সুতরাং একজন মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত সতর্ক থাকা দরকার। একজন মুমিন মরণ পর্যন্ত ঈমান নামক এই মহান সম্পদের প্রতি যত্ন নিতে হয়। শত্রুদের শত্রুতা, হিংসুকদের হিংসা, চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত ও কুদৃষ্টি দানকারীদের কুদৃষ্টি থেকে নিজের ঈমানটাকে সযত্নে আগলে রাখতে হয়।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيْمِ، وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ اْلآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ. وجَعَلَنِيْ وَإِيَّاكُمْ مِنَ الصَّالِحِينَ. أَقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِيْنَ. فَاسْتَغْفِرُوْهُ، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ.اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
হামদ সালাতের পর!
মুহতারাম হাজেরীন! প্রথমেই আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করছি, তিনি আমাদেরকে ঈমানের মতো মহান দৌলত দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ তাআলার অগণিত নেয়ামত
মুহতারাম হাজেরীন! আমরা আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। তিনি চোখ না দিলে অন্ধ হতাম। কান না দিলে বধির হতাম। যবান না দিলে বোবা হতাম। সন্তান না দিলে নিঃসন্তান হতাম। ইজ্জত না দিলে লাঞ্চিত হতাম। সম্পদ না দিলে ফকির হতাম। ঈমান না দিলে বেঈমান হতাম। শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত না বানালে না জানি অন্য কোন্ নবীর উম্মত হতাম!
সবচেয়ে বড় নেয়ামত
আল্লাহপ্রদত্ত এ সকল নেয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হল ঈমানের নেয়ামত। কেননা এই ঈমানের ওপরই দুনিয়ার সাফল্য ও আখেরাতের নাজাত নির্ভরশীল। আল্লাহ তাআলা বলেন
অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে। [সূরা মুমিনূন : ০১]
রাসূলুল্লাহ ﷺ উমর রাযি.-কে বলেছেন
হে খাত্তাবের পুত্র! যাও লোকেদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, জান্নাতে কেবলমাত্র মুমিনরাই প্রবেশ করবে। [সহীহ মুসলিম : ১১৪]
নেয়ামত সম্পর্কে দুই করণীয়
মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাব হল, সে চায় যে নেয়ামত সে লাভ করেছে, তা যেন স্থায়ী হয়। আর এর জন্য করণীয় হল দু’টি।
১. নেয়ামতের প্রতি যত্ন নেওয়া।
২. নেয়ামতটি যেন হারিয়ে না যায় এর জন্য সতর্ক থাকা।
যেহেতু ঈমান সবচেয়ে বড় নেয়ামত, সুতরাং ঈমানের প্রতিও সর্বোচ্চ যত্ন নিতে হবে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে, যেন এটি কোনো কারণে হারিয়ে না যায়।
একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়টিকে আমরা আরো সহজে বুঝে নিতে পারি। মনে করুন, এক ব্যক্তি কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে। সে ভালো করেই জানে, সমুদ্র-ভ্রমণ কতটা বিপদ-সংকুল হয়। একদিকে রয়েছে ঝড়-তুফানের ভয়। সমুদ্র যে কোনো সময় উত্তাল হয়ে উঠতে পারে, সম্পদসহ তার জাহাজ ডুবে যেতে পারে। অপরদিকে রয়েছে জলদস্যুর ভয় কিংবা কুমির ও হাঙ্গরের মত হিংস্র সামুদ্রিক-প্রাণীর ভয়।
এমতাবস্থায় লোকটি কী করে? সে ভ্রমণকালীন পুরো সময়টাতে সতর্ক থাকে। যত্নের সঙ্গে সম্পদগুলোকে হেফাজত করে। এক কথায়, সব সময় সে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছার চিন্তায় অস্থির থাকে।
অনুরূপভাবে একজন মুমিনের মূল গন্তব্য আখেরাতপানে। দুনিয়ার সময়টা তার জন্য সামুদ্রিক-ভ্রমণের মত। তার সময় কিংবা জীবনটা জাহাজের মত। এই সফরে তার সঙ্গে রয়েছে তার জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদ ঈমান। যা নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, পৌত্তলিকতা ও কাদিয়ানী মতবাদের মত বহু ঝড় ও তুফান। রয়েছে ইবলিশের মত নির্দয় দস্যু, বেঈমান ও কাফের নামক বিভিন্ন হিংস্র কুমির, নফস নামক ভয়াল হাঙ্গর।
সুতরাং একজন মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত সতর্ক থাকা দরকার। একজন মুমিন মরণ পর্যন্ত ঈমান নামক এই মহান সম্পদের প্রতি যত্ন নিতে হয়। শত্রুদের শত্রুতা, হিংসুকদের হিংসা, চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত ও কুদৃষ্টি দানকারীদের কুদৃষ্টি থেকে নিজের ঈমানটাকে সযত্নে আগলে রাখতে হয়।
একটি শিক্ষণীয় ঘটনা
ইমাম শামসুদ্দীন আস-সাফিরী রহ. ছিলেন সহীহ বুখারীর একজন ব্যাখ্যাকার। তিনি হৃদয়-জগৎ নাড়া দেয়ার মত একটি ঘটনা লিখেছেন।
তিন জন আবেদ ছিল। যারা ছিল পরস্পরের বন্ধু। তারা হজ্জের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছিল। পথিমধ্যে রাত্রি যাপন করার জন্য তারা একটি গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করল। গ্রামের অধিবাসীরা ছিল খ্রিস্টান। এরই মধ্যে তাদের একজনের দৃষ্টি পড়ল একটি খ্রিস্টান মেয়ের প্রতি। মেয়েটি ছিল যথেষ্ট সুন্দরী। এই লোক মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেল। তাই সে তার বন্ধুদের বলল, তোমরা চলে যাও। আমি এখানেই থাকব।
তারা উভয়ে লোকটিকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল; কিন্তু লোকটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। অগত্যা তারা দু’জন চলে গেল।
তারপর লোকটা মেয়েটার বাবার নিকটে গিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দিল। বাবা উত্তর দিল, তোমাকে দেখে সুঠাম পরিমশ্রমী ও বিচক্ষণ মনে হয়। তাই তোমার নিকট আমার মেয়ে বিয়ে দিব। তবে আমার দুটি শর্ত আছে। প্রথমত তোমাকে ইসলাম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত আজীবনের জন্য তোমাকে এই গ্রামে থেকে যেতে হবে।
লোকটা মেয়েটির বাবার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল এবং উক্ত দুই শর্ত মেনে মেয়েটিকে বিয়ে করে নিল।
অপরদিকে লোকটার অপর দুই বন্ধু যথারীতি হজ্জ পালন করে নিজেদের এলাকায় ফিরে আসল। দেখল, তাদের ওই বন্ধু এখনও ফিরে আসেনি। এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল। এমনকি তারা বৃদ্ধ হয়ে গেল।
বহু বছর পর বৃদ্ধাবস্থায় একদিন এই দুই বন্ধু বসে গল্প করছিল। ইত্যবসরে এক বন্ধু বলে ওঠে, আচ্ছা! আমরা তো তিন বন্ধু ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, দুই বন্ধু এখনও আছি। কিন্তু আমাদের তৃতীয় বন্ধু আজ আমাদের সাথে নেই। সে তো আমাদের সঙ্গে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়ে অমুক এলাকায় রয়ে গিয়েছিল। না-জানি এখন সে কী অবস্থায় আছে! চলো, আমরা একটু সেখানে যাই। তার খোঁজখবর নিয়ে আসি।
তারপর একদিন এই দুই বন্ধু সত্যি সত্যি ওই এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা হল, যেখানে বহু বছর আগে তাদের এক বন্ধুকে রেখে এসেছিল। ওই এলাকায় যেয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে তাদের বন্ধুর ঠিকানা বের করল। কিন্তু আফসোসের বিষয় ছিল এই যে, তারা জানতে পারল, তাদের বন্ধু মাত্র কয়েকদিন আগে মারা গিয়েছে। আরো আফসোসের বিষয় ছিল এই যে, তাকে খ্রিস্টানদের কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়েছে।
এহেন দুঃখজনক সংবাদ শুনে এই দুই বন্ধু নিদারুণ ব্যথিত হল। তারপর চিন্তা করল যে, এসেই যখন গিয়েছি, তার কবরটা একটু দেখে যাই।
এই চিন্তা করে তারা তাদের এই বন্ধুর কবরে গেল। যেয়ে দেখতে পেল, সেখানে একজন বৃদ্ধা এবং দুইজন যুবক বসে বসে কাঁদছে। এই দুই বন্ধুও খুব কান্না করল।
অপরদিকে বৃদ্ধা মনে মনে ভাবল, আমি কাঁদছি, কেননা যে লোকটি এই কবরে আছে সে আমার স্বামী। আর এই দুই যুবক কাঁদছে, যেহেতু তারা আমাদের সন্তান; লোকটি তার বাবা। কিন্তু এই দুই অপরিচিত বৃদ্ধলোক কাঁদছে কেন?
