জিজ্ঞাসা–১৮৬১: আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি ইংলিশ এর একটা কোর্স করি। সেখানে ছেলে মেয়ে এক সাথে গুগল মিট এ ক্লাস হয়। ইংলিশ অনুশীলনের জন্য একে অন্যের কনভারসেশন করতে হয়। এখন মেয়েদের ভয়েসের পর্দা আছে। (ইংলিশ শিখার জন্য) যদি আমি কথা বলি সেখানে ছেলেরা যদি শুনে তাহলে কি গুনাহ হবে? এ বিষয়ে করণীয় কী? জেনারেল লাইনের মেয়েরা ছেলে শিক্ষকের সাথে পড়া শিখার জন্য শুধু দরকারি কথা বললে কি জায়েজ হবে?–ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. প্রিয় বোন, নারীর প্রতি শরীয়তের বিধান ও চাহিদা হল, তার কন্ঠস্বর যেন প্রয়োজন ছাড়া পরপুরুষ শুনতে না পায়। এ বিধান কেবল সাধারণ ক্ষেত্রেই নয়; বরং ইবাদত বন্দেগী ও আমলের ক্ষেত্রেও তা পূর্ণমাত্রায় লক্ষ রাখা হয়েছে। যেমন,
১. মুআযযিনের এত অধিক মর্যাদা থাকা সত্বেও নারী কন্ঠস্বর যেন বিনা প্রয়োজনে পরপুরুষ শুনতে না পায় এজন্য তাদের উপর আযানের বিধান দেয়া হয় নি।
২. উচ্চ আওয়াজবিশিষ্ট ফরয নামাযের কেরাত তাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়ার বিধান রয়েছে।
৩. নামাযে ইমামের কোনো ভুল ত্রুটি হলে তা অবগত করানোর জন্য পুরুষ মুক্তাদিদেরকে সুবহানাল্লাহ বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই বিষয়ে নারীদেরকে তাসফীক অর্থাৎ এক হাতের পিঠ অন্য হাতের তালুতে মেরে শব্দ করতে বলা হয়েছে। যেন পুরুষরা আওয়াজকারী সম্পর্কে বিন্দুমাত্র বুঝতে না পারে।
৪. হজ্বের তালবিয়া পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে পড়বে। কিন্তু মহিলারা পড়বে নিম্ন আওয়াজে। এধরনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পার্থক্য বিদ্যমান।
দুই. প্রিয় বোন, এধরণের conversation বা কথোপকথনের কারণে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে অবশ্যই কুকল্পনা করবে, আর এটা যে ফেতনার কারণ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং আমাদের প্রথম পরামর্শ হল, conversation বা oral practice মেয়েরা মেয়েদের সঙ্গেই করবে। কিন্তু এ ছাড়া যদি ফেতনামুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,
১. এ সময়ে অন্তরে আল্লাহ তাআলার ভয় যথাসাধ্য ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
২. ছেলেদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা-সহ ইত্যকার শরিয়তের যাবতীয় বিধান মেনে চলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন।
৩.পরপুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হল, কণ্ঠস্বর কঠোর রাখা, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে না বলা। সুতরাং ইসলামের এই মূলনীতি যেন অক্ষত থাকে; এব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الََّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلا مَعْرُوفًا
তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সুরা আহযাব৩২)
উক্ত আয়াতের তাফসিরে আছে, আয়েশা রাযি. এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীগণ আসলে, তিনি কণ্ঠ বিকৃত করে কথা বলতেন যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয়। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী