শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
কায়রো কনফারেন্সের প্রোগ্রাম অব এ্যাকশন
১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ ইং। জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে কায়রোতে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হয়েছিল। কনফারেন্সের বিষয়বস্তু ছিল– নাগরিক উন্নয়ন ও পরিবার পরিকল্পনা। এ বিষয়বস্তুটি ছিল উক্ত প্রোগ্রামের বাহ্যিক বিষয়বস্তু। মূলত এ বিষয়বস্তুর মাঝে লুকিয়ে ছিল, মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। মুসলমানদের স্বাতন্ত্র-দেয়াল ভেঙ্গে দেয়াই ছিল উক্ত প্রোগ্রামের আসল উদ্দেশ্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে লজ্জা শালীনতা ও সতীত্বের মত পবিত্র মূল্যবোধ মুসলমানরা লালন করে আসছে সেগুলোকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়াই ছিল উক্ত কনফারেন্সের প্রোগ্রাম অব এ্যাকশন। উক্ত প্রোগ্রামের পুরো বিবরণ তো এ সংক্ষিপ্ত সময়ে দেয়া সম্ভব নয়; তাই এর দু’ একটি বিষয় উপস্থাপন করছি– যাতে ষড়যন্ত্রের গভীরতা আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়।
যেমন, সেখানে একটি প্রস্তাব ছিল, শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে যৌন শিক্ষা (Sex Education) দানের ব্যবস্থা করা হোক। কনডমসহ অন্যান্য গর্ভরোধক সহজলভ্য করা হোক। অধিকহারে এমন পরামর্শকেন্দ্রসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হোক যেগুলোতে বিবাহিত-অবিবাহিত সকলকেই যৌনতথ্য সরবরাহ করা যাবে। আর এ লক্ষে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম! মূলত গোটা পাশ্চাত্যসমাজ আজ অপবিত্রতা ও নগ্নতার উত্তাপে ছাই হয়ে গেছে। তাদের সমাজে পরিচয় দেয়ার মত বাবা নেই, ভাই নেই, চাচা নেই, মামা নেই, দাদা নেই, নানা নেই। আছে শুধুই ফ্রেন্ড। মা-বাবার রূপ, ভাই-বোনের রূপ, স্বামী-স্ত্রীর রূপ তাদের সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। এখন তাদের আছে শুধু গার্লফ্রেন্ড কিংবা বয়ফ্রেন্ড। যার ফলে তাদের সমাজের নারী ও পুরুষ পেয়ে গেল চাহিদা পুরণের অবাধ সুযোগ। এজন্যই তাদের দেশগুলোতে সেক্স এডুক্যাশন এক স্বাভাবিক কালচার। কিন্তু মুসলমানদের কাছে এগুলো কখনও স্বাভাবিক কালচার হতে পারে না। তারা আমাদেরকে পথহারা করতে চায়। তাদের অসভ্যতা সভ্যতার নামে আমাদের জীবনে ছড়িয়ে দিতে চায়। কায়রো কনফারেন্সের প্রোগ্রাম অব এ্যাকশনের মাধ্যমে আমাদের সামনে মূলত এই কঠিন বাস্তবতাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এক ইউরোপিয়ান তরুণীর কান্না
একবার তাবলীগ জামাতের একটি দল এডমবরা গিয়েছিল। মসজিদে সবেমাত্র মাগরিবের নামাজ শেষ হয়েছে। এক তরুণী এসে জামাতের একজনকে জিজ্ঞেস করল, ইংরেজি জানো? লোকটি বলল, হ্যাঁ, জানি। মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, তোমরা এখানে কী করলে? লোকটি উত্তর দিল, আমরা ইবাদত করেছি। মেয়েটি বলল, আজ আবার কিসের ইবাদত, আজ তো রোববার নয়? জামাতের লোকটি উত্তর দিল, আমরা আল্লাহর ইবাদত প্রতি দিন পাঁচ বার করি। এরপর লোকটি মেয়েটিকে ইসলাম সম্পর্কে আরো কিছু ধারণা দিল। লোকটি ছিল যুবক। তার কথাবার্তা শোনার পর মেয়েটি হ্যান্ডশেক করার জন্য তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। জামাতের যুবকটি তখন বিনয়ের সঙ্গে বলল, দুঃখিত, আমি তোমার সঙ্গে হাত মেলাতে পারব না। মেয়েটি আশ্চর্য জিজ্ঞেস করল, কেন? যুবক উত্তর দিল, এই হাত দিয়ে আমি কেবল আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করি। এ ছাড়া অন্য কোন নারীকে স্পর্শ করি না। এটা আমার স্ত্রীর আমানত। এ কথা শোনার পর মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদতে থাকে এবং কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে। সে বিলাপ করে বলতে থাকে, তুমি যে মেয়ের স্বামী সে খুব ভাগ্যবান। আহা! আমাদের ইউরোপের পুরুষরা যদি এমন হত!
