জিজ্ঞাসা–১৭৩৫: আমার প্রশ্ন হলো, কোনো কবিরা গুনাহের আসক্তি থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসেবে বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তিকে সেই পাপের ব্যাপারে বলা যাবে যে “আমি ঐ গুনাহে আসক্ত”? বলে দিলে কি সেটার হিসাব আল্লহ নিবেন? আমি শুনেছি, পাপ আল্লাহ যেহেতু গোপন রাখেন তাই আমাদেরও গোপন রাখতে হবে। আমরা যদি বলে দেই তাহলে আল্লাহ সেটার হিসাব নিবেন। কিন্তু যদি বলে দিয়ে জবাবদিহিতার মাধ্যমে সেই গুনাহ থেকে দূরে থাকার একটা সম্ভাবনা থেকে থাকে তাহলে কি বলা জায়েজ যদিওবা এতে মান সম্মান নষ্ট হয়ে যায়?–নাম প্রকাশ করা হয় নি।
এক. বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার অন্যতম পরম অনুগ্রহ এই যে, তিনি বান্দার গুনাহগুলো গোপন রাখেন। সুতরাং বান্দার উচিত নয়, কারো কাছে গুনাহগুলো প্রকাশ করা। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلاً، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ، فَيَقُولَ يَا فُلاَنُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ
আর নিশ্চয় এ বড়ই ধৃষ্টতা যে, কোন ব্যাক্তি রাতে গুনাহ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে ভোর হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এমন এমন কর্ম করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত অতিবাহিত করল যে, আল্লাহ তার কর্ম গোপন রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর পর্দা খুলে ফেলল। (বুখারী ৬০৬৯)
অপর হাদীসে নবীজী ﷺ বলেন,
اِجْتَنِبُوْا هَذِهِ الْقَاذُوْرَاتِ الَّتِيْ نَهَى اللهُ عَنْهَا، فَمَنْ أَلَمَّ بِهَا فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللهِ، وَلْيَتُبْ إِلَى اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِ لَنَا صَفْحَتَهُ نُقِمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللهِ تَعَالَى
তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো, যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ তাআলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের (তথা বিচারকের) নিকট প্রকাশ করে দিবে তার ওপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ তাআলার বিধান প্রয়োগ করবোই। ( হাকিম ৪/২৭২)
দুই. প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, সুতরাং আপনার জন্য প্রধান অপরিহার্য কর্তব্য হল, আল্লাহর কাছে তাওবা করুন। আলেমগণ বলেছেন, তাওবার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাহতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তাওবা শুদ্ধ হবে না। পক্ষান্তরে গুনাহের কাজটি যদি বান্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে তবে সে ক্ষেত্রে উপরোল্লিখিত তিনটি শর্তের সঙ্গে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে। আর তাহল, হক্বদারের হক্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
হাফেজ ইবনু তাইমিয়া রহ. লিখেছেন, এক ব্যক্তি তাঁর শায়েখকে বলল, আমার গুনাহ হয়ে যায় কী করব? শায়েখ বললেন, তাওবা করবে। লোকটি বলল, তাওবা করার পর যদি আবার গুনাহ হয়? শায়েখ বললেন, তাওবা করবে। লোকটি বলল, যদি আবারও গুনাহ হয়? শায়েখ বললেন, এবারও তাওবা করবে। লোকটি বলল, কত বার তাওবা করব? শায়েখ উত্তর দিলেন,
إلى أن تُحْزِنَ الشيطان
‘শয়তানকে পেরেশান করা পর্যন্ত তাওবা করতেই থাকবে।’
নবীজী ﷺ বলেছেন,
كلُّ ابنِ آدمَ خطَّاءٌ ، وخيرُ الخطَّائينَ التَّوَّابونَ
সকল আদম সন্তান ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে সেরা তারাই, যারা তওবাকারী। (তিরমিযী ২৪৯৯)
তিন. তাওবা করেছেন এটা বুঝানোর জন্য অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। গুনাহটিতে পুনরায় জড়িয়ে পড়া থেকে পরিপূর্ণ সতর্ক থাকুন। নেক কাজের প্রতি মনোযোগী হোন।
সাহাবায়ে কেরাম রাযি. বলতেন,
مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ
যে ব্যক্তি বেশি ইস্তেগফার করে সে গুনাহের উপর অটল থাকতে পারে না।
নিশ্চয় আল্লাহ তাওফীকদাতা।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী