কুরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং বিশেষ ধরণের ইবাদত। কুরবানী ইসলামের অন্যতম শিআ‘র তথা পরিচয়-নিদর্শনমূলক একটি ইবাদত। আযান, জুমআ’, জামাআ‘ত ইত্যাদি যেমনিভাবে ইসলামের পরিচয় বহন করে তেমনি কুরবানীও ইসলামের পরিচয় বহন করে। একে ‘সুন্নাতে-ইবরাহিমি’ও বলা হয়। কেননা, কুরবানীর এই বিশেষ পদ্ধতির সূচনা হযরত ইবরাহিম আলাইহিসালামের মাধ্যমেই হয়।
ইসলামে এর গুরুত্ব কতটা শক্তিমান; তা কুরবানীর ফাজায়েল-নির্দেশক নিম্নের হাদিসগুলো থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়–
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি বছর কুরবানী করেছেন
আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাযি. বলেন,
أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي
রাসূলুল্লাহ ﷺ মদীনায় দশ বছর থেকেছেন এবং প্রতি বছর কুরবানী করেছেন। (তিরমিযি ১৫০৭)
২. এটি আল্লাহ তাআলার নিকট সবচে’ প্রিয় আমল
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ
কুরবানীর দিন মানুষ যে কাজ করে তার মধ্যে আল্লাহ তাআলার নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় হচ্ছে রক্ত প্রবাহিত করা ( কুরবানী করা)। (তিরমিযি ১৪৯৩)
৩. কুরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদা পেয়ে যায়
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّهَا لَتَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ مِنَ الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا
কিয়ামতের দিন তা নিজের শিং, পশম ও ক্ষুরসহ হাযির হবে। তার ( কুরবানীর পশুর) রক্ত যমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার নিকটে এক বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দিত মনে কুরবানী কর। (তিরমিযি ১৪৯৩)
৪. এটি ইবরাহিম আলাইহিসসালামের সুন্নাহ
হাদিস শরিফে এসেছে, যায়েদ ইবনে আরকাম রাযি. বলেন,
قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ ﷺـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কুরবানী কী? তিনি বলেন, এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিসসালামের সুন্নাহ (ঐতিহ্য)। (ইবনে মাজাহ ৩১২৭)
৫. প্রতিটি পশমের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে নেকি
যায়েদ ইবনে আরকাম রাযি. বলেন,
قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ . قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এতে কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে? তিনি বললেন, কুরবানীর পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে প্রতিদান রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! পশমওয়ালা পশুদের ব্যাপারে কী হবে? (এদের পশম তো অনেক বেশী)? তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুদের প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। (ইবনে মাজাহ ৩১২৭)
৬. প্রথম ফোঁটা জমিনে পড়ার পূর্বেই মাফ করে দেয়া হয়
আবু সাইদ খুদরি রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
يا فاطمةُ قومي إلى أُضحيتِك فاشهدِيها ، فإنَّ لكِ بأولِ قطرةٍ تقطُرُ مِنْ دمِها يُغفرْ لكِ ما سلف من ذنوبِكِ . قالت : يا رسولَ اللهِ هذا لنا أهلَ البيتِ خاصَّةً أو لنا وللمسلمِين عامَّةً ؟ قال : بل لنا وللمسلمين عامَّةً . مرَّتينِ
হে ফাতেমা! তুমি তোমার কুরবানীর জন্তুর নিকট যাও। কেননা, কুরবানীর জন্তু জবেহ করার পর রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তোমার যাবতীয় গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। ফাতেমা রাযি. জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! এটা কি শুধু আমরা যারা আহলে বাইত তাদের জন্য না আমদের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য? রাসূলুল্লাহ ﷺ জবাব দিলেন, বরং এটা আমাদের জন্য এবং এটা সকল মুসলমানের জন্য। কথাটি তিনি দুই বার বললেন। (মুসতাদরাকি হাকিম ৭৫২৪)
৭. প্রতিটি রক্তের ফোঁটার জন্য একটি নেকি
যায়েদ ইবনে আরকাম রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
কুরবানীর পশুর প্রতিটি রক্তের ফোঁটার জন্য একটি নেকি দেয়া হয়। (বাইহাকি ১৭৪৯৫)
৮. পুলসিরাতের বাহন হবে
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
عَظِّمُوا ضَحَايَاكُمْ فَإِنَّهَا عَلَى الصِّرَاطِ مَطَايَاكُمْ
তোমরা মোটা তাজা পশু কুরবানী কর। কেননা, এটি পুলসিরাতে তোমাদের বাহন হবে। (কানযুল উম্মাল ১২১৭৭)
৯. জাহান্নামের ঢাল
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ ضَحَّى طَيِّبَةً بِهَا نَفْسُهُ، مُحْتَسِبًا لِأُضْحِيَّتِهِ؛ كَانَتْ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি হাসি-খুশি মনে সাওয়াবের আশায় কুরবানী করবে, তার জন্য ওই কুরবানী জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য দেয়াল হয়ে যাবে। (তাবরানি ২৭৩৬)
১০. কুরবানীর পশুর রক্ত গোবর ও পশম ইত্যাদি নেকীর পাল্লায় ওজন করা হবে
আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
তোমরা কুরবানী কর এবং এক্ষেত্রে হৃদয়কে প্রশস্ত রাখ। কেননা, কোন মুসলিম কুরবানীর পশুকে কিবলামুখী করে জবাই করলে কিয়ামতের দিনে তার রক্ত গোবর ও পশম ইত্যাদিসহ কিয়ামতের মাঠে হাজির করা হবে এবং নেকীর পাল্লায় ওজন করা হবে। (মুসান্নাফ আব্দুররাজ্জাক ৮১৬৭)
আল্লাহ তাআলা তাওফিকদাতা।