেত্রে কষ্ট ও শাস্তির প্রতিকৃতি প্রকাশ পায়। অথচ بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ রহমতের কালেমা যা চাহিদার অনুরূপ নয়।
তাই যে ব্যক্তি রহমতের কালেমা بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ সর্বাবস্থায় (এর সর্বনিম্ন পরিমাণ দৈনিক ফরয নামাযে সত্তর বার মুখে উচ্চারণ করা) বলবে, নিশ্চিতভাবে সে আযাব ও গজব থেকে মুক্ত এবং সওয়াব লাভে ধন্য হবে। (তাফসিরে কাবীর খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ১৭৩)
০৯. بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ এর আরেকটি বরকত হলো, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে কোনো ব্যক্তি টয়লেটে প্রবেশের সময় بسم الله বলে প্রবেশ করবে। যাতে তার লজ্জাস্থান ও জিনদের মাঝে আবরণ পড়ে যা (অর্থাৎ মানুষ যখন বিসমিল্লাহ বলে টয়লেটে প্রবেশ করে তখন এর বরকতে জিনদের দৃষ্টি তার লজ্জাস্থানে পড়ে না)। অতএব, যখন এই কালেমার প্রভাবে মানুষ ও তার শত্রুদের (জিন) মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তখন আশা করা যায়, এটি মুসলমান ও দোযখের আযাবের মাঝে আবরণস্বরূপ দেখা দিবে। (তাফসিরে আজীজি)
১০. হযরত বিশর হাফী রহ. বিসমিল্লাহ লিখিত একটি কাগজ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলেন। তিনি সেটি উঠিয়ে নিলেন। এ সময় তার কাছে দুই দিরহাম ছাড়া আর কিছু ছিলো না। তিনি তা দিয়ে সুগন্ধি কিনে ঐ কাগজকে সুগন্ধিময় করলেন। এর ফলশ্রুতিতে স্বপ্নে আল্লাহ তাআলার দিদার নসীব হয়। আল্লাহ তাআলা তাকে লক্ষ্য করে বললেন,

يا بشر، طيَّبتَ اسمي لأُطيِّبنَّ اسمك فِي الدنيا والآخرة

‘হে বিশর! তুমি আমার নাম সুগন্ধিময় করেছ, আমি তোমার নাম দুনিয়া ও আখেরাতে সুগন্ধিময় করবো।’ (তাফসিরে কাবীর খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ১৭৩)

সাত.