এই চিন্তা থেকে উক্ত বৃদ্ধা লোক দু’টিকে বলল, আপনারা কেন কাঁদছেন? কবরের লোকটি আপনাদের কী লাগে?
তখন এই দুইজন পুরো ঘটনা শোনালো।
বৃদ্ধা তখন উত্তর দিল, আপনারা তো ঘটনা যা বলেছেন, তা-ই জানেন। বাকিটা জানেন না। বাকিটা আমার কাছ থেকে শুনেন। আপনাদের বন্ধু যৌবনকালে যে মেয়েটির প্রেমে পড়ে নিজের ধর্ম ও বাড়িঘর ত্যাগ করেছিল, সে মেয়েটি আমি। আমার যৌবনকালের ঘটনা। আপনাদের বন্ধু আমার বাবার কথা মেনে নিয়ে আমাকে বিয়ে করেছিল। তারপর যথারীতি আমাদের সংসার হয়। এই দুই যুবক আমাদেরই সন্তান। তবে আপনাদের কথা শুনে ও কান্না দেখে আমার অন্তরে এই বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে, ইসলামই সত্যধর্ম। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম অসার ও মিথ্যা। তাই আমি আপনাদের স্বাক্ষী রেখে এখনই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চাচ্ছি। আপনারা আমাকে কালেমা শাহাদাহ পড়িয়ে দিন।
উক্ত ঘটনা দেখার পর ওই দুই যুবক এগিয়ে এসে বলল, আমাদের মা বুদ্ধিমতী। তার বুদ্ধির প্রশংসা সবাই করে। সুতরাং আমাদের মা ইসলাম গ্রহণ করছেন তো জেনেশুনেই করছেন। আমরাও আমাদের মায়ের মত ইসলাম গ্রহণ করতে চাই। আমাদেরকেও কালিমা শাহাদাহ পড়িয়ে দিন।
এভাবে তিন জনই খ্রিস্টধর্ম থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল।
উক্ত ঘটনা উল্লেখ করার পর ইমাম শামসুদ্দীন আস-সাফিরী রহ. মন্তব্য করেন
একমাত্র পবিত্র সত্তা আল্লাহ। যে-ব্যক্তি মুসলিম ছিল সে কাফের হয়ে মারা গেল। আর যে কাফের ছিল তার ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য হল। সুতরাং বোঝা গেল, মুসলিম-ব্যক্তির নিজের শেষ পরিণতি নিয়ে ভীত থাকা উচিত। আর আল্লাহর নিকট শুভ-মৃত্যুর দোয়া করা উচিত। [আল-মাজালিসুল ওয়া’জিয়্যাহ : ১/২৮৭]
জনৈক আল্লাহওয়ালার অবস্থা
জনৈক আল্লাহওয়ালার ঘটনা অনেকের মুখে শুনেছি। এক ব্যক্তি তাকে উপহাস করে বলেছিল, কোনটি উত্তম আপনার দাড়ি না আমার ছাগলের দাড়ি?
লোকটি যদিও প্রশ্নটা করেছিল উক্ত আল্লাহওয়ালাকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিলেন এবং বললেন, আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি এখন দিতে পারবো না। কেননা আমার তো জানা নেই যে, আমার শেষ পরিণতি কী হবে? আমি ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারব কিনা? যদি আমার শেষ অবস্থা ভালো না হয় এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু না হয়, তাহলে আমি ছাগলটির দাড়ি কেন; বরং তখন আমি শূকর-কুকুর থেকেও নিকৃষ্ট! আর যদি আমার শেষ অবস্থা ভালো হয় এবং ঈমানসহ মরণ হয় তাহলে এই ছাগলটির দাড়ি কেন; বরং তখন গোটা দুনিয়া ও তার মাঝে অবস্থিত সবকিছুর চেয়ে আমার দাম বেশি হবে।
শেষ ভালো যার, সব ভালো তার
এজন্যই হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
নিশ্চয়ই ভালো মন্দ নির্ভর করে তার শেষ অবস্থার উপর। [সহীহ বুখারী : ৬৬০৭]
অপর হাদীসে তিনি বলেন
যে-ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে এবং জান্নাতে প্রবেশ লাভ করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন আল্লাহর প্রতি ও আখেরাত দিবসের প্রতি ঈমানদার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। [নাসায়ী : ৪২০২]
শুভ-মৃত্যু লাভের আমল
মুহতারাম হাজিরীন! এতক্ষণের আলোচনায় ঈমানের গুরুত্ব মর্যাদা ও মরণ পর্যন্ত নিজের ঈমান হেফাজত করার অসীম প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও আমরা অনুধাবন করেছি। তাই আজকের মজলিসে এমন দশটি আমলের কথা শোনাতে চাই, যেগুলোর ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেছেন এই আমলগুলো নিয়মিত করতে পারলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা ঈমানের সঙ্গে হুসনুল খাতিমা বা ভালো মৃত্যু দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
মনে রাখতে হবে, এ বিষয়ে এই আমলগুলোই একমাত্র নয়; এ বিষয়ে আরো আমল আছে। বরং যে কোনো নেক আমলই ঈমানকে তাজা করে এবং হুসনুল খাতিমা বা ভালো মৃত্যুর ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন
যারা নেক আমল করে তাদের জন্য আছে জান্নাত এবং আরও বেশি পুরস্কার। [সূরা ইউনুস: ২৬]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
সমূহ নেক আমল অশুভ পরিণতি থেকে হেফাজত করে। [তাবরানী : ৬০৮৬]
আল্লাহ যদি কোনো বান্দার কল্যাণ চান
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
আল্লাহ যদি কোনো বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে কাজে লাগান।
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিভাবে আল্লাহ বান্দাকে কাজে লাগান?
