জিজ্ঞাসা–১৮৭৫: আমি একজন আলেম মানুষ। কিন্তু আমি ওয়াসওসায় আক্রান্ত ব্যক্তি। বহুদিন যাবত আমার তালাকের মাসআলা নিয়ে ওয়াসওসা হচ্ছে। সাথে সাথে আমার বউয়ের সাথে ও আমার তেমন ভালো সম্পর্ক নেই। গত দুদিন আগে আমি তাকে ম্যাসেজ করছিলাম। হঠাৎ আমি লেখছিলাম, গজব গজব গজব পড়বো। এই বাক্যটা লেখার সময় তালাকের বিষয় মনে আসে। তখন আমি মনে মনে ভাবতে থাকি যে, এই শব্দ দারা তো তালাক পড়বে না, আর এই শব্দটা তো তালাকের অর্থ বহন করে কিনা? নিয়ত করলে তালাক পড়বে, আর গায়রে মহতামাল শব্দ দ্বারা পড়বে কিনা? তারপর মনেমনে বলি, আমি চাইলে পড়বে। তারপর গজব গজব গজব গজব শব্দ লেখার সময় মনে মনে বলি, সরিহ শব্দ যেমন তিনবার লেখলে তিন পড়ে; কিনায়ার ক্ষেত্রে ও নিয়ত করলে পড়বে। এইগুলো ভাবতে ভাবতে তারে ম্যাসেজে শুধু এতো টুকু লেখছি, গজব গজব গজব পড়বো। ‘পড়বো’ লেখার সময় যাতে তালাক না পড়ে, তাই ‘পড়ুক’ না লেখে ‘পড়বো’ লেখছি, এর পরপরে আমার সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যায় যে, তালাক পড়লে গেলো কিনা? তখন মনে মনে বলি পড়লে পড়ুক। কিনায়া শব্দের ক্ষেত্রে নিয়ত বলতে কি বুঝায়, কিনায়া বলা বা লেখার সময় মনে তালাকের চিন্তাটাই কি নিয়ত? আমার এই ঘটনা দ্বারা কি তালাক পড়বে?—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
এক. আপনার ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক এবং কঠিন। আপনি একজন আলেম, তবুও ওয়াসওসায় আক্রান্ত হয়েছেন—এটা একদিকে দুঃখজনক, আবার অন্যদিকে এটা প্রমাণ করে আপনি ঈমানদার, কারণ শয়তান সেই মনকেই বেশি আক্রমণ করে, যেটি পরিশুদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে।
দুই. আপনি যেটা লিখেছেন—“গজব গজব গজব পড়বো”—এই বাক্যটি নিজে থেকে তালাক বোঝায় না। এটা অভিশাপ বা রাগের বহিঃপ্রকাশ, যেটা অনেক সময় মানুষ রাগের বশে বলে ফেলে। আপনি তালাক শব্দ লেখেননি, এমনকি স্পষ্ট বা অস্পষ্টভাবে তালাকের কোনো ইঙ্গিতও দেননি। আপনি শুধু ভয় পেয়েছেন যে, এই কথার দ্বারা তালাক পড়ে গেল কি না। এই ভয়, এই সন্দেহ, এই চিন্তাগুলোই হচ্ছে ওয়াসওসা।
তালাক তখনই হয়, যখন কেউ স্পষ্টভাবে তালাক শব্দ বলে বা লেখে, অথবা এমন কোনো শব্দ বলে বা লেখে যার দ্বারা তালাক বোঝায় এবং সেই সঙ্গে মনে থাকে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা। আর আপনি তো এমন কিছু বলেননি। আপনি শুধু ভাবতে থাকলেন—তালাকের মাসআলা, কিনায়া, নিয়ত করলে পড়বে কি না ইত্যাদি। এগুলো সব শয়তানের ধোঁকা, আপনার নিজের কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।
এমনকি যখন আপনি বললেন, “পড়লে পড়ুক”—এই কথাও কোনো তালাক নয়। এটা হতাশার একটা বহিঃপ্রকাশ, আপনি তখন মানসিকভাবে ক্লান্ত ছিলেন। মনে রাখবেন, কেউ যদি না চায়, তাহলে শুধু মনে সন্দেহ আসলে তালাক হয়ে যায় না।
তিন. আপনি মূলত দীর্ঘ সময় ধরে ওয়াসওসায় ভুগছেন। এই ওয়াসওসা যদি তালাক নিয়ে হয়, তাহলে সেটি সবচেয়ে কঠিন রূপ নেয়। মনে হয় একটু কিছু বললেই তালাক পড়ে গেল। মনে হয় নিয়ত হয়ে গেল, কথা মনে আসলেই তালাক হয়ে গেল। অথচ শরীয়তে এটা একদমই নয়। যতক্ষণ না আপনি স্পষ্ট শব্দ বলেন এবং মন থেকে চাচ্ছেন তালাক দিতে, ততক্ষণ কোনো তালাক হয় না।
আলমাউসুয়া’তুল ফিকহিয়া (২৩/২৯)– এসেছে
فإذا نوى التّلفّظ بالطّلاق ثمّ لم يتلفّظ به : لم يقع بالاتّفاق
কোনো ব্যক্তি তালাকের নিয়ত করেছে, অতপর মুখে উচ্চারণ করে নি, তাহলে সকলের মতে তালাক হবে না।
তিন. আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কও দূরে সরে গেছে, এটা ওয়াসওসার কারণে আরও খারাপ হয়েছে। আপনার ভেতরে শান্তি নেই, আত্মবিশ্বাস কমে গেছে, আর আপনি যেকোনো কথাকে মনে করছেন ভয়ংকর ফল বয়ে আনবে। এই অবস্থায় দরকার—আল্লাহর উপর ভরসা, ওয়াসওসাকে একেবারে পাত্তা না দেওয়া, এবং চেষ্টা করা স্ত্রীর সঙ্গে আবার বন্ধনটা ঠিক করার।
এখন আপনি যেহেতু তালাক দেননি, কেবল ভয় পেয়েছেন, তাই দাম্পত্য সম্পর্ক পুরোপুরি অক্ষত আছে। এই ভয়কে উপহাস করুন, এটার পেছনে না দৌড়ান। এটা রোগ, এবং শয়তান এই রোগকে পুঁজি করে আপনার শান্তি ধ্বংস করতে চায়।