শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
ইবনুল কাইয়িম রহ বলেন,
الأحاديثُ الواردة في ذَمِّ الغناء وتحريمه متواترةٌ، وعدَدُ رُواتها ثلاثةَ عشر صحابيًّا، وهم: أبو مالكٍ الأشعري، وسهل بن سعد، وعمران بن حُصَين، وعبدالله بن عمرو، وعبدالله بن عباس، وأبو هريرة، وأبو أُمَامة الباهلي، وعائشة، وعلي بن أبي طالب، وأنس بن مالك، وعبدالرحمن بن سابط، والغازي بن ربيعة، وعبدالله بن عمر
গান নিষেধ ও হারাম হওয়া সম্পর্কিত হাদিসগুলো মুতাওয়াতির। এ সম্পর্কে ১৩ জন সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা হলেন, আবু মালিক আশআ’রী, সাহল ইবন সা’দ, ইমরান ইবন হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবন আমর, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস, আবু হুরাইরা, আবু উমামা আলবাহিলি, আয়েশা, আলী ইবন আবী তালিব, আনাস ইবন মালিক, আব্দুর রহমান ইবন সাবিত, আল্ গাজী ইবন রবীয়া ও আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুম। (ইগাসাতুল লাহফান ১/২৬০)
তম্মধ্য থেকে নিম্নে ১০ টি হাদিস পেশ করা হল–
এক- আবু মালিক আশআ’রী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। আর তাদের কিছুকে বানর ও শূকর বানিয়ে দিবেন। (ইবন মাজাহ ৪০২০ সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮)
দুই- সাহল ইবন সা’দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فِي هَذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَتَى ذَاكَ قَالَ إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ
এই উম্মতের জন্য ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের আযাব রয়েছে। জনৈক মুসলিম ব্যক্তি তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কখন হবে তা? তিনি বললেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে এবং মদ্যপান দেখা দিবে। (তিরমিযী ২২১৫)
চার- আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ نَهَى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
রাসূলুল্লাহ ﷺ শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরী শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। (আবু দাউদ ৩৬৪৪)
অনুরূপ হাদিস মুসনাদে আহমাদে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে।
পাঁচ- আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا اتُّخِذَ الْفَئُْ دُوَلاً، وَالأَمَانَةُ مَغْنَماً، والزَّكَاةُ مَغْرَماً، وَتُعُلَّمَ الْعِلْمُ لِغَيْر الدِّين، وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ، وَعَقَّ أُمَّهُ، وأَدْنَى صَدِيقَهُ، وأُقْصَى أبَاهُ، وظَهَرَتِ الأصْوَاتُ فى المسَاجدِ، وسَادَ الْقَبيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكانَ زَعِيمَ الْقَوْمِ أَرْذَلُهُمْ، وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مخَافَةَ شَرِّهِ، وَظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ، وشُرِبَتِ الْخَمْرُ، وَلَعَنَ آخِرُ هذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلهَا، فَلْيَرْ تَقِبُوا عِنْدَ ذلِكَ رِيحاً حَمْرَاءَ، وَزَلْزَلَةً وَخَسْفاً، وَمَسْخاً، وَقَذفاً، وآيَاتٍ تتابع كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ
গনীমত সম্পদ যখন ব্যক্তিগত সম্পদ বলে গণ্য করা হবে, যাকাত হবে জরিমানা বলে, দ্বীনী উদ্দেশ্য ছাড়া ইলম অর্জন করা হবে, পুরুষরা স্ত্রীদের আনুগত্য করবে, এবং মা‘দের অবাধ্য হবে, বন্ধুদের নিকট করবে আর পিতাকে করবে দূর, মসজিদে শোরগোল করবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হয়ে বসবে, নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজের নেতা হবে, অনিষ্টের আশংকায় একজনকে সম্মান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান দেখা দিবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি, পাথর বর্ষণের আযাবের এবং আরো আলামতের যা পরপর নিপতিত হতে থাকবে, যেমন একটি পুরান হারের সূতা ছিড়ে গেলে একটার পর একটা দানা পড়তে থাকে। (তিরমিযী ২২১৪)