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মৃত্যুর পূর্বে তাকে ভালো কাজ করার তাওফীক দেন। [তিরমিযী : ২১৪২]
এক. নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া
ঈমানের সঙ্গে নামাজের সম্পর্ক কতটা গভীর তা বোঝার জন্য কুরআন মাজিদের একটি আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন। যেখানে আল্লাহ তাআলা নামাজকে ঈমান বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন
আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান তথা নামাজ নষ্ট করে দিবেন। [সূরা বাকারা : ১৪৩]
আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট ছিল এই যে, আমরা জানি, ইসলামে প্রথম কিবলা ছিল বাইতুল মুকাদ্দাস। সাহাবায়ে কেরাম বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে দীর্ঘ ষোল মাস পর্যন্ত নামাজ আদায় করেছিলেন। এরপর আসলো কিবলা পরিবর্তনের বিধান। কা’বাকে স্থায়ীভাবে কিবলা করে দেওয়া হল। ফলে কিছু সাহাবীর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, যেসব মুসলিম ইতোমধ্যে ইন্তেকাল করেছেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করে গিয়েছেন। কা’বা শরীফের দিকে নামাজ পড়ার সুযোগ তাঁদের হয়নি। তাদের কী হবে? এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করে বলেন, আল্লাহ এমন নন যে, তাদের ঈমান তথা নামাজ নষ্ট করে দিবেন।
অর্থাৎ যারা কিবলা পরিবর্তন হওয়ার আগে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে নামাজ আদায় করেছিল, ওই নামাজগুলো ব্যর্থ হবে না। বরং তারা এর পরিপূর্ণ সওয়াব পাবে। এখানে নামাজকে বোঝানোর জন্য আল্লাহ তাআলা ঈমান শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়, নামাজ ব্যতীত ঈমানের কোনো মূল্য নেই। ঈমান তখনই ঈমান বলে গণ্য হবে যখন নামাজের প্রতি যত্ন নেওয়া হবে।
মুমিন মানেই নামাজী
যেমন ফিকহের ইমাম আবু ইউসুফ রহ. সম্পর্কে বলা হয়, আবু ইউসুফ মানে আবু হানিফা। অর্থাৎ যদিও ইমাম আবু ইউসুফ রহ. ইমাম আবু হানিফা রহ. নন; তবে তিনি হানাফী মাযহাবের এত বড় ভাষ্যকার যে, কেমন যেন তিনিই ইমাম আবু হানিফা রহ.।
অনুরূপভাবে যদিও নামাজ ঈমানের রুকন নয়; তবে ঈমানের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, কেমন যেন নামাজই ঈমান এবং মুমিন মানেই নামাজী। নামাজ ব্যতীত ঈমানের কোনো মূল্য নেই।
বে-নামাজীর ঈমান
সুতরাং যে নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেয় না নিঃসন্দেহে তার ঈমান অতিশয় দুর্বল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ পরিত্যাগ করা। [সহীহ মুসলিম : ৮২]
বে-নামাজীর ঈমানের দৃষ্টান্ত
বে-নামাজীর ঈমান কচু পাতার উপর ভেসে থাকা পানির মতো। কচু পাতার উপর পানি পড়লে স্থির থাকে না। অনুরূপভাবে বে-নামাজীর ঈমানও স্থিতিশীল হয় না। এজন্যই দেখবেন, সমাজের যে লোকগুলোর সম্পর্ক মাজারের সঙ্গে থাকে, তাদের সম্পর্ক মসজিদের সাথে থাকে না। পক্ষান্তরে যাদের সম্পর্ক মসজিদের সঙ্গে থাকে, মাজার-পূজার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকে না।
আল্লামা ইকবাল চমৎকার বলেছেন
ہزار سجدے سے دیتا ہے آدمی کو نجات
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলাকে সেজদা দেওয়ার বিষয়টিকে তুমি সাধারণ মনে করতে পারো, কিন্তু মূলত এটি সাধারণ নয়। বরং এ সেজদাই তোমাকে হাজারো সেজদা থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
সুতরাং যদি নিজেকে ঈমানদার মনে করেন তাহলে নামাজ পড়তেই হবে। দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে ইশারায়; যে অবস্থায় সম্ভব নামাজ ছাড়া যাবে না। ঘরে-বাইরে পথে-ঘাটে দেশে-বিদেশে সাগরে-মহাকাশে যেখানেই অবস্থান করেন; নামাজ পড়তেই হবে।
খুশি মনে নামাজ আদায় করার পুরস্কার
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. বলতেন, যে-ব্যক্তি নিজের দোকান থেকে, অফিস থেকে, ঘর থেকে, গাড়ি থেকে নামাজের উদ্দেশ্যে খুশি মনে বের হবে, মৃত্যুকালে তার রূহ ও আনন্দের সঙ্গে বের হবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি, নামাজ আদায়ে গড়িমসি করবে, মৃত্যুকালে তার রূহও বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে। ফলে রূহ বের হওয়টা তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে খুশি মনে নামাজ আদায় করার তাওফীক দান করুন আমীন।
কেননা কুদৃষ্টির সাময়িক ও তুচ্ছ স্বাদ ছেড়ে দিলে ঈমানের স্থায়ী মিষ্টতা ভাগ্যে জুটে। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন
যে আমার ভয়ে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে, আমি অন্তরে এমন ঈমান সৃষ্টি করব, যাতে সে তার স্বাদ পাবে। [আততারগীব ওয়াততারহীব : ২/৩৭]
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য দৃষ্টির হেফাজতের নির্দেশ
এজন্য আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টির হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পুরুষজাতির উদ্দেশ্যে বলেন
হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্রতা। তারা যা করে মহান আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। [সূরা নূর : ৩০]
আমাদের শায়খ ও মুরশিদ মাহবুবুলওলামা মাওলানা পীর জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী দা. বা. বলেন, আয়াতের শেষাংশ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তারা যা করে তা সর্ম্পকে জানেন।’ এর মাঝে রয়েছে চ্যালেঞ্জ। আল্লাহর পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে যে, বান্দা যদি উক্ত দিকনির্দেশনার তোয়াক্কা না করে তাহলে যেন মনে রাখে যে, মহান আল্লাহ অসচেতন নন। তিনি বান্দার প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে জানেন। অবাধ্যদেরকে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয়; তাও তিনি ভালোভাবেই জানেন।
অনুরূপভাবে যেহেতু যৌনতার প্রতি আকর্ষণ নারী-প্রকৃতিতেও রয়েছে। তাই আল্লাহ তাআলা নারী জাতির উদ্দেশ্যেও একই নির্দেশ দিয়ে বলেন
হে নবী! ঈমানদার নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করে। [সূরা নূর : ৩০]
কুদৃষ্টি ঈমানকে দুর্বল করে দেয়
কোনো ব্যক্তির যদি জ্বর হয় তাহলে সে দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় দুর্বলতা এতই বেশি হয়, সে স্বাভাবিক চলাফেরাও করতে পারে না। কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তার মনে চায় সারাদিন সে বিছানায় পড়ে থাকবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তির কুদৃষ্টি দেওয়ার অভ্যাস আছে, নাটক-সিনেমা দেখার স্বভাব আছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ নেই; তার ঈমানও দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন নেক কাজ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
কুদৃষ্টি ইবাদতের মজা ছিনিয়ে নেয়
শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া রহ. বলেন, এ বিষয়ে আমার নিজেরও অভিজ্ঞতা আছে। আমার অনেক বন্ধুবান্ধব প্রথম প্রথম জিকির ও মুজাহাদা খুব জোশের সঙ্গে করে। কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে একসময় এই জোশ বাকি থাকে না। পরিণামে আমলের তাওফীক ছিনিয়ে নেওয়া হয়। নেক কাজের নিয়তও করে, কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে নিয়তে দুর্বলতা চলে আসে।
جلوہ بتوں کا دیکھ کے نیت بدل گئی
জান্নাতিহূরের কথা শোনে নামাযের জন্য প্রস্তুত ছিলাম, মূর্তিগুলোর দাপানি দেখে নিয়ত পাল্টে গেল।
কুদৃষ্টিদানকারীর কাছে শয়তানের অনেক আশা-ভরসা
জনৈক বুযুর্গের শয়তানের সাথে দেখা হল। তিনি শয়তানের কাছে জানতে চাইলেন, যে কারণে মানুষ তোমার জালে ধরা পড়ে সে ধ্বংসাত্মক কাজ কোনটি?
