কোট ও টাই পরার বিধান

জিজ্ঞাসা–১০৯১: কোট-টাই পরা কি ইসলামে জায়েজ? শুনেছি এগুলো খ্রিস্টানরা তাদের কেউ মারা গেলে পরিধান করে। তবে এগুলো এখন আবার সকল ধর্মের মানুষই পরিধান করে।–নাজমুল আহসান রুহান।

জবাব:

এক. আজকাল মুসলমানদের মধ্যে কোট-স্যুট পরিধান করা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। অধিক প্রচলনের কারণে এগুলোকে কাফিরদের ঐতিহ্যবাহী ও জাতিগত নিদর্শনমূলক পোশাক বলা কঠিন। তাই মুফতি মাহমুদ হাসান গাংগুহি রহ. বলেছেন , ‘পাক-ভারত উপমহাদেশে কোট-স্যুট পরিধান করা হারাম নয়, তবে এটি নেককার ও ওলি-আউলিয়াদের পোশাক নয়। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকা উচিত।’ (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া  ১৯/২৬০)

দুই. টাইর সূচনা শূলের প্রতীক হিসাবে হয়েছে কিনা, এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের বক্তব্য ও তাহকিক-গবেষণা এতটাই দুবোধ্য ও প্রান্তিকতাপুষ্ট যে, একে যেমনিভাবে নিশ্চিতভাবে শূলের প্রতীক বলা মুশকিল,অনুরূপভাবে  ‘শূলের প্রতীক নয়’ এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট না হলেও এটি শূলের প্রতীক হিসাবে এতটাই জনশ্রুতি আছে যে,তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।  যদি সত্য হয় তাহলে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে,আমর ইবন শুয়াইব তার বাবা থেকে, আর তার বাবা তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى

যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। (চাল-চলন, বেশ-ভূষায় তাদের অনুকরণ করো না)। (তিরমিযী ২৬৯৫)

কিন্তু যেহেতু বিষয়টি অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট নয় ; উপরন্তু বিধর্মীদের সাদৃশ্যতা গ্রহনের ইচ্ছা ব্যতিরেকেই এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে পড়েছে তাই মুফতীগণ বলেন, এটা পরা একেবারে হারাম তো বলা যাবে না তবে সন্দেহযুক্ত বিধায় মাকরূহ হবে। তাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা কর্তব্য। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া১২/৪০৮)

নু’মান ইবনে বাশীর রাযি. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-

إن الحلال بينٌ وإن الحرام بينٌ، وبينهما أمور مشتبهاتٌ لا يعلمهن كثيرٌ من الناس، فمن اتقى الشبهات استبرأ لدِينه وعِرضه، ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام

হালাল বা বৈধ সুস্পষ্ট এবং হারাম বা অবৈধও স্পষ্ট আর এ দু’এর মধ্যবর্তী বিষয়গুলো হলো সন্দেহজনক। আর বেশীরভাগ লোকই সেগুলো (সম্পর্কে সঠিক পরিচয়) জানে না। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সন্দেহজনক জিনিসিগুলোকে পরিহার করলো সে তার দ্বীন ও মান-সম্মানকে পবিত্র রাখলো। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসে জড়িয়ে পড়লো সে হারামের মধ্যে পড়ে গেল। (মুসলিম ১৫৯৯)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 3 =