বিসমিল্লাহর বৈশিষ্ট্য

০১. মুর্জারবাতে দিরাবী নামক কিতাবে (পৃ.০২, মিশরি ছাপা) শায়েখ আহমদ দিরাবী কাবীর বলেন, বিসমিল্লাহর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের একটি হলো, কোনো ব্যক্তি যদি মহররমের প্রথম তারিখে একখানা কাগজে ১১৩ বার بسم الله লিখে নিজের কাছে রাখে তাহলে সে পুরো জীবনে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে না।
০২. কোনো কোনো সালিহীন থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি ১২ হাজার বার بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ পড়ে; প্রতি হাজারের মাঝখানে দুই রাকাত নামায পড়ে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ে এবং সাথে সাথে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে। এরপর পুনরায় একহাজার বার بسم الله পড়ে দুই রাকাত নামাযান্তে দরূদ পড়ে প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে দুআ করে। এভাবে ১২ হাজার বার পূর্ণ করবে। যারাই এই আমল করবে তাদের যে প্রয়োজনই হোক না কেন আল্লাহর ইচ্ছায় অবশ্যই তা পূরণ হবে। (মুর্জারবাতে দিরাবী নামক কিতাবে পৃ.০৪, মিশরি ছাপা)
০৩. যে ব্যক্তি ৭৮৬ বার بسم الله লাগাতার সাত দিন যে নিয়তে পড়বে চাই সেটা ক্ষতি দূর করার জন্য হোক বা ফায়দা হাসিলের জন্য অথবা পার্থিক কোনো উদ্দেশ্য পূরনের উদ্দেশ্যে হোক, তা অবশ্যই পূরণ হবে। ইনশা আল্লাহ। (প্রাগুক্ত)
০৪. খাযীনাতুল আসরার কিতাবে লিখিত আছে, যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর সময় ২১ বার بسم الله পড়ে ঘুমাবে সে ইনসান, শয়তানের অনিষ্ঠতা ও জিন-ভ‚তের আক্রমণ থেকে হেফাযত থাকবে।
০৫. মৃগীরোগীদের কানে ৪১ বার بسم الله পড়ে দম করলে সে হুশ ফিরে পাবে।
০৬. ব্যথা, জাদু ইত্যাদিতে আক্রান্ত হলে লাগাতার সাতদিন শতবার করে পাঠ করলে ব্যথা ও জাদুর প্রভাব দূর হয়ে যায়।
০৭. সোমবার সূর্যোদয়ের সময় ৩১৩ বার بسم الله ও ১০০ বার দরূদ শরীফ পাঠ করলে গায়বী রিযিকের দ্বার উম্মোচিত হয়।
০৮. কোনো কিছুতে ২১ বার লিখে শিশুদের গলায় ঝুলিয়ে দিলে সে সমস্ত বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাবে।
০৯. চল্লিশ দিন সকালে আড়াই হাজার বার পাঠ করলে অন্তরে গায়বের রহস্য ও ইলমে লাদুন্নীর দ্বার উম্মোচিত হয়।
১০. যে ৭৮৬ বার بسم الله পড়ে গøাসের পানিতে দম করে যাকে পান করাবে সে তার ভালোবাসায় পাগল হয়ে যাবে। আর কোনো দুর্বল মেধার অধিকারী সাতদিন সূর্যোদয়ের সময় পান করলে তার দুর্বল মেধা দূর হবে এবং যা শুনবে তাই মনে থাকবে।
১১. যে মহিলার সন্তান জীবিত থাকে না সে ৬১ বার بسم الله লিখে তাবীজাকারে নিজের কাছে রাখলে ইনশা আল্লাহ তার সন্তান জীবিত থাকবে।
১২. কোনো ব্যক্তি ১০১ বার بسم الله লিখে ক্ষেতে পুঁতে দিলে প্রচুর পরিমাণ শস্য উৎপন্ন হবে এবং সকল বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাবে এবং বরকত লাভ হবে।
১৩. এক নেককার বান্দা বলেছেন, যে ব্যক্তি بسم الله পুরোটা ৬২৫ বার লিখে নিজের কাছে রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে হায়বাত (যাকে দেখে সবাই ভীত হয় এমন গুণ) দান করবেন। কেউ তার ক্ষতি করতে পারবে না। (কিতাবুদ্দাই ওয়াদ্দাওয়া পৃষ্ঠা ১৭)
১৪. বর্ণিত আছে, ফকীহ আহমদ মাযাফী রহ. একবার প্রচন্ড জ¦রে আক্রান্ত হন। তিনি তার উস্তাদ আমর ইবনে সাঈদ যিনি তখন মাযাফীর বাসায় তাশরীফ এনেছিলেন, তার কাছে নিজের অবস্থা বর্ণনা করলে। উস্তাদ একটি তাবীজ লিখে দিয়ে বললেন, এটি খুলে দেখবে না। তিনি বলেন, তাবীজ বাঁধার সাথে সাথে জ¦র উধাও হতে লাগলো। তারপর যখন তাবীজ খুলে দেখলেন তখন তাতে بسم الله ছাড়া আর কিছুই লেখা ছিলো না। আমি মনে করেছিলাম এতে আশ্চর্যজনক ও নতুন কোনো দুআ লেখা আছে। অত্যধিক ব্যবহারের কারণে একে তেমন কার্যকর মনে করিনি। এরপর আবার আমার জ¦র এলে এই তাজীবে কোনো কাজ হয়নি। পুনরায় উস্তাদের কাছে গিয়ে হালত জানালাম। তিনি বললেন, সম্ভবত তুমি তাবীজ খুলে দেখেছিলে? বললাম, হ্যাঁ। তিনি আরেকটি তাবীজ লিখে নিজ হাতে বেঁধে দিলেন এবং বললেন, এটি খুলে দেখবে না। আমার জ¦র তখনই কমতে লাগলো। কয়েকদিন পর তাবীজটি খুলে দেখলাম তাতে بسم الله ছাড়া আর কিছ্ইু লেখা নেই। আমার পুনরায় জ¦র এলে তাবীজটি কোনো উপকারে এলো না। আমি উস্তাদের খেমদতে হাজির হয়ে বললাম, আমি তওবা করছি; এমন কাজ আর করবো না। আমাকে আরেকটি তাবীজ লিখে দিন। হযরত তাবীজ লিখে বেঁধে দিলেন। তৎক্ষণাত জ¦র চলে গেল। এক বছর আমি আবার তাবীজটি খুলে দেখলাম। তাতে بسم الله ছাড়া অন্য কিছুই লেখা ছিল না। এবার আমার অন্তরে আল্লাহর নামের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা স্থান পেল। আমি আল্লাহর নামের গুরুত্ব উপলব্ধি করলাম। (অজিফিয়ায়ে কারিমিয়া পৃষ্ঠা ০৭ মুফতি এনায়েত আহমাদ)