ছয়- আবু উমামা আলবাহিলি রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لاَ تَبِيعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوهُنَّ وَلاَ خَيْرَ فِي تِجَارَةٍ فِيهِنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ
গায়িকা দাসী বিক্রি করবে না। এবং কিনবেও না। তাদের গান শিক্ষা দিবে না। এদের ব্যবসায়ে কোন কল্যাণ নাই। এদের মূল্য হারাম। (তিরমিযী ১২৮৫)
সাত- আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা রাযি.-এর নিকট গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিল আরো একজন। তখন লোকটি বলল, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাদেরকে ভূমিকম্প সম্পর্কে বলুন। তখন আয়েশা রাযি. বললেন,
إِذَا اسْتَبَاحُوا الزِّنَا ، وَشَرِبُوا الْخَمْرَ ، وَضَرَبُوا بِالْمَغَانِي ، وَغَارَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي سَمَائِهِ فَقَالَ لِلأَرْضِ : تَزَلْزَلِي بِهِمْ ، فَإِنْ تَابُوا وَنَزَعُوا ، وَإِلا هَدَمَهَا عَلَيْهِمْ
যখন লোকেরা ব্যভিচারকে বৈধ মনে করবে, মদ পান করবে এবং গানের চর্চা করবে আর আল্লাহ নিজ আকাশে ক্রোধান্বিত হবেন তখন তিনি জমিনকে বলবেন, এদেরকে নিয়ে প্রকম্পিত হও, যদি তারা তাওবা করে আর এসব ছেড়ে দেয় (তাহলে নয়)। অন্যথায় এদেরকে ধ্বংস করে দাও। (আল উ’কুবাত লি আবিদ্দুনয়া ৬)
আট- আলী ইবন আবী তালিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا فَعَلَتْ أُمَّتِي خَمْسَ عَشْرَةَ خَصْلَةً حَلَّ بِهَا الْبَلاَءُ ” . فَقِيلَ وَمَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” إِذَا كَانَ الْمَغْنَمُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَأَطَاعَ الرَّجُلُ زَوْجَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَبَرَّ صَدِيقَهُ وَجَفَا أَبَاهُ وَارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلُبِسَ الْحَرِيرُ وَاتُّخِذَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ أَوْ خَسْفًا وَمَسْخًا
আমার উম্মত যখন এ পনেরটি বিষয়ে লিপ্ত হবে তখন তাদের উপর মুসিবত নিপতিত হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, সেগুলো কি ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেন, যখন গনীমত পরিণত হবে ব্যক্তিগত সম্পদে, আমানত পরিণত হবে লুটের মালরূপে, যাকাত গণ্য হবে জরিমানারূপে, পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের অনুগত হবে আর মা‘দের হবে অবাধ্য, বন্ধুদের সাথে তো সদাচারণ করবে অথচ পিতার সঙ্গে করবে দুর্ব্যবহার, মসজিদে শোরগোল করা হবে, নিকৃষ্টতম চরিত্রের লোকটি হবে তার সম্প্রদায়ের নেতা, কেবল অনিষ্টের ভয়ে কোন ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে, মদপান করা হবে, রেশম বস্ত্র পরিধান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের রেওয়াজ চলবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু বা ভূমিধ্বস বা চেহারা বিকৃতির আযাবের। (তিরমিযী ২২১৩)
নয়- আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
আল্লাহ তাআলা আমাকে মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং বাদ্যযন্ত্র, ক্রুশ ও জাহেলি প্রথা বিলোপসাধনের নির্দেশ দিয়েছেন। (শুয়া’বুল ঈমান, বাইহাকি ৬০২৭)
দশ- বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ ৪৫৩৫ আবু দাউদ ৪৯২৪ )