শয়তান উত্তর দিল, পরনারীর প্রতি কামনার দৃষ্টি দেয়া এমন কাজ, আমি তার ব্যাপারে প্রত্যাশা রাখি যে, সে আমার জালে যে-কোনো সময় ফেঁসে যাবে। দৃষ্টি অবনত রাখে এমন লোকের ব্যাপারে আমি নিরাশায় ভুগতে থাকি, আমার অনেক চেষ্টা-তদবির তার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে যায়। আমি শপথ করেছিলাম, আদমসন্তানকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরব। চারিদিকের মধ্যে নিচের দিক পড়ে না। তাই এই দিকটা নিরাপদ। যে-ব্যক্তি দৃষ্টি নিচু করে সে আমাকে আশাহত করে।
কুদৃষ্টির কারণে অশুভ মৃত্যু
ইবনুল জাওযী রহ. লিখেছেন, মিসরের জামে মসজিদের মুআযযিন আযান দেয়ার উদ্দেশে মিনারে ওঠল। পাশের ছাদে দৃষ্টি পড়তে জনৈক সুন্দরী খৃস্টান—নারীর প্রতি তার চোখ পড়ল। ভাবল, নতুন ভাড়াটিয়া মনে হচ্ছে, আযানের পর গিয়ে পরিচিত হব। আযানের পর মুআযযিন গেল ওই প্রতিবেশীর বাড়িতে। দরজায় কড়া নাড়ার পর মহিলাটির বাবা বের হল। কথাবার্তার একটা পর্যায়ে জানা গেল, এতো মহিলা নয়; বরং কুমারী মেয়ে। এখনও বিয়ে হয় নি। মুআযযিন বিয়ের প্রস্তাব দিল।
মেয়ের বাবা শর্ত জুড়ে দিল, আমাদের ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।
মুআযযিনের অন্তরে কামনার এমন ভূত চেপে বসেছিল যে, সে ‘হ্যাঁ’ বলে দিল।
মেয়ের বাবা বলল, ঠিক আছে, চল, ছাদে গিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
মুআযযিন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠতে লাগল। হঠাৎ পা পিছলে সে পড়ে গেল এবং ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে গিয়ে সেখানেই মারা গেল।
نہ ادهر كے ہے نہ ادهر كے ہے
আল্লাহকে পেল না, প্রতিমারও ঘনিষ্ঠ হল না। এ কূলও পেল না, ওই কূলও রইল না।
উক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হল, যদি মরণ পর্যন্ত ঈমান হেফাজত করতে চান, যদি শুভ-মৃত্যু চান তাহলে দৃষ্টির হেফাজত করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দৃষ্টির হেফাজত করার তাওফীক দান করুন আমীন।
টুথব্রাশ এবং মিসওয়াক উভয়টাই দাঁত পরিষ্কার করে। তবে ব্রাশ করলে দাঁত পরিষ্কার করার সাওয়াব হয়ত পাবেন; কিন্তু মিসওয়াকের ফজিলত পাবেন না। মিসওয়াকের ফজিলত পেতে হলে মিসওয়াকই করতে হবে। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা, রবের সন্তুষ্টির মাধ্যম। [সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯]
আর আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিই তো মুমিনের সবচেয়ে বড় চাওয়া ও পরম পাওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন
আর আল্লাহর সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড় বিষয়। [সূরা তাওবা : ৭২]
নিয়মিত মিসওয়াকে ঈমানী-মৃত্যু
একারণেই আল্লামা ইবনু আবেদীন রহ. বলেন, মিসওয়াকের উপকারিতা তিরিশেরও অধিক।
তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
আর সর্বোচ্চ উপকার হচ্ছে মৃত্যুর সময় কালিমা শাহাদাহ স্মরণ হয়। [ফাতাওয়ায়ে শামী : ১/২৩৯]
মিসওয়াকের আরো উপকারিতা
হাফেজ ইবনুল কাইয়্যিম রহ. মিসওয়াকের অনেক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্য থেকে যে কয়টি মনে আছে বলে দেই! যেমন
وَيُرْضِي الرَّبَّ
আল্লাহ তাআলাকে খুশি করে।
وَيُعْجِبُ الْمَلَائِكَةَ
ফেরেশতাদেরকে মুগ্ধ করে।
وَيُكْثِرُ الْحَسَنَاتِ
নেকিসমূহ বৃদ্ধি করে। [যাদুল মাআদ : ৪/২৯৬]
তাছাড়া এটি পকেট থেকে বের করলেই নামাযের কথা মনে পড়ে।
এটি পকেট থেকে বের করলেই সুন্নাতের কথা মনে পড়ে।
এটি পকেট থেকে বের করলেই রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কথা মনে পড়ে। এটি পকেট থেকে বের করলেই আল্লাহর কথা মনে পড়ে।
মৃত্যুর আগমুহূর্তেও মিসওয়াক
মিসওয়াকের প্রতি নবীজির কী পরিমাণ ভালোবাসা থাকলে তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্তেও মিসওয়াকের কথা ভুলে যান নি। তখনও তিনি মিসওয়াক করেছিলেন।
আম্মাজান আয়শা রাযি. বলেন, নবীজি ﷺ যেদিন ইন্তেকাল করেছিলেন, সেদিন তিনি আমার ঘরে ছিলেন। আমার বুকে মাথা রেখে ইন্তেকাল করেছিলেন। সেদিন তিনি ছিলেন প্রচণ্ড অসুস্থ। তিনি অসুস্থ হলে আমাদের মধ্যকার কেউ দোয়া পড়ে তাঁকে ঝাড়ফুঁক করতেন। তাই আমি তাঁকে ঝাড়ফুঁক করছিলাম।
এসময় আমার ভাই আবদুর রহমান আসলো। তার হাতে ছিল মিসওয়াকের একটি তাজা ডাল।
নবীজি তখন সেদিকে এমনভাবে তাকালেন যে, আম্মাজান আয়েশা রাযি. বলেন
আমি বুঝলাম যে, তিনি মিসওয়াককে ভালোবাসেন।
আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আপনার জন্য মিসওয়াক নিব?
তিনি মাথা নাড়িয়ে জানালেন যে, হ্যাঁ।
তখন আমি মিসওয়াকটি নিলাম। কিন্তু মিসওয়াক ছিল তার জন্য শক্ত, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি এটি আপনার জন্য নরম করে দিব?
তখন তিনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন।
তখন আমি তা চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি ভালোভাবে মিসওয়াক করলেন।
আয়শা রাযি. যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন উক্ত ঘটনা যখনই মনে করতেন, তখনই আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করতেন। শোকর আদায়ের পদ্ধতিও ছিল দারুণ সুমিষ্ট। শোকর আদায় করতেন এভাবে
সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি নবীজির জীবনের দুনিয়ার শেষ দিনে তাঁর মুখের লালা এবং আমার মুখের লালা একত্র করে দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী : ৪৪৪৯ সহীহ ইবনে হিব্বান : ৭১১৬]
আমরা সাধারণত অযু ছাড়াই থাকি। অথচ অযু ছুটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অযু করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
ইমাম গাযালী রহ. বলতেন, যখন অযু করবে তখন তোমার অন্তরের দিকে তাকিয়ে দেখো। দেখবে, অযু করার আগের অবস্থা এবং পরের অবস্থা এক নয়। অযু করলে অন্তর নূরানী হয়ে যায়। যার ফলে অন্তরে অপার্থিব প্রশান্তি অনুভূত হয়।
আল্লাহওয়ালারা নিজেদের সঙ্গে অযুর পাত্র রাখতেন
এজন্য আমাদের মাশায়েখ সব সময় অযুর সঙ্গে থাকার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তারা বলতেন, শয়তানের হামলা থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটি একটি শক্তিশালী আমল। এতে নেক আমলের আগ্রহ বেড়ে যায়। গুনাহের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়।
এজন্য দেখা যায়, আমরা যেমন মোবাইল সঙ্গে রাখি, আল্লাহওয়ালারা সব সময় সঙ্গে অযুর পাত্র রাখতেন।
হাসান বসরী রহ. বলেন, অনেক আল্লাহওয়ালাদের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা নিজেদের সঙ্গে পানির একটি ছোট পাত্র রাখতেন। যাতে করে কোথাও ইস্তেঞ্জার প্রয়োজন দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে যেন অযু করে নিতে পারেন। কেননা, এমন যেন না হয় ইস্তেঞ্জার পর পানির সন্ধান করতে করতে মৃত্যুর ডাক এসে পড়ে। [ইবনু আবিদ্দুনয়া, ক্বাসরুল আমল : ৪৩]
এটি জান্নাতে প্রবেশের কারণ
একদিন সকালে রাসূলুল্লাহ ﷺ বেলাল রাযি.-কে ডেকে বললেন
হে বেলাল! কি এমন কাজ করে তুমি জান্নাতে আমার আগে চলে গেলে? আমি গত রাতে স্বপ্নে জান্নাতে প্রবেশ করলে তোমার পায়চারির শব্দ আমার সামনে থেকে শুনতে পেলাম!
বেলাল বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যখনই আজান দিয়েছি, তখনই দুই রাকাআত নামাজ পড়েছি। আর যখনই আমার অযু ছুটে গিয়েছে তখনই আমি সঙ্গে সঙ্গে অযু করে নিয়েছি। [তিরমিযী : ৩৬৮৯]
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ কাজের জন্যই। জান্নাতে আমার আগে আগে তোমার পায়ের শব্দ শুনলাম।
এটি শুভ-মৃত্যুর কারণ
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর প্রিয় খাদেম আনাস রাযি.-কে নসিহত করে বলেন
হে ছেলে! সম্ভব হলে সবসময় অযু অবস্থায় থেকো। কেননা মৃত্যুর ফেরেশতা অযু অবস্থায় যার রূহ কবজ করবে; তার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে সর্বদা অযুর সঙ্গে থাকার তাওফীক দান করুন আমীন।
যখন আযান কানে আসবে তখন যত ব্যস্ততাই থাকুক; চুপ হয়ে যাবেন। মনোযোগ-সহকারে শুনবেন এবং আযানের বাক্যগুলোর উত্তর সুন্নাহ পদ্ধতিতে দিবেন। তারপর মাসনূন দোয়া পড়বেন। এই পুরো আমলটাও শুভ-মৃত্যুর কারণ।
জনৈক নেককার মহিলার ঘটনা
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানবী রহ. ঘটনা লিখেছেন, জনৈক নেককার মহিলা যখন মারা যাচ্ছিল, তখন এমন ভাষায় কথা বলতে লাগল যে, ঘরের লোকজন সে ভাষা বুঝে ওঠছিল না। তাই তারা তাদের এক নিকটাত্মীয় আলেমকে ডেকে পাঠাল।
ওই আলেম এসে দেখলেন, মহিলাটি মৃত্যুশয্যায় শায়িত এবং বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে যাচ্ছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলেন যে, মহিলা বলছে
লোক দুটি আমাকে বলছে, জান্নাতে প্রবেশ কর।
উক্ত আলেম এই অবস্থা দেখে বিস্মিত হলেন। ঘরের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এই মহিলা কি আরবী ভাষা জানে?
লোকজন বলল, না। বরং মহিলা তো পড়া-লেখাই জানেনা।
আলেম বললেন, কিন্তু মহিলা তো আরবী ভাষায় কথা বলছে! আর আরবী তো জান্নাতীদের ভাষা। তাহলে নিশ্চয়ই তার এমন কোনো ভালো আছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সে একজন জান্নাতী মহিলা।
তখন লোকজন জানালো, এই মহিলা খুবই কম কথা বলত। নিজের মতো করে সময় অতিবাহিত করত। তার একটা বিশেষ অভ্যাস ছিল, যখন আযান হত, চুপচাপ হয়ে মনোযোগসহ আযান শুনতো।
আলেম বললেন, হ্যাঁ, একারণেই আল্লাহ তাআলা তাকে এরকম মর্যাদা দিয়েছেন।
আযানের সুন্নাহসম্মত জবাব এবং ফজিলত
মুআযযিন যখন আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলে তখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
যখন মুআযযিন বলে আশহাদু আল লা— ইলা—হা ইল্লাল্লাহ। এর জবাবে সেও বলে আশহাদু আল লা— ইলা—হা ইল্লাল্লাহ।
মুআযযিন বলে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। এর জবাবে সে বলে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।
মুআযযিন বলে হাইয়্যা আলাস সলা—হ। এর জবাবে সে বলে লা—হাওলা ওয়ালা— কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা—হ।
মুআযযিন বলে হাইয়্যা আ’লাল ফালা—হ। এর জবাবে সে বলে লা— হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা— বিল্লা—হ।
মুআযযিন বলে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। এর জবাবে সে বলে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
মুআযযিন বলে লা—ইলা—হা ইল্লাল্লাহ। এর জবাবে সে বলে লা— ইলা—হা ইল্লাল্লাহ।
আযানের উক্ত জবাব দেয়ার কারণে সে জান্নাতে যাবে। [সহীহ মুসলিম : ৩৮৫]
দেখুন, কত স্পষ্ট বাক্যে নবীজি ﷺ বলেছেন, আযানের উত্তর উক্ত পদ্ধতিতে দিলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের ফয়সালা করেন।
আমলটি কত সহজ। আলেম কিংবা মূর্খ, নারী কিংবা পুরুষ এমনকি শিশুরাও আমলটি করতে পারেন। এজন্য পরিবারের শিশুদেরকেও আমলটি শিখিয়ে দিবেন।
আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন আমীন।
আমলটি শুভ-মৃত্যুর কারণ
শাইখুত তাফসীর মাওলানা আহমদ আলী লাহোরী রহ. বলেন, আমার অভিজ্ঞতা হল, যে ব্যক্তি আযান শুনবে, আযানের প্রতি আদব দেখিয়ে তখন চুপ থাকবে তারপর আযানের উত্তর সুন্নাত তরিকায় দিবে। আল্লাহ তাআলা তাকে মৃত্যুর সময়ে কালিমা স্মরণ করিয়ে দেন। [রাহে বেলায়েত কদম ব-কদম : ১০৩]
আযানের পর জিকির-দোয়া এবং ফজিলত
আযানের পর কিছু জিকির ও দোয়া আছে, যেগুলো খুবই ফজিলতপূর্ণ। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
যে ব্যক্তি মুআযযিনের আযান শোনে এবং তখন বলে
‘আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই এবং তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বতস্ফূর্তভাবে আল্লাহকে রব, ইসলামকে আমার দীন, মুহাম্মাদ ﷺ -কে রাসূল মেনে নিয়েছি।’
তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। [নাসায়ী : ৬৮০]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন
তোমরা যখন মুআযযিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তা-ই বল। এরপর আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। তারপর পর আমার জন্যে আল্লাহর কাছে উসিলা প্রার্থনা কর। [সহীহ মুসলিম: ৩৮৪]
দরূদ পড়ার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য আল্লাহর কাছে উসিলা প্রার্থনা কীভাবে করবেন, তা-ও তিনি আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন।
ব্যাস! এতোটুকুই। রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত দোয়ায় যে ‘ওয়ারযুকনা শাফাআ’তাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ’ বাক্যটি যোগ করা হয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই ।
এ-ই দোয়াটির অর্থ
হে আল্লাহ! হে পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের মালিক, মুহাম্মদ ﷺ-কে উসিলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিন যার অঙ্গীকার আপনি করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আযানের পর দোয়াটি পড়লে
কেয়ামতের দিন সে আমার শাফা‘আত লাভের অধিকারী হবে। [ সহীহ বুখারী : ৬১৪]
আযানের পর নিজের জন্য দোয়া করা
আযানের পর দরূদ, কালিমা শাহাদাহ , মাসনূন দোয়া পড়ার পর নিজের জন্য দোয়া করা এবং ইকামতের জবাব দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। আযান এবং ইকামতের জবাব একই। শুধু قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ এর সময়ে أَقَامَهَا اللهُ وَأَدَامَهَا বলবে।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। [তিরমিযী : ২১২]
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমলগুলো নিয়মিত করার তাওফীক দান করুন আমীন।
জিকিরে নিয়মিত ব্যক্তিকেও আল্লাহ তাআলা সুন্দর মৃত্যু দান করেন। বিশেষ করে লা—ইলা—হা ইল্লাল্লাহ-এর জিকির।
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. বলতেন, যে ব্যক্তি নিজের জিন্দেগিতে কালিমা মনে রাখবে, মৃত্যুকালে কালিমা তার মনে পড়ে যাবে। যাপিত জীবনে যে কালিমা ভুলবে না, মৃত্যুকালে কালিমা তাকে ভুলবে না।
মৃত্যুর সময়ে লা—ইলা—হা ইল্লাল্লাহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময়ে লা—ইলা—হা ইল্লাল্লাহ বলেছে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, যদি কেউ জীবিত অবস্থায় বলে, তাহলে তার কী হবে?
নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন, গুনাহসমূহ আরো অধিক ধ্বংসকারী এবং আরো অধিক ধ্বংসকারী। [ইবনু আবিদদ্দুনয়া, কিতাবুল মুহতাযারীন : ০৩]
উমর রাযি. এবং তালহা রাযি.
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ইনতিকালের পরের ঘটনা । একবার উমর রাযি. তালহা রাযি.-এর পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, তালহা রাযি. বিষণ্ণ, চিন্তিত। তাই উমর রাযি. বললেন, তালহা! আপনার কী হয়েছে, আপনাকে এত বিষণ্ণ দেখা যাচ্ছে কেন? আবু বকর রাযি.-এর খেলাফত কি মনঃপুত হয়নি?
তালহা রাযি. বললেন, না। আপনি যা ভাবছেন তা নয়। বরং আমার বিষণ্ণতার কারণ ভিন্ন। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, এমন একটি বাক্য আমার জানা আছে
যেটি কোনো ব্যক্তি তার মৃত্যুর সময় বললে তার আমলনামার জন্য নূর হবে।
যে-টির কারণে তার দেহ ও আত্মা নিশ্চয়ই মৃত্যুর সময় শান্তি ও স্বস্তি পাবে।
কিন্তু সেটি আমি নবীজিকে জিজ্ঞেস করিনি, এরই মধ্যে তিনি ইনতিকাল করেন।
উমর রাযি. বলেন, আমি সেটি জানি। তা হলো সেই কালেমা যা তিনি তাঁর চাচার নিকট পেশ করেছিলেন। অর্থাৎ লা—ইলা—হা ইল্লাল্লাহ। যদি তিনি জানতেন যে, এই কালেমার চেয়েও অধিক নাজাত দানকারী কিছু আছে, তবে অবশ্যই তিনি সেটি তাঁর চাচার নিকট পেশ করতেন। [ইবনু মাজাহ : ৩৭৯৫]
জিকিরের বাতাস প্রবাহিত হলে…
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানবী রহ. একটি ঘটনা লিখেছেন। আল্লাহ তাআলা হযরত সুলাইমান আ.-কে সারা দুনিয়ার রাজত্ব দান করেছিলেন। পশু-পাখি, পোকামাকড় এমনকি আগুন-পানি-বাতাসের ভাষাও বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা তাঁকে দান করেছিলেন। একবার তাঁর নিকট একটি মশা এসে নালিশ করল বাতাসের বিরুদ্ধে। বলল, আমরা ক্ষুদ্র হলেও আপনার প্রজা। সুতরাং আমাদের সমস্যাও আপনাকে দেখতে হবে। আমাদের সমস্যা হল, আমরা কোনো জায়গায় যখন রক্ত চোষার জন্য বসি, তখন এই বাতাসের কারণে বসতে পারিনা। সে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়। এতে আমাদের পেট ভরে না।
সুলাইমান আ. উত্তর দিলেন, তোমার কথা শুনলাম। কিন্তু একতরফা কথা শুনে তো রায় দেয়া যায় না। বাতাসকেও এখানে ডেকে আনতে হবে।
তারপর যখন বাতাসকে ডেকে আনা হল, দেখা গেল, মশা গায়েব। সে নেই তো একেবারে নেই। অগত্যা সুলাইমান আ. মামলা খারিজ করে দিলেন।
মামলা খারিজ করে দেয়ার পর বাতাস চলে গেল। কিন্তু পরক্ষণেই মশা এসে উপস্থিত হল। সুলাইমান আ. বললেন, তুমি বাতাসের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়ে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলে?
মশা উত্তর দিল, সমস্যা তো এখানেই। বাতাস যখন আসে, আমি সেখানে টিকে থাকতে পারিনা।
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানবী রহ. উক্ত ঘটনা উল্লেখ করার পর বলেন, আল্লাহর কসম! যখন জিকিরের বাতাস প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়, গুনাহের মশা অন্তর নামক ঘর থেকে পালিয়ে যাবে। অন্যথায় গুনাহের মশাগুলো আমাদের ঈমানের রক্ত চুষে নিবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
সাদকা খারাপ মৃত্যুকে দূরীভূত করে। [জামে সগির : ৫১২৬]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
সাদকার অদৃশ্য প্রভাব
তা ছাড়া যেকোনো বিপদ-আপদে সাদকা করার কথা বলা হয়েছে। হাফেয ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন, বিপদ-আপদ প্রতিহতের ক্ষেত্রে সাদকার বিশেষ প্রভাব আছে। এমনকি কোনো পাপাচার, জালিম কিংবা কাফিরও যদি সাদকা করে, আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা তার থেকে বিপদ দূর করে দেন।
আর যুগ যুগ ধরে এটা পরীক্ষিত সত্য। [আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব : ১/৩৮]
এক আশ্চর্য ঘটনা
ইমাম বায়হাকি রহ. পানি দানের এক আশ্চর্য ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বিখ্যাত হাদিসবিশারদ হাকিম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরি রহ. এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তাঁর চেহারায় ফোসকা উঠে ভরে গেছে। অনেক ধরনের চিকিৎসা করেছেন কোনো কাজ হয়নি। এভাবেই বছর অতিক্রম হলো। একদিন তিনি তাঁর ওস্তাদ আবু ওসমান সাবুনি রহ.-এর কাছে আবেদন করলেন, জুমার দিন তার জন্য যেন দোয়া করা হয়। তিনি তাঁর জন্য দোয়া করলেন। আর মানুষজন তাঁর সঙ্গে আমীন আমীন বললেন।
পরের জুমায় এক নারী একটি পত্র পাঠালেন। পত্রটিতে লেখা ছিল, গত সপ্তাহে জুমা আদায় করে ঘরে যাওয়ার পর, ওই রাতে হাকিম আবু আবদুল্লাহ জন্য খুব দোয়া করেছেন। পরে স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে দেখেন। তিনি বলছেন, আবু আবদুল্লাহকে বলে দাও, সে যেন মানুষের জন্য পানির ব্যবস্থা করে।
হাকিম আবু আবদুল্লাহ সেই চিঠি পেয়ে তাৎক্ষণিক একটি কূপ খনন করার নির্দেশ দেন। কূপ খনন করে সেখানে তিনি একটি বরফখণ্ড রেখে দেন। এরপর তা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সপ্তাহ পেরোতেই তিনি পরিপূর্ণ সুস্থতা লাভ করেন। তার চেহারা আগের মতো হয়ে যায়।
মুহতারাম হাজিরীন! যারা প্রকৃত আলেম তাঁদের মর্যাদা আল্লাহ তাআলার দরবারে অতি উচ্চে। সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরা হলেন নক্ষত্ররাজিতুল্য। যাদেরকে অনুসরণ করার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের সন্ধ্যান লাভ করে থাকে।
সুতরাং আপনি তাঁর সাথে বসার ক্ষেত্রে, কথা বলার ক্ষেত্রে, প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে, শ্রবণ করার ক্ষেত্রে, তাঁর সামনে উচ্চবাচ্য পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রেÑ যাবতীয় আদব রক্ষা করে চলবেন।
কোনো কথা বা হাঁটার মাধ্যমে তাঁর অগ্রবর্তী হবেন না। তাঁর সামনে অধিক কথা বলবেন না। কোনো জবাব দেয়ার জন্য চাপাচাপি করবেন না। তাঁকে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করবেন। যেমন, শায়খ, হযরত, হুজুর কিংবা এজাতীয় শব্দ। আলেমদের প্রতি এই সম্মান ও আদব বজায় রাখতে পারলে মরণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আপনার ঈমান হেফাজত করবেন।