আট.

কুরআন তেলাওয়াত ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ্‌ বলার হুকুম

জাহিলীযুগে লোকদের অভ্যাস ছিলো, তারা তাদের কাজ দেব-দেবির নামে শুরু করতো। এই জাহেলী কুপ্রথা মূলৎপাটনের জন্য কুরআনের সর্বপ্রথম আয়াত যা হযরত জিবরীল আ. নিয়ে এসেছেন তাতে আল্লাহর নামে কুরআন পাঠের হুকুম দিয়ে বলা হয়েছে- اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ ‘পড়, তোমার প্রভুর নামে…)
আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন, কুরআন ছাড়াও অন্য সকল আসমানী কিতাব بسم الله দিয়ে শুরু করা হয়েছে।

কোনো কোনো আলেম বলেছেন, بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ কুরআন ও উম্মতে মুহাম্মাদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই দুটি মতের মধ্যে সমন্বয় হলো, আল্লাহর নামে শুরু করা তো সকল আসমানী কিতাবে রয়েছে তবে بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ -এর শব্দগুলো শুধু করআনের বৈশিষ্ট্য। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমদিকে আল্লাহর নামে শুরু করার জন্য بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ শব্দ ব্যবহার করতেন এবং লিখতেন। যখন بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ আয়তখানা নাযিল হয় তখন এই শব্দগুলোই নির্দিষ্ট করে নিয়েছিলেন। এরপর থেকে সব সময়ের জন্য এ সুন্নত চালু হয়। (কুরতুবী, রূহুল মাআনী)
কুরআন মাজীদের দিকনির্দেশনা হলো, প্রতিটি কাজ আল্লাহর নামের শুরু করা উচিত। রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, যে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ بسم الله শুরু হবে না তা বরকতশূন্য। এক হাদীসে এসেছে, ঘরের দরজা বন্ধ করলে بسم الله বলো; চেরাগ নিভালে بسم الله বলো; বাসন ধৌত করলে بسم الله বলো; পানাহারের সময়, ওযূর সময়, বাহনে উঠতে-নামতে بسم الله বলার হুকুম কুরআন-হাদীসে বারবার এসেছে।

নয়.

বিসমিল্লাহ্‌ স্বতন্ত্র আয়াত কিনা?

কুরআন মাজীদের সর্বপ্রথম এই আয়াতটি প্রতিটি সূরার পূর্বে আনা হয়েছে। অর্থাৎ ১১৩ বার এবং সূরা নামলে স্বতন্ত্র আয়াত হিসেবেও এসেছে। إِنَّهُ مِنْ سُلَيْمَانَ وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ অতএব, এই আয়াত কুরআনের অংশ হওয়া বা না হওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্নই উত্থাপিত হয় না। তবে এ নিয়ে ইখতেলাফ রয়েছে যে, প্রতিটি সূরার পূর্বের এই অংশ স্বতন্ত্র আয়াত হিসেবে গণ্য হবে কিনা?
ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর অভিমত হলো, এটি স্বতন্ত্র কোনো আয়াত নয়। বরং দুই সূরার মাঝে পার্থক্য ও ব্যবধান সৃষ্টির জন্য আনা হয়েছে। আর কুরআন মাজীদের প্রথমে স্বতন্ত্র আয়াত হিসেবে আনা হয়েছে। ইমাম মালেকেরও একই অভিমত।
قال مالك رحـ وأبو حنيفة رحـ ليست فى أوائل السور بآية وإنما هي استفتاح ليعلم بها مبدائها
আবু বকর জাস্সাস রহ. আহকামুল কুরআনে এর উপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং ইমামে আযম আবু হানীফা রহ. এর মতকে শক্তিশালী ও সুপ্রমাণিত করেছেন। বিস্তারিত জানার জন্য হযরতের আলোচনাটি অধ্যয়ন করা যেতে পারে। (আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ০২)

দশ.

বিসমিল্লাহর মাসআলা

মাসআলা- কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের পূর্বে أعوذ بالله من الشيطان الرجيمبِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ পাঠ করা সুন্নত এবং তেলাওয়াতে মাঝে সূরা বারাআত (তওবা) ছাড়া প্রত্যেক সূরার শুরুতে بسم الله পড়া সুন্নত।
মাসআলা- তেলাওয়াতের সময় মধ্যে সূরা বারাআত এলে, বিসমিল্লাহ পড়া নিষেধ। কিন্তু প্রথম তেলাওয়াতই যদি সূরা বারাআত দ্বারা শুরু হয় তাহলে أعوذ بالله – بسم الله উভয়টি পাঠ করতে হবে। (মাআরিফুল কুরআন খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ২০)
মাসআলা- بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ সূরা নামলের স্বতন্ত্র আয়াত এবং প্রত্যেক দুই সূরার মাঝে স্বতন্ত্র একটি আয়াত। তাই এই আয়াতের মর্যাদা কুরআনের অনুরূপ। এই আয়াত ওযূ ছাড়া স্পর্শ করা জায়েয নয়। (শারহু মানিয়্যা, হিদায়া)
মাসআলা- অপবিত্র অবস্থায় যেমন হায়েয-নেফাসের সময় (পবিত্র হওয়ার আগে) তেলাওয়াতরূপে পাঠ করাও নাজায়েয। তবে কোনো কাজ শুরুর পূর্বে যেমন – পানাহারের সময় দোয়াস্বরূপ পাঠ করা সব সময় জায়েয। (মাআরিফুল কুরআন খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ২০)
মাসআলা- নামাযের প্রথম রাকাতের পর দ্বিতীয় রাকাত শুরুর সময় বিসমিল্লাহ পাঠ করা উচিত। এটা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত হয়েছেন। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে প্রত্যেক রাকাতের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়াকে ওয়াজিব বলা হয়েছে। (শারহু মানিয়্যা)
মাসআলা- নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর অন্য সূরা পাঠ করার পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ করা অনুচিত। চাই সিররি (অনুচ্চস্বরের) নামাযে হোক বা জেহরি (উচ্চস্বরের) নামাযে হোক। নবী কারীম রাসূলুল্লাহ ও খুলাফায়ে রাশেদী থেকে এটা প্রমাণিত নয়। (মাআরিফুল কুরআন খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ২০)

মাসআলা- বিসমিল্লাহ ছাড়া কোনো প্রাণী জবাই করা হলে তা ভক্ষণ করা হালাল নয়। হজরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন খাদ্য খাবে; তখন যেন সে বিসমিল্লাহ বলে। বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে অবশ্যই যেন ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’ বলে। (আবু দাউদ)

فلله الحمد على دين الإسلام وتعليماته