একটি জরিপ
সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম! এটা হল তাদের নারী স্বাধীনতার মূল্য। এ কেবল একজন তরুণীর কান্না ছিল না। বরং মূলত এটি ছিল গোটা পাশ্চাত্যসমাজের নারীসমাজের কান্না–যা বের হয়ে এসেছে এক তরুণীর কণ্ঠ থেকে। গত ২০০০ সালে একটা জরিপ চালানো হয়েছিল। জরিপে দেখা গেছে, সেখানকার মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তোমরা ঘরে থাকতে চাও না ঘরের বাইরে কাজ করতে চাও? তখন তাদের শতকরা আটানব্বই জন উত্তর দিয়েছিল, আমরা ঘরে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু সমস্যা হল, আমরা আজ অসহায়। আমাদের ঘরে আমাদের পেছনে স্বামী নেই, ভাই নেই, বাবা নেই। বয়ফ্রেন্ডরা তাদের নিজেদের গরজ শেষ হবার পর আমাদেরকে টিস্যু পেপারের মত বাইরে ছুঁড়ে মারে। ফলে আমাদের হৃদয়ের ব্যথা শোনার মত কেউ থাকে না।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস–অবাধ যৌনাচার দিবস
বিশ্বাস করুন, এই চিত্রটা অত্যন্ত করুণ। এই করুণ চিত্রের মাঝেই বর্তমান পশ্চিমাদের বসবাস। তাই তারা চাচ্ছে, তারা যে আযাব ও গজবের শিকার হয়েছে, আমাদের তরুণ তরুণীরাও যেন তার শিকার হয়। অথচ এর বিপরীতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন এক পবিত্র জীবনবিধান। তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যৌবনের পবিত্রতা রক্ষার জন্য বিয়ে কর, যৌবনকে পবিত্র রাখো। আর আল্লাহ বলেছেন, وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল ৩২)
এ হল আল্লাহর নির্দেশ। মনে রাখবেন, যে দেশে যে সমাজে যে শহরে যে এলাকায় পর্দাহীনতা গানবাজনা টিভিভিসিয়ার ডিশক্যাবল অবাধ ইন্টারনেট ও নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা ব্যাপক হয়ে পড়ে, সেখানে ব্যভিচার ডেকে আনতে হয় না; বরং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ বলেছেন, জীবন ও যৌবনকে পবিত্র রাখতে হলে তোমরা لَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ এসব নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য। (সূরা আনআ’ম ১৫১)
ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা তথাকথিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও এমনই একটি নির্লজ্জতার দিবস–যা তরুণ-তরুণীকে অবাধ যৌনাচারের প্রতি ঠেলে দেয়। এজন্য আমরা বলব, এটা ভালোবাসা দিবস নয়; বরং মূলত এটা অবাধ যৌনাচার দিবস। এটি কপোত-কপোতির অবৈধ রোম্যান্স চর্চার নোংরা দিবস।
দিবস নয়; আগ্রাসন
আরো স্পষ্ট বললে বলতে হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা দিবস নয়; বরং আগ্রাসন। আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য চারিত্রিক মাধুর্য ও সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে দেয়ার জন্য পশ্চিমাদের এক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের নামই হল–ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা তথাকথিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
কায়রো সম্মেলনের মত সম্মেলনগুলোতে গৃহীত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্যই মুসলিম দেশগুলোতে তারা নতুন এ দিবসের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নরনারীর বিবাহপূর্ব অবৈধ সম্পর্কের ব্যবস্থা মুসলিম দেশগুলোতেও চালু করতে চাচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশে। যায়যায় দিন নামক একটি পত্রিকা সর্ব প্রথম এ দেশে এ দিবসটির আমদানি করেছে। তারপর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো কয়েকটি পত্রিকা ম্যাগাজিন ও রেডিও-টিভি চ্যানেল। অন্যথায় এ দেশের যুবসমাজ এ অপদিবসটির সঙ্গে পরিচিত ছিল না।
প্রশ্ন জাগে, ১- এ দিবসের ইতিবৃত্ত কী? কোত্থেকে শুরু হয় এ দিবস উদযাপন? ২- দিবসটি পালনের মূল ইন্ধনদাতা কারা? ৩- দিবসটি পালন করা যাবে না কেন? ৪- দিবসটি পালনের প্রভাব ও পরিণাম কী?
আজ আপনাদের সামনে এই চারটি পয়েন্টে আলোচনা করব–ইনশা আল্লাহ।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে‘র সূচনা
প্রথম প্রশ্ন হল, দিবসটির ইতিবৃত্ত কী? বা এটি কিভাবে শুরু হয়? মূলত এর সূচনা নিয়ে অনেক গল্প আছে। সবচে’ বহুল প্রচলিত গল্প হল, ক্লডিয়াসের সেনাবাহিনীকে নিয়ে। তৃতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের শখ হল, বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলার। কিন্তু জনগণ পরিবারপরিজনের প্রতি দুর্বলতার কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইত না। সম্রাট তখন বের করলেন নতুন পথ। আইন জারি করলেন, বিয়ের উপর। তরুণপ্রজন্ম বিষয়টি মেনে নিতে পারল না। তখন এগিয়ে এল, সম্রাটের পাদ্রী, যার নাম ছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। গোপনে তরুণ-তরুণীদের প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ করত সে। সম্রাট খবর পেয়ে ক্রূব্ধ হয়ে ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দিলেন। জেলে থাকা অবস্থায় সে জেলারের কন্যার প্রেমে পড়ে। জেলের মধ্যে সে মেয়েটির সঙ্গে গল্প করত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এরই মধ্যে শাস্তি হিসেবে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল। মৃত্যুর আগে সে প্রেমিকদের উদ্দেশ্যে একটি চিরকুট লিখে। চিরকুটটিতে লেখা চিল–লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন। এই ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর দিনটিই ভালোবাসা দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়। দিনটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
ভিন্ন বক্তব্য
কিছু গবেষকের লেখায়, অন্য রকম ইতিহাস পাওয়া যায়। যীশু খ্রিস্টের জন্মের আগে পৌত্তলিকদের মাঝে বিভিন্ন দেব-দেবীর পুজার প্রচলন ছিল। পশু পাখির জন্য একটি দেবতা, গ্রীস্মকালের জন্য আলাদা দেবতা, শীতকালের জন্য ভিন্ন দেবতা, ঝড় বৃষ্টির জন্য স্বতন্ত্র দেবতা–এভাবে তাদের বিভিন্ন দেবতা ছিল। লুপারকালিয়া নামক একটি দেবতা ছিল ধান গম শস্য ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য। এ দেবতার নামে তারা একটি পূজার অনুষ্ঠান করত। অনুষ্ঠানে যুবতী-তরুণীদের মাঝে লটারি দেয়া হত। লটারিতে যে যুবতী যে যুবকের ভাগে পড়ত এক বছর পর্যন্ত সে তাকে ভোগ করত। অনুষ্ঠানে যুবকটি দেবতার নামে একটি পশু জবাই করত। জবাইকৃত পশুটির চামড়া যুবতীর গায়ে জড়িয়ে দেয়া হত। যুবক একটি চাবুক নিয়ে যুবতীর গায়ে চামড়ার উপর দিয়ে আঘাত করত। আর মনে করত, এর মাধ্যমে যুবতীটি সন্তানদানের উপযুক্ত হবে। আর এই পুরো অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হত ১৪ ফেব্রুয়ারী।
এরপর এল খ্রিস্টধর্ম। খ্রিস্টধর্ম ছিল ওই যুগের সত্য ধর্ম–আসমানি ধর্ম। তাই খ্রিস্টধর্ম পৌত্তলিকদের এ অনুষ্ঠান সমর্থন করল না। খ্রিস্টধর্মের পাদ্রীরা জনগণকে বুঝালো, এটা মূর্তির ধর্মের অনুষ্ঠান; খ্রিস্টধর্মের নয়। কিন্তু অধিকাংশই এই অনুষ্ঠান বর্জন করতে রাজি হল না। তাই পাদ্রীরা এই অনুষ্ঠানকে বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করল। তবে চেষ্টাটা ছিল ভুল পথে। তারা বলল, অনুষ্ঠানটি দেবতার নামে না হয়ে পাদ্রীদের নামে হোক। লটারিও যুবতীর নামে না হয়ে পাদ্রীদের নামে হোক। অবশেষে পাদ্রীদের নামে লটারি চালু করা হল। লটারিতে যে যুবক বা যুবতী যে পাদ্রীর ভাগে পড়ত সে তার সংস্পর্শে এক বছর থাকত, যাতে তার চরিত্র ভাল হয়।
৪৭৬ সনে পোপ জেলিয়াস বলল, অনুস্থানের ধরণ যেহেতু পরিবর্তন করা হয়েছে সুতরাং এর নামও পরিবর্তন করা হোক। আগে দেবতার নামে অনুষ্ঠানটি চলত এখন একজন পাদ্রীর নামে চলবে। অবশেষে ভ্যালেন্টাইন ছিল সে পাদ্রী যার নামে অনুষ্ঠানটি নতুন রূপে আসে। শেষ পর্যন্ত ৪৭৬ সনের পোপ জেলিয়াসের প্রস্তাবটি আরো বিশ বছর পর অর্থাৎ ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে এটি আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়।
ইতিহাসের সার
ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা তথাকথিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইতিহাসের সার আমরা কী পেলাম? আমরা এখানে কয়েকটি বিষয় পেয়েছি।
১- দিবসটি একজন খ্রিস্টান পাদ্রী বা পোপের আবিস্কার; যা একজন মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস কখনও সমর্থন করতে পারে না। অথবা বলতে পারি–
২- দিবসটি মূলত মূর্তিপূজার ধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের যৌথ আবিস্কার; যার সঙ্গে ইসালমের কোনো আপোস নেই। বিষয়টির মুল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক ড্রেপার মন্তব্য করেছিলেন, একজন খ্রিস্টান ও একজন মুসলিমের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হল, খ্রিস্টান মূর্তিপূজার সংস্কৃতির সঙ্গে আপোস করতে পারে; পক্ষান্তরে মুসলিম তা পারে না।
৩- দিবসটি যুবক ও যুবতীর অবাধ যৌনাচারের মাধ্যমে অস্তিত্বে আসে; যা একজন মুসলমানের আত্মমর্যাদাবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
দিবসটি উদযাপনের মূল ইন্ধনদাতা কারা?