এটাও সত্য যে, সাহাবীদের সময়ে যেমন সাহাবী বেশধারী মুনাফিক লোকও ছিল, তেমনিভাবে পরবর্তী সকল যুগেই আলেমদের পাশাপাশি আলেমের লেবাসধারী ও মুখোশধারী অনেক অসৎ আলেমও থাকবে।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও পূর্ববর্তী কোনো যুগে দীনের চাকা যেমন আলেমবিহীন চলেনি; ভবিষ্যতেও কখনো ঘুরবে না।
সত্যসন্ধানী লোকেরা খাটি আলেম খুঁজে নিবেই। ফলে সঠিক পথে চলতে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না। তাদের কাছে হক্কানী আলেমের কখনো আকাল পড়বে না।
হাদীসে এসেছে
আলেমগণ হলেন নবীদের ওয়ারিস। [আবু দাউদ : ৩৬৪৩]
ইবন কাইয়িম আল জাওযিয়া রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন
আলেমদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা হল এই যে, তাঁরা নবীগণের ওয়ারিস। [মিফতাহু দারিস সাআ’দাহ : ১/৬৬]
ওলামায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ রাখার পরিণতি
আলেমের সঙ্গে দুশমনি ও গালি দেওয়ার কারণ দুটি হতে পারে। যথা—
১. ব্যক্তিগত কোনো কারণে।
২. আলেম হওয়ার কারণে।
কোনো আলেমকে আলেম হওয়ার কারণে গালি দেওয়া, তাঁর সঙ্গে শত্রুতা বা বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করা একটি কুফরি কাজ। এটি খুবই ভয়াবহ মানসিকতা। এমন মানসিকতা লালনকারী ব্যক্তি তাওবা না করলে ঈমানের সঙ্গে তার মৃত্যু হবে কি না— ঘোর সন্দেহ আছে।
ফকিহগণ লিখেছেন
ওই ব্যক্তির ব্যাপারে কাফের হয়ে যাওয়ার ভয় আছে, যে ব্যক্তি অকারণে কোনো আলেম কিংবা ফকিহকে গালি দেয়। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৭০]
হাদীস শরীফে এসেছে, উবাদা ইবন সামিত রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
সে আমার উম্মতভুক্ত নয় যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমের হক জানে না।
كفى بالمرء شرّاً أن لايَكون صالحاً ويَقعُ في الصَّالحينَ
একজন মানুষ নিকৃষ্টতর হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে নিজে সৎ হবে না এবং নেককারদের পেছনে পড়বে। [শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৫/৩১৬]
অষ্টম শতাব্দীর শাফেয়ী মাযহাবের ফকিহ কাজী মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ আয-যুবাইদী রহ.। শিক্ষাদান, ফতোয়া প্রদান, ইয়েমেনে তার ছাত্র সংখ্যার আধিক্যতায় বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন।
জামাল মিসরী বলেন, তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, মৃত্যুর সময় তার জিহ্বা ঝুলে গিয়েছিল এবং কালো হয়ে গিয়েছিল।
তারা ধরে নিয়েছেন যে, এটি মূলত ইমাম নববী রহ.-এর ব্যাপারে জবান ব্যবহারের কারণেই হয়েছিল।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এধরণের পরিণতি থেকে হেফাজত করুন আমীন।
এক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো তাকওয়া তথা অন্তরে আল্লাহভীতি সব সময় জাগরুক রাখা। তাকওয়ার গুণ একজন মুমিনের ঈমান সুরক্ষিত রাখে। যার মাঝে তাকওয়া থাকে আল্লাহ তাআলা তাকে ঈমানের নূর দান করেন। ফলে সে সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করতে পারে এবং নিজের ঈমানকে হেফাজত করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন
ওহে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি প্রদান করবেন। [সূরা ফুরকান : ২৯]
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন
অর্থাৎ তাকওয়া অবলম্বন করতে পারলে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এমন নূর দান করবেন, যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে। কুফর ও শিরকের বাঁকা পথসমূহের মধ্যে ইসলামের সরল সোজা পথ কোনটি তা স্পষ্ট দেখতে পারবে। [সূরা হাদীদ : ২৮]
কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাকওয়া নামক এই মহান গুণ নিজের মধ্যে নিয়ে আসার উপায় কী? একজন মুমিন তাকওয়ার জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথ কী?
এর উত্তরে আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন
হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। [সূরা তাওবা : ১১৯]
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা সত্যবাদী তথা আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে থাকার আদেশ করেছেন। আর এটি তাকওয়া লাভ করার সহজতম উপায়।
সোহবতের এই ধারা চলমান
সব যুগেই সোহবতের এই ধারা চালু ছিল। সোহবত মানে সঙ্গে থাকা, সাহচর্য, সংস্পর্শ। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. বহু উত্তম গুণের ধারক ছিলেন। কিন্তু এতো এতো গুণাবলীর কোনোটি দ্বারাই তাদের নামকরণ করা হয়নি। বরং তারা যে নবীজী ﷺ-এর সোহবতে থাকতেন, তার সান্নিধ্যে সময় কাটাতেন এটাকে কেন্দ্র করেই তাদের নাম হয়েছে সাহাবী। নবীজী ﷺ-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম যেখানেই ছিলেন এ মজলিস কায়েম করতেন।
সাহাবী মু‘আয ইবন জাবাল রাযি. লোকদেরকে ডাকতেন এবং বলতেন
আমাদের সাথে বসো। আমরা ঈমানী আলোচনা করি। ঈমানকে মযবুত করি। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৩৪৬৯৮]
নবীজী ﷺ-এর সেই মজলিসের ধারা বিশেষভাবে জারি রেখেছিলেন হযরত আলী রাযি.। তার থেকে হযরত হাসান বসরী রহ.। এভাবে চলতে চলতে যুগে যুগে মাশাইখগণ সোহবতের এ মুবারক ধারা এখন পর্যন্ত চালু রেখেছেন।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন
তারা সেই সম্প্রদায়, তাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত হয় না। [সহীহ বুখারী : ৬৪০৮ সহীহ মুসলিম : ২৬৮৯]
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আল্লাহ তাআলা বলেন
আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, তাদের জন্য যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে। [মুসনাদে আহমাদ : ২২০৮৩]
আল্লাহওয়ালার দিকে তাকালে কী পাওয়া যায়?
জনৈক বুজুর্গকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হযরত! মা-বাবার দিকে মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকালে বাইতুল্লাহ জিয়ারতের সাওয়াব পাওয়া যায়। কোনো আল্লাহওয়ালার দিকে তাকালে কী পাওয়া যায়?
বুজুর্গ উত্তর দিলেন, মা-বাবার দিকে মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকালে বাইতুল্লাহ পাওয়া যায়। আর আল্লাহওয়ালার দিকে মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকালে আল্লাহকে পাওয়া যায়।
بستی عشق میں گھر بنا لیجئے
দিলওয়ালার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হোন, ইশকের নিবাসে আবাস গড়ে তুলুন।
অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, সাধারণত কোনো ব্যক্তির ঈমান রাতারাতি ধ্বংস হয়ে যায় না। আচমকা ঈমানহারা হওয়ার ঘটনাও ঘটে, তবে তা নেহায়েত কম। সাধারণত যা ঘটে তা হল, একজন ঈমানদার পর্যায়ক্রমে ঈমানহারা হওয়ার পথে অগ্রসর হয়। প্রথমে তার ঈমান দুর্বল হয়। তারপর আরো দুর্বল হয়। ধীরে ধীরে ঈমানের দিক থেকে ডিসেন্সেটাইজ হয়ে যায়। আগে যে জিনিস দেখলে চোখ সরিয়ে নিত, যে কথা শুনলে বমি বমি ভাব হতো এখন আর সেরকম বোধ হয় না, এসবই এখন অতি সাধারণ মনে হয়। এভাবে ঈমান দুর্বল হতে হতে একটা পর্যায়ে ঈমানহারা হয়ে কবরে যায়।
আর এর প্রথম ধাপটা শুরু হয় অসৎ সঙ্গ এবং ঈমানের জন্য বিপজ্জনক পরিবেশের মাধ্যমে। সুতরাং ঈমানের সঙ্গে মরণ যদি চান তাহলে যে সকল পরিবেশ ঈমানের জন্য বিপজ্জনক সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
অসৎ সঙ্গ, অমুসলিমদের উৎসব যেমন পূজা, ক্রিসমাস, হ্যালোইন ইত্যাদি ঈমান-বিধ্বংসী পরিবেশ। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
এক হাদীসে নবীজী ﷺ এ সবের তুলনা দিয়েছেন কামারের হাপরের সঙ্গে। তিনি বলেন
অসৎ সঙ্গ বা অনৈতিক পরিবেশ হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে আর না হলে অন্তত দুর্গন্ধ হলেও পাবে।
আরেকটি বিষয়ের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এর আগে একটা ঘটনা বলি। ঘটনাটি শুনেছি আমার এক উস্তাদের কাছে।
ইংরেজী ভাষায় পারদর্শিতা লাভ করেছেন এমন একজন আলেম হাফেজ্জী রহ.-এর কাছে দোয়ার জন্য এসেছিলেন। বললেন, হযরত! দোয়া করবেন, আমি ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছি, ওখানের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। পরিবারকেও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।
হাফেজ্জী রহ. বললেন, ভালো খবর। তবে আমি আপনাকে বলছি, আপনি সেখানে বসবাসের উদ্দেশে নয়; বরং দাওয়াতের উদ্দেশে যেতে পারেন। দু’ চার বছর পর আবার দেশে চলে আসবেন। এর কারণ হল, আপনি আলেম মানুষ। আপনার ঈমানের ব্যাপারে আমি আশংকা করছি না। আপনার স্ত্রী-সন্তানদের ঈমানের ব্যাপারেও আমি আশংকা করছি না। কেননা, তাদের তরবিয়ত আপনিই দিবেন। কিন্তু এর পরবর্তী প্রজন্ম থেকে শুরু হতে পারে ঈমানের সংকট। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই, একটা সময়ে হয়ত আপনার বংশধরদের মাঝে ঈমানদার খুঁজে পাওয়াটাও মুশকিল হয়ে যেতে পারে।
মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবী রহ. কানাডার টরেন্টোতে মুসলিম অভিবাসীদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন
আপনারা যদি মনে করেন যে, আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এদেশে ঈমান নিয়ে টিকে থাকতে পারবে না, তাদের ঈমান হুমকির মুখে আছে; তাহলে আমি ফতওয়া দিচ্ছি, এদেশের আকাশ সোনা বর্ষণ করলেও এবং এদেশের মাটি রূপা উৎপাদন করলেও এদেশে স্থায়ী নিবাস গড়া আপনাদের জন্য হারাম। বরং আমি বলবো, তখন এদেশে একদিনের জন্যও বসবাস করা আপানাদের জন্য জায়েয হবে না।
অমুসলিম দেশে বসবাস করা
বাস্তবেও দেখা যায়, যারা শুধুমাত্র ভোগ-বিলাসিতার উদ্দেশ্যে কোনো অমুসলিম দেশে বসবাস করছে, তাদের ঈমানী-চেতনা একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। ।
একারণে হাদীস শরীফে অত্যন্ত প্রয়োজন ব্যতীত, অমুসলিমদের সাথে বসবাস করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
যে ব্যক্তি অমুলিমদের সাথে চলাফেরা করবে এবং তাদের সাথে বসবাস করবে, সেও তাদের অনুরূপ হবে। [আবু দাঊদ : ২৭৮৭]
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং ঈমান-বিধ্বংসী সকল পরিবেশ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন আমীন।
মুহতারাম হাজিরীন! তিক্ত বাস্তবতা হল, আমরা আছি ফেৎনার যুগে। গাছের শিকড়ের মতো ফেৎনা আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহর অবাধ্যতায় কে কাকে ছাড়িয়ে যেতে পারি সেই প্রতিযোগিতায় আমরা মত্ত। এতো এতো ফেৎনার মাঝে নিজের ঈমান ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন ঈমানের নূর। আর ঈমানের নুর বৃদ্ধি করতে হলে উক্ত আমলগুলোর পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়াও চালিয়ে যেতে হবে। ফেৎনা থেকে বাঁচার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে দোয়ার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন এক হাদীসে বলেছেন
তোমাদের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন পানিতে ডুবন্ত ব্যক্তির মত প্রার্থনা করা ছাড়া কেউ ফেৎনা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ শেষ পরিণতি ভালো হতে অনেকগুলো দোয়া শিখিয়েছেন। কোরআনেও অনেক দোয়া এসেছে। যেমন
হে আমাদের রব! আমাদের পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদের মৃত্যু দান করুন। [সূরা আরাফ : ১২৬]
হে আমাদের প্রতিপালক! সৎ পথ প্রদর্শনের পরে আমাদের অন্তরগুলোকে বক্র করবেন না। আমাদেরকে আপনার নিকট হতে রহমত দান করুন। মূলত আপনিই মহান দাতা। [সূরা আলি ইমরান : ৮]
হে আল্লাহ! আমার দীনের ব্যাপারে আমাকে সংশোধন করে দিন, যা আমার সব কাজের রক্ষাকবচ। আমার পার্থিব জীবন সংশোধন করে দিন, যেখানে রয়েছে আমার জীবন-জীবিকা এবং প্রতিটি অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য আমার মৃত্যুকে আমার জন্য রহমতের উৎস বানিয়ে দিন। [আল আদাবুল মুফরাদ : ৬৭৩]
হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন। হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে আপনার দীনের উপর স্থির রাখুন। [সহীহ মুসলিম : ২৬৫৪ ]
মুহতারাম হাজিরীন! হুসনুল খাতিমা তথা সুন্দর মৃত্যু লাভের উপায় হিসাবে আজকে মজলিসে যে ১০টি আমলের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আবার সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি। আজকের আলোচনা থেকে যদি আপনারা সামান্যতম উপকার পেয়ে থাকেন, তাহলে আমার জন্যও দোয়া করবেন যে, আল্লাহ তাআলা যেন আমাকেও আমলগুলো করার তাওফীক দান করেন।
এক. নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া
দুই. দৃষ্টির হেফাজত করা
তিন. মিসওয়াক করা
চার. সর্বদা অযুর সঙ্গে থাকা
পাঁচ. আযানের জবাব দেয়া
ছয়. জিকির করা
সাত. সাদকা করা
আট. ওলামা ও তোলাবার সঙ্গে আদব বজায় রাখা
নয়. আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করা
দশ. ঈমানের জন্য বিপজ্জনক পরিবেশ এড়িয়ে চলা
সর্বোপরি এই আমলগুলোর পাশাপাশি ঈমানী মৃত্যু লাভের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে নিয়মিত দোয়াও করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে আমল করার তাওফীক দান করুন আমীন।