গোনাহের দশ ক্ষতি

শায়খ উমায়ের কোব্বাদী

কে এটা বলতে পারবে যে, গোনাহ ত্যাগ করা ছাড়া কিংবা মাফ করিয়ে নেওয়া ছাড়া জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারবে এবং জান্নাতে যেতে পারবে! কেউই বলতে পারবে না। সুতরাং আমাদের করণীয় কী? একটাই করণীয়—গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং এরপরেও গোনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে নেওয়া।
গোনাহ তো ক্যান্সারের মত। ক্যান্সার থেকে সতর্ক থাকা যেমন জরুরি, গোনাহ থেকেও সতর্ক থাকা জরুরি। ক্যান্সার হলে যেমন কেটে ফেলতে হয় গোনাহ হয়ে গেলেও তাওবা করে নিতে হয়।


প্রকাশ্য ও গোপন গোনাহ ছেড়ে দাও
আল্লাহ তাআলা বলেন

وَذَرُواْ ظَاهِرَ الإِثْمِ وَبَاطِنَهُ إِنَّ الَّذِينَ يَكْسِبُونَ الإِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُواْ يَقْتَرِفُونَ

তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সকল গোনাহ ছেড়ে দাও। যারা গোনাহ করে, শীঘ্রই তাদেরকে তাদের কৃত গোনাহের কারণে শাস্তি দেওয়া হবে। (সূরা আনআম : ১২০)
নবীজী ﷺ বলেন

اتَّقِ المَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ

গোনাহ থেকে বেঁচে থাকো, তাহলে তুমি মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বড় ইবাদতকারী গণ্য হবে। (তিরমিযী : ২৩০৫)

সবচেয়ে দামী আমল: গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. বলেন

لَا أَعْدِلُ بِالسَّلَامَةِ شَيْئًا

গোনাহ থেকে নিরাপদ থাকার মত সমকক্ষ আমল আমি কোনোটিকে মনে করি না। (আদাবুদদুনয়া ওয়াদদীন : ১/৯৮)
হাসান বসরী রহ. বলেন

مَا عَبَدَ الْعَابِدُونَ بِشَيْءٍ أَفْضَلَ مِنْ تَرْكِ مَا نَهَاهُمُ اللَّهُ عَنْه

আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার চেয়ে উত্তম কোনো ইবাদত আর কোনো ইবাদতকারী করতে পারে নি। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২৯৬)

গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি কেন?
প্রতিটি কাজের দুটি দিক থাকে বিধানগত দিক এবং প্রভাবগত দিক। গোনাহের বিধানগত দিক হল, তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে গোনাহের প্রভাবগত বিষয়টি দূর করে দেওয়ার ওয়াদা নেই। আল্লাহ তাআলা তাঁর একান্ত দয়া ও মেহেরবানীতে তার প্রভাবও দূর করে দিতে পারেন। তবে সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা বা ওয়াদা তিনি দেননি।
সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি কোনো গোনাহ করে, এরপর তাওবা করে, তখন সেই তাওবা কবুল হলে গোনাহটি থেকে সে ক্ষমা পেয়ে যাবে। তবে গোনাহের প্রভাব ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে মুক্তি পাবে কি না; বলা যায় না। সেজন্য আমাদের উচিত, সাধ্যের সবটুকু শক্তি ব্যয় করে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। এরপরও কোনো গোনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করা এবং ভবিষ্যতে গোনাহ করার মানসিকতা পরিত্যাগ করা।

গোনাহ ক্যান্সারের মত
কে এটা বলতে পারবে যে, গোনাহ ত্যাগ করা ছাড়া কিংবা মাফ করিয়ে নেওয়া ছাড়া জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারবে এবং জান্নাতে যেতে পারবে! কেউই বলতে পারবে না। সুতরাং আমাদের করণীয় কী? একটাই করণীয়—গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং এরপরেও গোনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে নেওয়া।
গোনাহ তো ক্যান্সারের মত। ক্যান্সার থেকে সতর্ক থাকা যেমন জরুরি, গোনাহ থেকেও সতর্ক থাকা জরুরি। ক্যান্সার হলে যেমন কেটে ফেলতে হয় গোনাহ হয়ে গেলেও তাওবা করে নিতে হয়।

গোনাহের মৌলিক দশ ক্ষতি
গোনাহ করা মানে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যাওয়া। গোনাহের মাধ্যমে মানুষ শয়তানের অনুসরণ করে। মানুষ যখন কোনো গোনাহ করে তখন শয়তান খুব খুশি হয়। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে যান। গোনাহের মাধ্যমে আদম সন্তানের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে, তার মাঝে মৌলিক দশটি বিষয় এখানে উপস্থাপন করা হলো—

১. আল্লাহর ইবাদত থেকে মাহরুম হয়ে যায়
সুস্থ যুবকের যদি জ্বর হয়, ভালো হওয়ার নামও না থাকে তাহলে দুর্বলতার কারণে সে চলাফেরাতেও অক্ষম হয়ে পড়ে। কাজের প্রতি সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তার মন চায় বিছানায় পড়ে থাকতে। অনুরূপভাবে গোনাহের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিও আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। নেককাজ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কিংবা কথাটা এভাবেও বলা যেতে পারে যে, আমলের তাওফীক তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। নেককাজের নিয়তও করে, কিন্তু গোনাহের কারণে নিয়তে দুর্বলতা চলে আসে।
যেমন, আজানের শব্দ কানে আসে কিন্তু মসজিদে যেয়ে নামাজ আদায় করার মতো তাওফিক হয় না। দোকানে বসে আড্ডা দিবে, অযথা সময় নষ্ট করবে, অথচ মসজিদ একদম নিকটে তারপরেও মসজিদে যাবে না। হেলাফেলায় সময় নষ্ট করবে। আল্লাহর হুকুম পালন করার মতো সময় হবে না। পারিবারিক সমস্যার কারণে অথবা অসুস্থতার কারণে দিনের পর দিন দোকান বন্ধ রাখতে পারে, অথচ নামাযের জন্য দশ মিনিট দোকানটা বন্ধ রাখতে পারবে না। মোবাইলে সময় দেওয়ার টাইম আছে। ফেসবুক, ইউটিউব দেখার সময় হয় কিন্তু নামাযের সময় হয় না। এগুলো হয় গোনাহের কারণে।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন

أجمع العارفون بالله أن ذنوب الخلوات هي أصل الانتكاسات

সকল আওলিয়ায়ে কেরাম একমত যে, বান্দার গোপন গোনাহ দীনের পথে তার পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ। (মাউকিউ দুরারিস সুন্নিয়্যা : ১/২৪৩ )

২. ইলম থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়
কোরআন-হাদিস হলো পবিত্র জিনিস, আর গোনাহগারের অন্তর হলো অপবিত্র। তাই পবিত্র এই ইলম আল্লাহ অপবিত্র পাত্রে রাখেন না।
আলো ও অন্ধকার তো এক জায়গায় থাকে না। ইলম হলো নূর আর গোনাহ হলো অন্ধকার। এর পরিণতি কী হবে? যখন ভদ্রলোক আর দুষ্টুলোক এক জায়গায় একত্রিত হয়ে যায়, ভদ্রলোকই জায়গা ছেড়ে চলে যায়। এরকমই অন্তরে গোনাহের অন্ধকার থাকলে ইলম জায়গা ছেড়ে দেবে।
ইলমের অবস্থা যদি চেরাগের মত হয়, গোনাহের অবস্থা হলো বাতাসের ঝাপটার মত। যদি বাতাসের ঝাপটা লাগতেই থাকে, চেরাগ আর কতক্ষণ জ¦লে থাকবে! শেষ পর্যন্ত নিভেই যাবে।
এ জন্য বিশেষভাবে যারা কোরআন ও হাদীসের ইলম অর্জন করতে চায় তাদেরকে সকল গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। প্রকাশ্য ও গোপনে কোনো অবস্থাতেই গোনাহ করা যাবে না।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন

العلم نورٌ يقذفه الله في القلب ، والمعصية تُطفئ ذلك النور

ইলম হলো আলো বিশেষ যা অন্তরে সঞ্চারিত হয় এবং গোনাহ সেই আলোকে নিভিয়ে দেয়। (ফয়জুল কাদীর : ১/১১৯)
ইমাম মালেক রহ. একবার ইমাম শাফেয়ী’ রহ.-কে উপদেশ দেন

إِنِّي أَرَى اللَّهَ تَعَالَى قَدْ أَلْقَى عَلَى قَلْبِكَ نُورًا، فَلَا تُطْفِئْهُ بِظُلْمَةِ الْمَعْصِيَةِ

আমি দেখছি আল্লাহ তাআলা তোমার অন্তরে নূর দিয়েছেন, তুমি গোনাহের অন্ধকার দিয়ে তাকে মিটিয়ে দিয়ো না। (ফা ফির্রূ ইলাল্লাহ : ৩৩)
ইমাম শাফেয়ী’ রহ. নিজের শিক্ষক ইমাম ওয়াকী’ রহ.-এর কাছে অভিযোগ করেছিলেন, আমি ভুলে যাই। ওয়াকী’ রহ. বললেন, গোনাহ ছেড়ে দাও। ইমাম শাফেয়ী’র স্বভাবে একটু কবিত্বও ছিলো। তিনি এটাকে কবিতায় বলেন

شَكَوتُ إِلى وَكيعٍ سوءَ حِفظي
فَأَرشَدَني إِلى تَركِ المَعاصي
وَأَخبَرَني بِأَنَّ العِلمَ نورٌ
وَنورُ اللَهِ لا يُهدى لِعاصي

আমি ইমাম ওয়াকী’ রহ.-এর কাছে আমার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার অভিযোগ করলাম, তিনি উপদেশ দিলেন তুমি গোনাহ করা করো না। কারণ ইলম আল্লাহর নূর এবং আল্লাহর এই নূর পাপীদের অন্তরে দেয়া হয় না। (ফা ফির্রূ ইলাল্লাহ : ৩৩)

৩. আল্লাহর রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়
মানুষ গোনাহ করলে আল্লাহর রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যদিও তার অনেক ধনসম্পদ থাকে, কিন্তু সে এগুলো উপভোগ করতে পারে না। লক্ষ ও কোটি টাকার মালিক, কিন্তু সে নিজে কিছুই খেতে পারে না।
এমন অনেক মানুষ আছে, ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, কিন্তু ডাক্তার বলে দিয়েছে দুই রুটির বেশি খাওয়া যাবে না। এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না।
এমন অনেকেই আছেন, শুধু ঘুষ ও হারাম উপায়ে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছে। মানুষকে ঠকিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। গরিব অসহায়দের হক মেরে দিয়েছে। জনগণের সম্পদ লুটপাট করেছে, সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে নিজের নামে করে নিয়েছে। আরো কতো কি করেছে। কিন্তু শেষ জীবনে যেয়ে সে কিছুই উপভোগ করতে পারে না।
নবীজী ﷺ বলেন

إِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ

নিশ্চয়ই ব্যক্তি গোনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (মুসনাদ আহমাদ: ৫/২৭৭ ইবনু মাজাহ: ৯০)
আলী রাযি. বলেন

إِذَا كُنْتَ فِي نِعْمَةٍ فَارْعَهَا. فَإِنَّ الذُّنُوبَ تُزِيلُ النِّعَمْ

যদি তুমি আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে থাকো তাহলে তার যত্ন নাও। কারণ গোনাহ নেয়ামত দূর করে দেয়। (ইবনুল কায়্যিম, আদ-দা ওয়াদদাওয়া : ১/৭৫)

৪. কাজের মধ্যে বরকত শেষ হয়ে যায়
গোনাহের কারণে কাজের মধ্যে বরকত শেষ হয়ে যায়। ছোট ছোট কাজে বড় বড় সমস্যা ছুটে আসে। যাপিত-জীবনের কষ্ট ও চেষ্টা সফলতার মুখ দেখে না। আপাত-দৃষ্টিতে কাজ সম্পন্ন মনে হলেও যথা সময়ে কাজ অসম্পন্ন দেখা যায়। পেরেশানি ও টেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ মনে করে, কেউ কিছু একটা করেছে। অথচ সে নিজের আত্মিক-কলুষতার কারণে বিপদাপদের মধ্যে পড়ে থাকে। নিজেই স্বীকার করে যে, একটা সময় ছিল যখন সে মাটিতে হাত রাখলেও সোনা হয়ে যেত। আর এখন সোনায় হাত রাখলেও মাটিতে পরিণত হয়। এসবই গোনাহের কারণে কারণে হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন

وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ

তোমাদের উপর যে মসিবত আসে, তা তোমাদেরই কর্মের ফলে। আর তিনি তোমাদের অনেক কিছুই ক্ষমা করে দেন। (সূরা শূরা : ৩০)

৫. প্রিয়জনরা দূরে সরে যায়
কখনো এমন চিত্রও দেখা যায় যে, এই সম্পদের কারণেই তার জীবন দিতে হয়। সন্তান ও যেই প্রিয়জনদের কারণে এতো কিছু করেছে, তারা তার চেয়ে তার সম্পদকেই বেশি ভালোবাসে। সে হয়ে যায় অবহেলিত ও বঞ্চিত।
আয়েশা রাযি. বলেন

إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا عَمِلَ بِمَعْصِيَةِ اللَّهِ عَدَّ حَامِدَهُ مِنَ النَّاسِ ذَامًّا

বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করে তখন আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার প্রশংসাকারীকে নিন্দাকারী বানিয়ে দেন। (সহীহ ইবনু হিব্বান : ২৭৭)
ফুযাইল বিন ই’য়ায রহ. বলেন

إني لأعصي الله؛ فأعرف ذلك في خُلُق دابتي وجاريتي

আমি যখন আল্লাহর নাফরমানি করি, তখন আমি এর কুপ্রভাব আমার গৃহপালিত পশু ও আমার পরিচারিকার আচরণ-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বুঝতে পারি। ( ইবনুল জাওযী, সায়দুল খাত্বির : ৩১)

৬. মুমিনদের অন্তরে তার ব্যাপারে ঘৃণা তৈরি হয়
অনবরত গোনাহে নিমজ্জিত ব্যক্তির ব্যাপারে মুমিনদের অন্তরে ঘৃণা তৈরি হয়।
আবুদ্দারদা রাযি. বলেন

إِنَّ الْعَبْدَ يَخْلُو بِمَعَاصِي اللَّهِ فَيُلْقِي اللَّهُ بُغْضَهُ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُ

বান্দা গোপনে আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করে। ফলে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের অন্তরে তার ব্যাপারে এমনভাবে ঘৃণা তৈরি করে দেন যে, সে টেরও পায় না। (ইবনুল কায়্যিম, আদ-দা ওয়াদদাওয়া : ১/৫২)

৭. চেহারা কুৎসিত ও শরীর দুর্বল হয়ে যায়
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. বলেন

إنَّ لِلسَّيِّئَةِ سَوادًا في الوَجْهِ، وظُلْمَةً في القَلْبِ ووَهَنًا في البَدَنِ، ونَقْصًا في الرِّزْقِ، وبُغْضَةً في قُلُوبِ الخَلْقِ

গোনাহের কাজ করলে চেহারা কুৎসিত হয়। অন্তর অন্ধকার হয়। দেহের শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। রিজিকের মধ্যে সঙ্কীর্ণতা দেখা দেয়। মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা ভাব জন্মায়। (রাওযাতুল মুহিব্বীন : ৪৪১)

৮. গোনাহ ছাড়া কঠিন হয়ে যায়
গোনাহের প্রথম পর্যায়ে আমরা ভাবি, আজ না হয় গোনাহটা করেই ফেলি। তারপর তা ছেড়ে দিয়ে তাওবা করে ফেলব। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো। কারণ একটি গোনাহ অন্য গোনাহের জন্ম দেয়। একটি গোনাহের কারণে আরেকটি গোনাহ সংঘটিত হয়। ফলে গোনাহ ছেড়ে রবের দিকে ফিরে আসা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. বলতেন, গোনাহ গোনাহকে টানে। এক গোনাহ আরেক গোনাহকে জন্ম দেয়। তাওবা করলে গোনাহ মাফ হয়ে গেলেও এর তাসির থেকে যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন

بَلَىٰ مَن كَسَبَ سَيِّئَةً وَأَحَاطَتْ بِهِ خَطِيئَتُهُ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

হ্যাঁ, যে ব্যক্তি গোনাহ উপার্জন করেছে এবং তার গোনাহ তাকে বেষ্টন করে নিয়েছে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী। (সূরা বাকারা : ৮১)

৯. অন্তর অন্ধকার হয়ে যায়
হাদীসে এসেছে, নবীজী ﷺ বলেন

إِنِ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ صُقِلَ قَلْبُهُ وَإِنْ زَادَ زَادَتْ حَتَّى تَعْلُوَ قَلْبَهُ فَذَلِكُمُ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ تَعَالَى كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يكسِبونَ

কোনো মানুষ যখন গোনাহ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। সাথে সাথে যদি তওবা করে ফেলে তাহলে সেই দাগ মিটে যায়। কিন্তু যদি তাওবা করার আগেই আরেকটি গোনাহ করে তাহলে আরো একটি দাগ পড়ে যায়। এভাবে দাগ পড়তে পড়তে অন্তরটা কালো কুচকুচে হয়ে যায়।
এটা সেই মরিচা যার ব্যাপারে কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এটা কক্ষনো নয়, বরং তাদের অন্তরের ওপর গোনাহের) মরিচা লেগে গেছে, যা তারা প্রতিনিয়ত উপার্জন করেছে’— সূরা আল মুতাফফিফীন : ১৪। (তিরমিযী : ৩৩৩৪)

১০. তাওবার সুযোগ হয় না
অনবরত গোনাহে নিমজ্জিত ব্যক্তির অন্তর শক্ত হয়ে যায়। ফলে তাওবার প্রয়োজনীয়তা তার অনুভব হয়না এবং মৃত্যুর সময় তাওবার সুযোগ হয় না। ইবনু রজব রহ. বলেন

أَنَّ خَاتِمَةَ السُّوءِ تَكُونُ بِسَبَبِ دَسِيسَةٍ بَاطِنَةٍ لِلْعَبْدِ لَا يَطَّلِعُ عَلَيْهَا النَّاسُ

মৃত্যুর সময় অশুভ পরিণতির কারণ বান্দার গোপন গোনাহ, যা সম্পর্কে মানুষ জানত না। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/১৭২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন আমীন।