দিবসটি উদযাপনের মূল ইন্ধনদাতা কারা? এটা ছিল, আজকের আলোচনার দ্বিতীয় পয়েন্ট। আসলে মুসলমানদের চরিত্র নষ্ট করার পাশাপাশি এর মধ্যে পুঁজিবাদীদের স্বার্থও নিহিত আছে। ভালোবাসা দিবসের আড়ালে এটা তাদের রমরমা বাণিজ্যও বটে। দৈনিক প্রথম আলো ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০০৯-এ একজন কলামিস্ট লিখেছেন, ‘বিশ্বে প্রতি বছর দিবসটিতে এক বিলিয়নের অধিক কার্ড বিক্রি হয়। ফুল বিক্রি হয় ১১০ মিলিয়ন।’ এছাড়াও নতুন কাপড় ( লাল রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবী বিশেষ করে ) রেস্তোরা , ক্যান্ডি এর যে বিশাল বানিজ্য হয় সেই কথা কারো অজানা নয়। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তো আরও এক ধাপ এগিয়ে। এমনকি বিমানেও থাকে বিভিন্ন ভ্যালেন্টাইন্স অফার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হবে, তাদের কাছে এটি যেন কর্পোরেট বানিজ্য দিবস।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, দিবসটি পুঁজিবাদীদের জন্য শোষণের একটি হাতিয়ারও। মুসলিম বিশ্বকে শোষণ করার অসংখ্য হাতিয়ারের মধ্যে এটিও একটি হাতিয়ার। মার্কিন সমাজের ইয়াংকি ব্যবসায়ীরা এজন্যই ১৮৪০ সনে দিবসটিকে বাণিজ্যিক রূপ দেয়। এটি উদযাপনের মূল ইন্ধনদাতা এই মার্কিন সমাজ।
দিবসটি উদযাপন করা যাবে কি?
আজকের আলোচনার তৃতীয় পয়েন্ট হল, দিবসটি উদযাপন করা যাবে কি? এক কথায় এর উত্তর হল, না এবং না এবং না। কেননা, যে দিবসটির সঙ্গে মূর্তিপূজার সংস্কৃতি জড়িত, লটারি জড়িত, অবাধ যৌনাচার জড়িত, পৌত্তলিক সংস্কৃতির সঙ্গে খ্রিষ্টানদের আপোসকামিতা জড়িত, বিজাতীয় সংস্কৃতি জড়িত এবং যে দিবসটির কারণে আমরা শোষণের পাত্র হচ্ছি; এমন একটি নোংরা জঘন্য দিবস উদযাপনের অনুমতি ইসলাম আপনাকে মোটেও দিতে পারে না। এমনকি মজা করার উদ্দেশ্যেও এটি উদযাপন করা যাবে না। কারণ, এক বছর হয়ত মজা করলেন, পরের বছর দেখা যাবে তা বাস্তবতার পোশাক পরে আপনার জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। বরং যারা দিবসটি উদযাপন করে তাদেরকে সাধ্যমত বাধা দেয়া আপনার জন্য ফরজ। এটি ভালোবাসা দিবসের নামে ঈমান বিধ্বংসী দিবস বিধায় কোনোভাবেই এটি উদযাপন করা যাবে না। কোনো মুসলমান এটি গ্রহণ করতে পারে না। ঈমান-আকিদা তো ফুটবল বা ক্রিকেট নয় যে, এ নিয়ে খেলা করা হবে!
তাছাড়া দিবসটি বিবাহপূর্ব ভালবাসার প্রতি যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে। আর বিবাহপূর্ব ভালবাসা মানেই হল, বিভিন্ন হোটেলে, পার্কে, রেস্তোরাঁয়, শিক্ষাঙ্গনে ও বিভিন্ন বিনোদন স্পটে যুবক-যুবতীর চ্যাটিং-ডেটিং-ইটিং-সেটিং ও অবশেষে চিটিং করা। আর এ ভাবেই উন্মুক্ত হয় ব্যভিচারের পথ। অথচ আল্লাহ বলেছেন, وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল ৩২) তিনি আরো বলেছেন, لَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ তোমরা অশ্লীল কাজের কাছেও যেও না। (সূরা আনআ’ম ১৫১)
অশ্লীল কাজ কাকে বলে?
অশ্লীল কাজ কাকে বলে? যে সকল কর্ম ও আচরণ মানুষকে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও ব্যভিচারের প্রতি আকৃষ্ট করে তাকেই অশ্লীল কর্ম বলা হয়। বিবাহপূর্ব প্রেম যেখানে থাকবে সেখানে ব্যভিচার, ধর্ষণ এমনকি হত্যার মত অপরাধ সেখানে ঘটবেই। তাই আল্লাহ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা থেকে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। অন্যত্র তিনি বলেছেন,